Logo
Logo
×

জাতীয়

উত্তাল জুলাইয়ে গ্রেফতার-নির্যাতন নয়, হাই কমোড নিয়ে চিন্তায় ছিলেন প্রেস সচিব

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম

উত্তাল জুলাইয়ে গ্রেফতার-নির্যাতন নয়, হাই কমোড নিয়ে চিন্তায় ছিলেন প্রেস সচিব

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

গেল বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সাংবাদিক হিসেবে তখন ছাত্রদের ওপর চলা দমনপীড়নের খবর এএফপির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এজন্য তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নিশানায় ছিলেন তিনি। এমনকি তাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হতে পারে বলে সতর্ক করছিলেন তার কাছের মানুষেরা। কিন্তু উত্তাল সে সময়ে গ্রেফতার-নির্যাতন নয়, বরং হাই কমোড নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি!

রোববার (২০ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে করা এক পোস্টে এই দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন তিনি।


পোস্টে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘লন্ডনে কর্মরত বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের এক সাংবাদিক গত বছর কারফিউ এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময় আমাকে প্রথম সতর্ক করেছিলেন যে, যেকোনো মুহূর্তে আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার একজন মন্ত্রী আমাকে মিথ্যা প্রচারের এবং সন্ত্রাসীদের মুখপাত্র হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।’

‘আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আল জাজিরার তানভীর চৌধুরী এবং আরও দুজন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক একই ধরনের সতর্কতা দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, হাসিনা সরকার জানত যে দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময় এএফপি-র দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ ছিল এবং আমি দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের প্রতিবেদন, ছবি ও ভিডিও পাঠাতে দিচ্ছিলাম।’


কিন্তু সহকর্মীদের সতর্কবার্তার পরও গ্রেফতার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন না শফিকুল আলম। তার ভাষায়, ‘সেই সময় গ্রেফতার হওয়া নিয়ে আমি খুব একটা উদ্বিগ্ন ছিলাম না। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, তারা আমাকে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করবে না, কারণ আমি এএফপি-র ব্যুরো প্রধান ছিলাম। আর এএফপি একটি ফরাসি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা।’

এরপরই নিজের আসল ভয়ের কথা জানান প্রেস সচিব, ‘কিন্তু আমি মূলত এই চিন্তায় আতঙ্কিত ছিলাম যে যদি তারা আমাকে গ্রেফতার করে, তাহলে তারা আমাকে একটি সাধারণ কারাগারের সেলে পাঠাবে, যেখানে হাই কমোড নেই। আমার হাঁটু ভাঙা এবং আমি কোনোভাবেই সাধারণ স্কোয়াটিং টয়লেটে বসে মূত্র বা মলত্যাগ করতে পারি না। আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম, তার প্রথম কাজ হবে একজন সেরা আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া, যেন তিনি নিশ্চিত করেন যে আমি জেলে হাই কমোড ব্যবহার করতে পারি। আমার স্ত্রী বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল। সে জানত আমি মজা করছিলাম না। আমি এএফপি-র সহকর্মী, আমার সাবেক সহকর্মী এবং কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিককেও বলেছিলাম যাতে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বিষয়ে আমার পক্ষে কথা বলেন।’

জুলাই আন্দোলনে অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করে ছাত্র-জনতা। সাধারণ মানুষের গর্জনে লেগ গুটিয়ে পালায় স্বৈরাচার। তাতে গ্রেফতার আতঙ্ক থেকে মুক্তি পান প্রেস সচিব। তবু হাই কমোডের দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়েনি তার। শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘আল্লাহ রহিম। (তখন) আমি জেলে যাইনি। কিন্তু আজও আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো, যদি কোনোদিন জেলে যেতে হয়, আমি কি হাই কমোডের সুবিধা পাবো?’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম