পূজার ফ্যাশনে ধুতি
শরতের আকাশে এখন পূজার আমেজ। ধুপ কর্পুরের সুগন্ধি আর ঢাকের তালে দেবীদুর্গার আগমনী বার্তা যেন চারপাশে। দেবী প্রস্তুতির পর্বেও তাই ব্যস্ত সবাই। কাজল ভরা চোখ, দশ হাতে দুর্গতিনাশিনী সিঁথিজুড়ে লাল রঙ্গা সিঁদুর নিয়ে আগমন করে ধরিত্রীতে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও দুর্গাপূজার গুরুত্ব অন্যরকম।
মূলত পৃথিবী থেকে পাপ বিনাশ করতেই যুগে যুগে দেবী আসেন অসুর রূপি সকল খারাপের ইতি টানতে। দুর্গাপূজা মূলত মহালয়া থেকে শুরু হলেও এর মূল পর্ব শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে। এর পরে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং সব শেষে দশমী।
পূজার অল্প পরিসরের এ সময়ে তাই সবাই চায় নিজেকে নানা সাজে পূজার রঙ্গে রাঙিয়ে নিতে। পূজার মেয়েরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি বেশি পরে থাকেন। এছাড়া অন্যান্য পোশাকের বাহারি কারুকাজ তাদের ফুটিয়ে তোলে পূজার ঢাকের তালে তালে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে পূজার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে ধুতি। পূজার আমেজকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে ধুতি। বাঙালি সনাতন ধর্মালম্বীদের তাই ধুতিতে দুর্গাপূজা উৎযাপনের রীতি বেশ প্রাচীন। ধুতি মূলত একখণ্ড কাপড়। এক সময় ধুতি ছিল দপ্তরের পোশাক। তার আগে শুধু হিন্দু পুরোহিত এবং পূজারিরা তাদের পোশাক হিসেবে ধুতি নির্বাচন করতেন।
সময়ের আবর্তনে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েও ধুতি আছে ফ্যাশনে সবার হাতের নাগালে। ধুতি মূলত সাদা রঙের হয়ে থাকে। পাঞ্জাবির সাথে সবচেয়ে বেশি মানানসই এই ধুতি। আট থেকে দশ হাতের কুচি দেওয়া একখণ্ড কাপড় কোমড়ে পেঁচিয়ে নিলেই হয়ে উঠে ফ্যাশনের অন্যতন সঙ্গী ধুতি। আকারের দিক থেকে অবশ্য এটি চতুষ্কোণ কাপড়ের অংশ।
ধুতি বলতে এক সময় কেবল সাদা রঙের কথা সবাই চিন্তা করত। তবে বর্তমানে সাদার পাশাপাশি মেরুন, হালকা বাদামি, ধুসর রঙের ব্যবহার চোখে পড়ে। পাঞ্জাবি কিংবা কুর্তির সাথে রঙ্গ মিলিয়ে খুব সহজেই তরুণদের সাজিয়ে তুলে ধুতি। কাপড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধুতির জন্য সবচেয়ে উপযোগী কাপড় হচ্ছে সুতি। তবে খদ্দর থেকে শুরু করে তসর, পলিয়েস্টার এমনকি সিল্ক কাপড়ের নানা বাহারি ডিজাইন বর্তমানে ধুতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোমর থেকে আশপাশের সব কাপড় গুছিয়ে তা কয়েক পেঁচে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার এক অপরূপ কৌশল হচ্ছে ধুতি। তবে বর্তমানে রেডিমেট ধুতির ব্যবহারও বাড়ছে। এতে সময় যেমন বেঁচে যায় তেমনি খুব সহজে পরিধান করাও সম্ভব হয়ে উঠছে।
ধুতিতে বর্তমানে নানা ধরনের কারুকাজ চোখে পড়ে। কুচির ভাঁজে ভাঁজে লেসের ব্যবহার কিংবা নানা ধরনের হাতের কাজের ব্যবহার পছন্দের তালিকাতে অনায়াসে পড়ে যায়। ধুতি পরার ধরনেও আছে নানা রকমের ভিন্নতা। বয়স এবং পছন্দের ওপর নির্ভর করেই মূলত এই বৈচিত্র্যতা আসে। নানা ধরনের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিয়েতে বরের পোশাক হিসেবেও ধুতি অনেকেই নির্বাচন করে থাকেন। তবে দুর্গাপূজায় ধুতির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। পূজার আনন্দকে বাড়াতে আর নিজেকে সাজাতে সবার পছন্দের তালিকায় তাই এর অবস্থান থাকেই। যুগে যুগে নানা ধরনের ফ্যাশনে পরিবর্তন এলেও ধুতি তার জায়গা দখল করে রেখেছে প্রথম থেকেই। তাই মা দুর্গার আগমন থেকে শুরু করে স্বামীগৃহে গমন পর্যন্ত নানা আয়োজনে তরুণদের পোশাকে ধুতিকে চোখে পড়ে সবচেয়ে বেশি আর নানা রঙের ভিড়ে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পূজার ফ্যাশনে ধুতি
