|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জন্মসূত্রে আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, তবে অনেকেই স্বপ্ন দেখেন বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস বা নাগরিকত্ব পাওয়ার। উচ্চশিক্ষা, চাকরি কিংবা বিনিয়োগের মাধ্যমে তা সম্ভব হলেও পথটি অনেকের জন্য জটিল। কিন্তু জানেন কি—পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে বিয়ের মাধ্যমেও নাগরিকত্ব পাওয়া যায়? কারও জন্য প্রক্রিয়াটি সহজ, আবার কোথাও কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কয়েকটি দেশ সম্পর্কে—যেখানে নাগরিককে বিয়ে করলেই মিলতে পারে নতুন নাগরিকত্ব।
ব্রাজিল
বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রাজিল অন্যতম উদার দেশ। কোনো ব্রাজিলীয় নাগরিককে বিয়ে করে সেখানে টানা এক বছর বসবাস করলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হলো, ব্রাজিল দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে—অর্থাৎ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয় না।
স্পেন
দক্ষিণ ইউরোপের এই দেশটিতে মাত্র এক বছরের মধ্যেই নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। শর্ত হলো—স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ে করে এক বছর একসঙ্গে বসবাস করতে হবে। পাশাপাশি স্প্যানিশ ভাষায় প্রাথমিক দক্ষতা, সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা এবং বৈধ বিয়ের প্রমাণ লাগবে। একবার নাগরিকত্ব পেলে লাতিন আমেরিকা, ফিলিপাইন ও পর্তুগালসহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা পাওয়া যায়।
ফ্রান্স
ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পেতে হলে ফরাসি নাগরিককে বিয়ে করে অন্তত চার বছর একসঙ্গে থাকতে হবে। যদি ফ্রান্সের বাইরে বিয়ে করা হয়, তাহলে সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। একবার নাগরিকত্ব পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বসবাস ও কাজের অধিকারও মিলবে।
সার্বিয়া
সার্বিয়ার নাগরিক হতে হলে দেশটির বৈধ নাগরিককে বিয়ে করে অন্তত তিন বছর একসঙ্গে থাকতে হবে এবং দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। নিয়মগুলো খুব কঠোরভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় তুলনামূলক সহজেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। জীবনযাপনের খরচও ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।
পর্তুগাল
পর্তুগিজ নাগরিকের সঙ্গে তিন বছর বৈধ বিবাহিত সম্পর্কে থাকলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়—দেশে বসবাসের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে পর্তুগিজ ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।
পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের নাগরিককে বিয়ে করলে তিন বছর পর নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়, তবে শর্ত হলো টানা দুই বছর পোল্যান্ডে বসবাস করতে হবে। আবেদনকারীর পোলিশ ভাষা জানা বাধ্যতামূলক। যদিও দেশটি সুন্দর ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য পরিচিত, এখানে আয়করের হার (১৮–৩২ শতাংশ) তুলনামূলক বেশি।
তুরস্ক
তুরস্কে নাগরিকত্ব পেতে হলে দেশটির নাগরিককে বিয়ে করে টানা তিন বছর বৈধভাবে একসঙ্গে থাকতে হয়। ভাষা বা সংস্কৃতি জানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তুরস্কের পাসপোর্ট দিয়ে পৃথিবীর ১১০টিরও বেশি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ মেলে।
কেপ ভার্ড
পশ্চিম আফ্রিকার মনোরম দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্ডে বিয়ের পরপরই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। শর্ত একটাই—বিয়ে হতে হবে বৈধভাবে। প্রক্রিয়াটি দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত।
সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের অভিবাসন নীতি কঠোর হলেও বৈধ বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্বের সুযোগ রয়েছে। কোনো সুইস নাগরিককে বিয়ে করে তিন বছর একসঙ্গে থাকা এবং দেশটিতে পাঁচ বছর বসবাস করলে নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। দেশের বাইরে থাকলেও ছয় বছরের বিবাহিত জীবন পূর্ণ হলে আবেদন সম্ভব। প্রক্রিয়াটি সাধারণত দ্রুত সম্পন্ন হয়।
বিয়ের আগে ভাবুন
বিয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সত্যিকারের ভালোবাসা যদি নতুন জীবনের পাশাপাশি নাগরিকত্বের সুযোগ এনে দেয়, সেটি নিশ্চয়ই সুখের বিষয়। তবে শুধুমাত্র নাগরিকত্ব পাওয়ার উদ্দেশ্যে বিয়ে করলে সম্পর্কটি কাগজেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়—মানসিক শান্তি আসে না। তাই ভালোবাসাই হোক সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি।
