রাতে রুম হিটার ব্যবহারে যেসব সাবধানতা জরুরি
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাতে রুম হিটার ব্যবহার অনেকের জন্যই শীত মোকাবিলার এক আরামদায়ক সমাধান। কিন্তু সামান্য অসতর্কতা থেকেই ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা— অগ্নিকাণ্ড, শ্বাসকষ্ট, কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া কিংবা ত্বকের ক্ষতি। তাই নিরাপদে শীত কাটাতে রুম হিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা জানা ও মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
১. হিটার খুব কাছে রেখে ব্যবহার করবেন না
ঘুমের সময় অনেকে হিটারকে একেবারে কাছাকাছি রাখেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। অতিরিক্ত তাপ ত্বক শুষ্ক করে ফেলতে পারে বা পোড়ার দাগ তৈরি করতে পারে। আবার বালিশ, কম্বল বা কাপড় অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। তাই কমপক্ষে ৩–৫ ফুট দূরে হিটার রেখে ব্যবহার করা নিরাপদ।
২. আলাদা ও শক্তিশালী সকেটে সংযুক্ত করুন
রুম হিটার উচ্চ ওয়াটেজ খরচ করে। তাই দুর্বল সকেট, মাল্টি-প্লাগ বা এক্সটেনশনে লাগালে অতিরিক্ত লোড সৃষ্টি হয়ে শর্ট সার্কিট হতে পারে। ঘুমানোর আগে নিশ্চিত করুন—
> সকেট শক্তভাবে লাগানো হয়েছে কিনা
> তার গরম হচ্ছে না কিনা
> হিটার সরাসরি শক্তিশালী দেয়াল সকেটে সংযুক্ত কিনা
৩. হিটারের সামনে কাপড় বা পর্দা রাখবেন না
নরম কাপড়, পর্দা, বেডশিট বা কম্বল হিটারের সামনে থাকলে সহজেই গরম হয়ে আগুন লাগতে পারে। বিশেষ করে কয়েল ও ফ্যান হিটারে এ ঝুঁকি বেশি। তাই সামনে কমপক্ষে ৩ ফুট খোলা জায়গা রাখা জরুরি।
৪. ঘুমিয়ে পড়ার আগে হিটার অবশ্যই বন্ধ করুন
অনেকে পুরো রাত হিটার চালিয়ে রাখেন—যা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দুই ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে—
> বাতাস শুষ্ক হয়ে শ্বাসকষ্ট বা গলা ব্যথা হতে পারে,
> মোটর অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন লাগতে পারে।
> অতি প্রয়োজনে চালাতে হলে অটো শাটডাউন বা টেম্পারেচার কন্ট্রোল যুক্ত হিটার ব্যবহার করুন।
৫. সম্পূর্ণ বদ্ধ ঘরে হিটার ব্যবহার করা বিপজ্জনক
গ্যাস বা কেরোসিন হিটার কার্বন মনোক্সাইড সৃষ্টি করতে পারে—যা নিঃশব্দে প্রাণঘাতী। এমনকি ইলেকট্রিক হিটারেও ঘর পুরোপুরি সিল করা ঠিক নয়। সামান্য বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
৬. নিয়মিত পরিষ্কার ও সার্ভিসিং করুন
হিটারের ভেতরে ধুলো জমলে কয়েল ও মোটর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না—অতিরিক্ত গরম হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ে। তাই—
> ধুলো পরিষ্কার করুন,
> তার কাটাছেড়া আছে কি না দেখুন,
> সুইচ ও কন্ট্রোল ঠিকভাবে কাজ করছে কি না নিশ্চিত করুন।
৭. শিশু বা পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখুন
হিটারের গরম পৃষ্ঠে শিশু বা পোষা প্রাণী স্পর্শ করলে মারাত্মক পোড়া বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই হিটার সবসময়—
> স্থিতিশীল জায়গায়,
> শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
৮. বাতাস অতিরিক্ত শুষ্ক হলে আর্দ্রতা বজায় রাখুন
হিটার দীর্ঘ সময় চললে ঘরের আর্দ্রতা কমে যায়। এতে—
> নাক বন্ধ,
> কাশি,
> গলা ব্যথার মতো সমস্যা বাড়তে পারে।
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা ভালো। না থাকলে ঘরে একটি জলভর্তি বাটি রাখুন।
৯. আগুন লাগলে করণীয়
হিটার থেকে আগুন লাগলে পানি ঢালবেন না—বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে। তাই—
> প্রথমে মেইন সুইচ বন্ধ করুন,
> মোটা কম্বল দিয়ে আগুন ঢেকে নিভানোর চেষ্টা করুন,
> নিয়ন্ত্রণে না এলে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে জানাতে হবে।
রুম হিটার শীতের কষ্ট কমাতে সাহায্য করে ঠিকই, তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ব্যবহার করতে হবে। সচেতনতার কয়েকটি পদক্ষেপই আপনার পরিবারকে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারে।