শরতের আকাশে এখন পূজার আমেজ। ধুপ কর্পুরের সুগন্ধি আর ঢাকের তালে দেবীদুর্গার আগমনী বার্তা যেন চারপাশে। দেবী প্রস্তুতির পর্বেও তাই ব্যস্ত সবাই। কাজল ভরা চোখ, দশ হাতে দুর্গতিনাশিনী সিঁথিজুড়ে লাল রঙ্গা সিঁদুর নিয়ে আগমন করে ধরিত্রীতে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও দুর্গাপূজার গুরুত্ব অন্যরকম।
মূলত পৃথিবী থেকে পাপ বিনাশ করতেই যুগে যুগে দেবী আসেন অসুর রূপি সকল খারাপের ইতি টানতে। দুর্গাপূজা মূলত মহালয়া থেকে শুরু হলেও এর মূল পর্ব শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে। এর পরে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং সব শেষে দশমী।
পূজার অল্প পরিসরের এ সময়ে তাই সবাই চায় নিজেকে নানা সাজে পূজার রঙ্গে রাঙিয়ে নিতে। পূজার মেয়েরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি বেশি পরে থাকেন। এছাড়া অন্যান্য পোশাকের বাহারি কারুকাজ তাদের ফুটিয়ে তোলে পূজার ঢাকের তালে তালে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে পূজার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে ধুতি। পূজার আমেজকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে ধুতি। বাঙালি সনাতন ধর্মালম্বীদের তাই ধুতিতে দুর্গাপূজা উৎযাপনের রীতি বেশ প্রাচীন। ধুতি মূলত একখণ্ড কাপড়। এক সময় ধুতি ছিল দপ্তরের পোশাক। তার আগে শুধু হিন্দু পুরোহিত এবং পূজারিরা তাদের পোশাক হিসেবে ধুতি নির্বাচন করতেন।
সময়ের আবর্তনে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েও ধুতি আছে ফ্যাশনে সবার হাতের নাগালে। ধুতি মূলত সাদা রঙের হয়ে থাকে। পাঞ্জাবির সাথে সবচেয়ে বেশি মানানসই এই ধুতি। আট থেকে দশ হাতের কুচি দেওয়া একখণ্ড কাপড় কোমড়ে পেঁচিয়ে নিলেই হয়ে উঠে ফ্যাশনের অন্যতন সঙ্গী ধুতি। আকারের দিক থেকে অবশ্য এটি চতুষ্কোণ কাপড়ের অংশ।
ধুতি বলতে এক সময় কেবল সাদা রঙের কথা সবাই চিন্তা করত। তবে বর্তমানে সাদার পাশাপাশি মেরুন, হালকা বাদামি, ধুসর রঙের ব্যবহার চোখে পড়ে। পাঞ্জাবি কিংবা কুর্তির সাথে রঙ্গ মিলিয়ে খুব সহজেই তরুণদের সাজিয়ে তুলে ধুতি। কাপড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধুতির জন্য সবচেয়ে উপযোগী কাপড় হচ্ছে সুতি। তবে খদ্দর থেকে শুরু করে তসর, পলিয়েস্টার এমনকি সিল্ক কাপড়ের নানা বাহারি ডিজাইন বর্তমানে ধুতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোমর থেকে আশপাশের সব কাপড় গুছিয়ে তা কয়েক পেঁচে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার এক অপরূপ কৌশল হচ্ছে ধুতি। তবে বর্তমানে রেডিমেট ধুতির ব্যবহারও বাড়ছে। এতে সময় যেমন বেঁচে যায় তেমনি খুব সহজে পরিধান করাও সম্ভব হয়ে উঠছে।
ধুতিতে বর্তমানে নানা ধরনের কারুকাজ চোখে পড়ে। কুচির ভাঁজে ভাঁজে লেসের ব্যবহার কিংবা নানা ধরনের হাতের কাজের ব্যবহার পছন্দের তালিকাতে অনায়াসে পড়ে যায়। ধুতি পরার ধরনেও আছে নানা রকমের ভিন্নতা। বয়স এবং পছন্দের ওপর নির্ভর করেই মূলত এই বৈচিত্র্যতা আসে। নানা ধরনের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিয়েতে বরের পোশাক হিসেবেও ধুতি অনেকেই নির্বাচন করে থাকেন। তবে দুর্গাপূজায় ধুতির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। পূজার আনন্দকে বাড়াতে আর নিজেকে সাজাতে সবার পছন্দের তালিকায় তাই এর অবস্থান থাকেই। যুগে যুগে নানা ধরনের ফ্যাশনে পরিবর্তন এলেও ধুতি তার জায়গা দখল করে রেখেছে প্রথম থেকেই। তাই মা দুর্গার আগমন থেকে শুরু করে স্বামীগৃহে গমন পর্যন্ত নানা আয়োজনে তরুণদের পোশাকে ধুতিকে চোখে পড়ে সবচেয়ে বেশি আর নানা রঙের ভিড়ে।