জ্ঞানের প্রবেশদ্বার হজরত আলী (রা.)
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (রা.) হলেন কাবাঘরে জন্মগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি। কুরায়েশ গোত্রে যে ১৭ জন শিক্ষিত মানুষ ছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ছিলেন অসীম সাহসী যোদ্ধা। দুনিয়াতেই পেয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ। তার উপনাম আবু তুরাব ও আবুল হাসান।
হুজুর (সা.) তাকে আসাদুল্লাহ-আল্লাহর সিংহ উপাধি দান করেন। এ ছাড়া মুরতাজা বা নির্বাচিত, কাররার বা বারবার আক্রমণকারী, শেরে খোদা তার প্রসিদ্ধ উপাধি। তিনি মাত্র দশ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি বাল্যজীবন থেকেই রাসূলে করিম (সা.) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও সযত্নে একজন সত্যিকার আদর্শবান ব্যক্তি হিসাবে গড়ে উঠে ছিলেন। তার অসংখ্য বিশেষত্বের মধ্যে একটি বিশেষত্ব হলো; তিনি হুজুর (সা.)-এর চাচাতো ভাই হওয়ার পাশাপাশি ‘আকদে মাওয়াখাত’ অর্থাৎ সেই চুক্তি যা নবী (সা.) আনসার ও মুহাজিরদের পরস্পর ভাই বানিয়েছিলেন-এর ভিত্তিতেও হুজুর (সা.) ভাই। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনা শরিফে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করছিলেন তখন হজরত আলী (রা.) কাঁদতে কাঁদতে দরবারে রিসালতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি সব সাহাবায়ে কিরামের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করেছেন কিন্তু আমাকে কারও ভাই বানাননি, হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন : (হে আলী)! তুমি দুনিয়াতেও আমার ভাই এবং আখিরাতেও আমার ভাই। তার মর্যাদা প্রসঙ্গে নুরনবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নুহ (আ.)-এর লক্ষ্যের দৃঢ়তা, আদম (আ.)-এর জ্ঞানের গভীরতা, ইবরাহিম (আ.) সহিষ্ণুতা, মূসা (আ.) বুদ্ধিমত্তা ও ঈসা (আ.)-এর আত্মসংযম দেখতে চায় সে যেন আলীর (রা.) প্রতি লক্ষ করে। আমি হচ্ছি জ্ঞানের শহর। আর আলী (রা.) হচ্ছেন সে শহরের প্রবেশ দ্বার’।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.)কে বলতে শুনেছি সব জ্ঞানকে দশ ভাগে ভাগ করে নয় ভাগ জ্ঞান একাই হজরত আলীকে দেওয়া হয়েছে এবং এক ভাগ জ্ঞান থেকে সবার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে এবং এই এক ভাগ জ্ঞান থেকেও আলী ভাগ পেয়েছেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭,/৩৫৯)। অন্যত্র নবী (সা.) ইরশাদ করেন : ‘আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিচারক হলো আলী বিন আবু তালিব।’ আলী (রা.) স্বয়ং বলেন : একবার হুজুর পুরনুর (সা.) আমাকে ইয়ামেনে বিচারক বানিয়ে প্রেরণ করলেন, তখন আমি আরজ করলাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! আপনি আমাকে ইয়ামেন প্রেরণ করছেন, ইয়ামেনবাসী আমার কাছে মামলার ফয়সালার জন্য আসবে, অথচ আমার এ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। হুজুরে আকরাম (সা.) আমার বুকে হাত মারলেন এবং আমার জন্য দোয়া করলেন : হে আল্লাহ! এর অন্তরকে আলোকিত করে দাও এবং তার মুখে প্রভাব দান করো। (হজরত আলী বলেন)। শপথ! সেই সত্তা, যিনি ছোট বীজ থেকে বড় গাছ সৃষ্টি করেন, সেই দোয়ার পর থেকে আমি উভয়পক্ষের মধ্যে ফয়সালা করতে কখনো সংশয় ও সন্দেহে পতিত হইনি।
কুখ্যাত খারেজি গুপ্তঘাতক আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম পবিত্র রমজান মাসে কুফার মসজিদে নামাজরত অবস্থায় তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে কয়েকদিন পর তিনি মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চিরতরে জান্নাতবাসী হন। এভাবে নবীজি (সা.) ওফাতের ৩০ বছর পর চল্লিশ হিজরিতে ৬৩ বছর বয়সে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) শহিদ হন। পরিসমাপ্তি ঘটে খোলাফায়ে রাশিদিনের শাসনের গৌরবময় অধ্যায়ের। বর্তমান ইরাকের কুফা নগরীর অদূরে নাজাফ আশরাফ নামক স্থানে তার পবিত্র দেহ সমাহিত করা হয়।
লেখক : আরবি প্রভাষক, তাজুশ শরী‘আহ দরসে নিযামী মাদ্রাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
