Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

মানসিক চাপ শরীরে কী প্রভাব ফেলে, কমানোর ঘরোয়া উপায়

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

মানসিক চাপ শরীরে কী প্রভাব ফেলে, কমানোর ঘরোয়া উপায়

ফাইল ছবি

মানুষের সবচেয়ে মৌলিক অনুভূতিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে— উদ্বেগ। কারণ কোনো বিপদ ঘটবে না তো? খারাপ কিছু হবে না তো?–– যে কোনো বিষয় নিয়ে এ রকম নানা অনিশ্চয়তার শঙ্কা, ভয় কিংবা উদ্বেগ কার না হয়!  আমাদের কমবেশি সবার হয়ে থাকে। হুমকি কিংবা চ্যালেঞ্জিং কোনো পরিস্থিতিতে উদ্বেগ একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সম্ভাব্য বিপদের জন্য প্রস্তুত করতে মাঝে মাঝে উদ্বিগ্ন হওয়া জীবনের স্বাভাবিক অংশ। তবে উদ্বেগ অতিরিক্ত, দীর্ঘস্থায়ী, অনিয়ন্ত্রিত কিংবা বাস্তব পরিস্থিতির তুলনায় অতিরঞ্জিত হয়ে গেলে তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

যারা অতিরিক্ত মাত্রায় উদ্বেগের শিকার হচ্ছেন, তারা শুধু সাহায্য করার জন্য হলেও বিষয়টি সম্পর্কে জানা দরকার আছে। উদ্বেগ কত রকমভাবে প্রকাশ পায় তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সবার আগে জানতে হবে উদ্বেগ কী? 

কারণ মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগ হলো— ভয়, শঙ্কা ও অস্থিরতার একটি অনুভূতি। শুধু তাই নয়; বিপদের পূর্বাভাস থেকেও যে অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা কিংবা আশঙ্কা—উন্নয়নে সেভাবেও এটিকে সংজ্ঞায়িত করা যায়।

এর আগে ২০২২ সালে ইতিহাসের অন্যতম শুষ্ক গ্রীষ্মের পর চালু হওয়া একটি লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্টের সামনে ফ্রান্সের গ্রামীণ মেয়ররা 'পাঁচ দেশের মধ্যে চার দেশই' মিঠাপানির অভাব মেটাচ্ছেন সাগর থেকে। 

আমাদের নিজস্ব চিন্তা বা আশপাশের ঘটনা থেকেও উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা নিয়ে ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা ফুওং লে মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা নিয়ে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, উদ্বেগ এতটাই তীব্র হতে পারে যে, অনেকে একে শারীরিক ব্যথার মতো অনুভব করেন। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর গভীর প্রভাব পড়ে। এর থেকে স্বস্তি পাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি বোঝা যায় তাদের মধ্যে। তবে উদ্বেগের মাত্রা মৃদু হলে এটিচর বিষয়ে সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ উপকারী হতে পারে। তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে এটি বিপদের প্রতি সচেতনতা বাড়ায় এবং প্রস্তুতি ও মনোযোগে সহায়তা করে। তবে ভবিষ্যতের ঘটনা নিয়ে যদি অতিরিক্ত বা অযৌক্তিক পরিমাণে ভয় কাজ করে তবে তা স্বাভাবিক কাজের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে, আর এটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধির ইঙ্গিত হতে পারে।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

মানসিক চাপ আর উদ্বেগের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। কারণ সময়সীমা কিংবা পারিবারিক সমস্যার মতো দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জ থেকে মানসিক চাপ অনুভূত হয়। সাধারণত সমস্যার সমাধান হলে চাপ কমে যায়। অন্যদিকে উদ্বেগের কোনো স্পষ্ট কারণ নাও থাকতে পারে। অনেক সময় এটি আমাদের নিজস্ব চিন্তা থেকে জন্ম নেয়। যার ফলে তা চাপের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হয়।

উদ্বেগ আমাদের শরীরে কী ধরনের প্রভাব ফেলে?

আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের মতো হৃদযন্ত্র-সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া এটি আইবিএস (পাকস্থলী ও হজমক্রিয়াকে যা প্রভাবিত করে), আলসার, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আর দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে সংক্রমণ বা অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এ কারণে ঘুমের সমস্যাও হতে পারে, যা উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়।

বিষণ্ণতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ায় উদ্বেগ। মোটাদাগে, উদ্বেগ জীবনমান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

১. সাধারণ ব্যবস্থাপনা কৌশল

উদ্বেগজনিত লক্ষণগুলো শনাক্ত ও মোকাবিলার করার জন্য আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করতে পারি। যেমন—

মাইন্ডফুলনেস: মাইন্ডফুলনেস। এর অর্থ হচ্ছে— বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দেওয়া। কে কী ভাবল সেই চিন্তা না করার চর্চা উদ্বেগ কমাতে এবং আমাদের চিন্তার ভেতর থেকে বের করে বাস্তব মুহূর্তে ফিরিয়ে আনতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

রিল্যাক্সেশন টেকনিক: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেয়া ও  ধাপে ধাপে শরীরের পেশি শিথিল করা এবং চোখ বন্ধ করে দৃশ্য কল্পনা করার মতো রিল্যাক্সেশন বা শিথিলকরণ পদ্ধতিগুলো শরীরে চাপের প্রবণতা হ্রাসের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত করে।

সঠিকভাবে শ্বাস নেওয়া: পেশি শিথিলের মাধ্যমে শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন করলে উদ্বেগের কারণে সৃষ্ট দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত প্রবণতা বা হাইপারভেন্টিলেশন কমে আসে।

ছোট ছোট ধাপে ভয় বা উদ্বেগের কারণগুলোর মুখোমুখি হলে (যাকে বলা হয় "এক্সপোজার") তা উদ্বেগ কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস গড়তে সাহায্য করে।

'চিন্তার সময়': চিন্তার জন্য সুনির্দিষ্ট সময়ের পরিকল্পনা অনেককে সারাদিন উদ্বেগে ভোগার হাত থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া কখন উদ্বেগ অনুভব হচ্ছে। কী কারণে হচ্ছে তা লিখে রাখলে নিজের দুর্বলতা বোঝা সহজ হয়।

চল কথা বলি: বিশ্বাসযোগ্য ও আস্থা করার মতো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সঙ্গে মন খুলে কথা বললে কিংবা কোনো হেল্পলাইনে যোগাযোগ করলে মানসিক ভার হালকা হতে পারে।

সিবিটি উদ্বেগ মোকাবিলার উপায় দেখিয়ে অকার্যকর চিন্তাভাবনাগুলো চিহ্নিত ও চ্যালেঞ্জ করার দিকে নজর দেয়। এর মধ্যে রয়েছে নেতিবাচক চিন্তার পক্ষে ও বিপক্ষে প্রমাণ খতিয়ে দেখা, যাতে করে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।

উদ্বেগ মোকাবিলার থেরাপিতে নানা পদ্ধতি থাকতে পারে

 ব্যবহারিক সক্রিয়করণ: এটি সিবিটি'র একটি কৌশল যা মেজাজ ভালো করতে ও উদ্বেগ কমাতে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ কাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

উদ্বেগজনিত ব্যাধির ক্ষেত্রে সিবিটি'র একটি মূল উপাদান এক্সপোজার থেরাপি।

ধাপে ধাপে ভীতিকর পরিস্থিতি, চিন্তা, বোধ ও শারীরিক অনুভূতির মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমে এটি এড়িয়ে চলার প্রবণতা কমায় এবং সহনশীলতা তৈরি করে।

বিশ্রাম কৌশল সিবিটিতে বিশ্রাম ও চাপ কমানোর বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। এটি স্নায়বিক ব্যবস্থা শান্ত করতে এবং সাধারণ উদ্বেগ মোকাবিলায় সাহায্য করে।

চিন্তার বিষয়গুলো লিখে রাখলে তা নেতিবাচক অনুভূতির ধরন ট্র্যাক করতে এবং প্যাটার্ন শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

চিন্তাভাবনা পুনর্গঠন: চিন্তাভাবনা পুনর্গঠন বা "রিফ্রেমিং"এ নেতিবাচক চিন্তাধারা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে সেগুলোকে আরও সহায়ক ও বাস্তবসম্মতভাবে পুনর্বিবেচনা করা হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম