উর্বরতা বৃদ্ধিকারী খাবার: সুস্থ খাদ্যাভ্যাসেই সমাধান
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘ফার্টিলিটি’ বা উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলো সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস। বর্তমান সময়ে বন্ধ্যত্ব বিশ্বব্যাপী একটি ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্য উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে সন্তান ধারণের বয়সি দম্পতিদের প্রায় ১২.৫ শতাংশ বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভুগছেন। এর পেছনে জিনগত কারণ, জীবনযাত্রা এবং পরিবেশগত প্রভাব— সবই ভূমিকা রাখছে।
একাধিক আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা বন্ধ্যত্বকে জনস্বাস্থ্যের জন্য তৃতীয় সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা হৃদরোগ ও ক্যানসারের পরেই অবস্থান করছে।
বন্ধ্যত্বের সাধারণ কারণ
বন্ধ্যত্বের পেছনে যেসব শারীরিক কারণ বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে রয়েছে— ডিম্বস্ফোটনের কর্মহীনতা, এন্ডোমেট্রিওসিস, পিসিওএস, ফ্যালোপিয়ান টিউবের অস্বাভাবিকতা এবং বিভিন্ন ইমিউনোলজিক্যাল ব্যাধি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭.৫ শতাংশ দম্পতি এই সমস্যায় আক্রান্ত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একটি কার্যকর পথ হতে পারে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন।
খাবার কিভাবে উর্বরতাকে প্রভাবিত করে
আমরা প্রতিদিন যা খাই, তা সরাসরি প্রজনন ও উর্বরতা স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে। ফলে নারীদের ডিম্বাণু এবং পুরুষদের শুক্রাণুর গুণমান কমে যায়।
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন, তাদের সুস্থ গর্ভধারণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে ২৩ শতাংশ বেশি।
বয়স ও বংশগত কারণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে— খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত উর্বরতা উন্নত করা সম্ভব।
ওজন ও উর্বরতার সম্পর্ক
অতিরিক্ত বা কম ওজন— দুটিই উর্বরতার জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ওজন নারীদের শরীরে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন তৈরি করে, যা ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কম ওজন ডিম্বস্ফোটন বাধাগ্রস্ত করতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে শুক্রাণুর মান নষ্ট করে।
উর্বরতা বাড়াতে যেসব খাবার জরুরি
জটিল শর্করা
গবেষণায় দেখা গেছে, সরল শর্করা গ্রহণে ডিম্বস্ফোটন সমস্যা বাড়ে। অন্যদিকে জটিল শর্করা ধীরে শক্তি সরবরাহ করে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
খাবারের তালিকা— গোটা শস্য, ওটস, বাদামি চাল, কুইনোয়া, মসুর ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি, আপেল, পেয়ারা।
স্বাস্থ্যকর চর্বি
ওমেগা-থ্রি ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট নারীদের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন এবং পুরুষদের টেস্টোস্টেরন ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
প্রাণিজ উৎস— ইলিশ, রুই, পাঙ্গাশ (সপ্তাহে ২ বার)।
উদ্ভিদভিত্তিক উৎস— অ্যাভোকাডো, জলপাই তেল, তিলের তেল।
বাদাম ও বীজ— আখরোট, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন পরিমিত আখরোট গ্রহণ শুক্রাণুর গতিশীলতা ও ডিম্বাণুর স্বাস্থ্য উন্নত করে।
প্রোটিন
ডিম, মাছ ও চর্বিহীন মাংসের মতো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার কোষ গঠন ও হরমোন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি
ফোলেট, লৌহ, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবারগুলো নারীদের ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা এবং পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন C, A, E এবং সেলেনিয়াম ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
উৎস— টক ফল, বেরি, শাকসবজি, বাদাম, বীজ, হলুদ।
টক ফল
কমলালেবু, লেবু, আঙ্গুর— এসব ভিটামিন Cসমৃদ্ধ ফল লৌহ শোষণ বাড়ায় এবং ডিম্বাণুর স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
উপকারী মসলা
আদা— প্রদাহ কমায় ও রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।
দারুচিনি— রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হলুদের কারকিউমিন— ডিম্বাণুর গুণগতমান উন্নত করে।
আর্দ্র থাকা কেন জরুরি
পর্যাপ্ত পানি পান হরমোনের ভারসাম্য ও সার্ভিকাল মিউকাস উৎপাদনে সহায়তা করে, যা শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিদিন ৬–৮ গ্লাস পানি পান করুন।
প্রয়োজনীয় টিপস
> স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
> অতিরিক্ত ক্যাফিন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
> ভাজা ও উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার কমান
> মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
> নিয়মিত ব্যায়াম করুন
> ধূমপান ত্যাগ করুন
> অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন
> প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে পরিপূরক গ্রহণ করুন।
