ঐতিহ্যে ইসলাম
উপমহাদেশে প্রথম আজান হয় যে মসজিদে
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের মেথলা নামের একটি ছোট্ট গ্রাম। চারপাশে নারিকেল গাছ, সমুদ্রের লোনা হাওয়া আর সবুজে মোড়া প্রকৃতি। সেই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন সাক্ষী চেরামন জুমা মসজিদ। বলা হয়, উপমহাদেশের প্রথম আজান উঠেছিল এখান থেকেই। ইতিহাসের পাতায় এর বয়স প্রায় চৌদ্দ শতাব্দী।
স্বপ্নে দেখা চাঁদের দ্বিখণ্ডন
কথিত আছে, সপ্তম শতকের প্রথম দিকের কথা। কেরালার রাজা চেরামন পেরুমল এক রাতে স্বপ্ন দেখলেন, আকাশের চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। বিস্মিত রাজা জ্যোতিষী ও পণ্ডিতদের ডেকে স্বপ্নের অর্থ জানতে চাইলেন। কেউই কিছু বলতে পারল না। মনের ভেতর অজানা এক অস্বস্তি গেঁথে রইল।
আরব বণিকদের আগমন
তখন ভারতের সঙ্গে আরবের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। একদল আরব মুসলিম বণিক মালাবারের সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছালে রাজা তাদের আমন্ত্রণ জানালেন। রাজা স্বপ্নের কথা জানালেন তাদের। বণিকরা ব্যাখ্যা করলেন, তার দেখা সেই দৃশ্য শুধু স্বপ্ন নয়, এটি বাস্তবে ঘটেছে। তারা বললেন, আরবের মরু প্রান্তরে সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর ক্ষমতাবলে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন। গল্প শুনে রাজা পেরুমল গভীরভাবে প্রভাবিত হলেন। সত্যের সন্ধানে তিনি তার রাজ্য কয়েকজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়ে পাড়ি দিলেন সুদূর মক্কায়। সেখানে গিয়ে হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে নাম রাখেন ‘তাজউদ্দিন’। কিছুদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ফেরার পথে ওমানের ডুফরে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি মালাবারের শাসকদের উদ্দেশে চিঠি লিখে যান, ‘আমার দেশে মসজিদ নির্মাণ করো, ইসলাম প্রচার করো।’
মসজিদের জন্ম
হজরত মালিক বিন দিনার (রা.) ও তার সঙ্গীরা সেই চিঠি নিয়ে কেরলে এলেন। স্থানীয় প্রশাসকদের সহায়তায় ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হলো উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ, চেরামন জুমা মসজিদ। ছোট্ট কিন্তু সুন্দর মসজিদটি হয়ে উঠল ইসলামের আলো ছড়ানোর কেন্দ্র।
প্রাচীন নিদর্শন
এ মসজিদে আজও একটি তেল প্রদীপ জ্বলছে, যেটি নাকি এক হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত। আশ্চর্যের বিষয়, শুধু মুসলমান নয়, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের মানুষও এই প্রদীপের জন্য তেল সরবরাহ করে। কেরলের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত এটি। এমনকি অমুসলিমরাও তাদের সন্তানের শিক্ষা শুরু করেন এ মসজিদে গিয়ে। সময় বয়ে গেছে, মসজিদটি একাধিকবার সংস্কার হয়েছে। বর্তমানে ভারত সরকার ও জাতিসংঘের সহায়তায় ‘মুজিরিস হেরিটেজ প্রজেক্ট’-এর অধীনে মসজিদ ও আশপাশের প্রাচীন স্থাপনা সংরক্ষণের কাজ চলছে। পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে ইতিহাসের অমূল্য এক ধনভান্ডার। চেরামন জুমা মসজিদ আজ শুধু একটি উপাসনালয়ই নয়, এটি ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল।
