Logo
Logo
×

জাতীয়

অনুজের প্রতি বেদনা বিধুর শোকগাথা

আমাদের ক্ষমা করো হাদি

আতাউর রহমান

আতাউর রহমান

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

আমাদের ক্ষমা করো হাদি

শরিফ ওসমান হাদি

১. মনটা যখন ভারাক্রান্ত থাকে তখন নজরুলের (দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম) আশ্রয় খুঁজি। প্রিয় কবির কবিতা-লেখায় সান্ত্বনা, সাহস ও শক্তি পাই। আজ হঠাৎ নজরুলকে খুঁজে পেলাম হাদির মাঝে- শরিফ ওসমান হাদির মাঝে। নজরুলের ‘যেদিন আমি হারিয়ে যাব’ কবিতাটা বোধ হয়, এই তরুণের জন্যই লেখা। কবিতার লাইন তিনটি পড়ে থমকে দাঁড়ালাম— 

‘যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,

অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে

বুঝবে সেদিন বুঝবে!'

১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর থেকেই হৃদয়টা ভেঙে চুরমার হয়ে আছে। সেদিনকার বুলেটটা যেন হাদির মাথায় নয়; আমাদের সবার বুকে, গোটা দেশের বুকে লেগেছে। হাদির চিকিৎসায় যে সর্বোচ্চ গতি এবং তার শরীরে চিকিৎসা গ্রহণ করার ক্ষমতা জেনে দেশবাসী আশাবাদী হয়ে উঠেছিল তার ফিরে আসার; কিন্তু সেটা আর হলো কই। ভাগ্যবিধাতা যে তার সফরের যতিচিহ্ন এখানেই টানবেন, সেটা কে জানত! ১৮ ডিসেম্বর রাতেই সব আশার কফিনে শেষ পেরেক। সিঙ্গাপুর থেকে খবর এলো হাদি নামের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরটির দেহ নিথর হয়ে গেছে। শাহাদতের মৃত্যুর আকাঙক্ষা পূরণ হয়েছে ৩৩ বছর বয়সি এই সমাজ সংস্কারকের (যেমনটি বলেছিলেন হাদি- আমি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখি তুমুল মিছিল হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে! আমি মিছিলের সামনে সারিতে হঠাৎ একটা বুলেট এসে আমার বুকে হয়ত বিদ্ধ করে দিয়েছে! আমি হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে যাব)। হ্যাঁ আমি তাকে শুধু রাজনীতিক বলব না; তাকে রাষ্ট্র ও সমাজ সংস্কারকের স্বপ্নসারথি বলব। জুলাই বিপ্লব ও তার পরবর্তী সময় যে হাদিকে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তাতে তাকে শুধু তরুণ রাজনীতিক হিসেবে ফ্রেমবন্দি করলে তার প্রতি অন্যায়ই করা হবে। এই বিপ্লবী ১৮ কোটি মানুষের জন্য একটি সুন্দর সমাজ, ইনসাফের দেশ, কল্যাণরাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছিলেন। স্বপ্ন দেখেই ক্ষান্ত হননি, নিজের প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব মঞ্চ থেকে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে রাজপথে সংগ্রাম জারি রেখেছিলেন।  

২. হাদি তো বিপ্লবের অপর নাম, দ্রোহের নাম, যেকোনো অন্যায়-অসত্য-জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের মতো লাখো তরুণের সমর্থনের নাম। সেই সমর্থন অলিখিত তবে নিঃশর্ত ও অসীম। হাদির চরম শত্রুও তার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। ঔপনিবেশিক রক্ষচক্ষুর সামনে অসীম সাহস নিয়ে, দৃঢ়তা নিয়ে স্লোগান দেওয়ার হিম্মত কজনের থাকে, সেটা শতভাগ ছিল এই হাদির। জুলাই বিপ্লবপরবর্তী সময়ে দীর্ঘকালের লুণ্ঠনের শিকার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখণ্ডের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছিলেন এই তরুণ। শরীরের চেয়েও বিশাল হৃদয় নিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাহারাদার হতে চেয়েছিলেন। লাল-সবুজের পতাকায় শকূনের থাবায় চটেপাঘাত হয়ে চেয়েছিলেন। শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক হবে জবাবদিহিমূলক, প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক হবে প্রভুত্ব-দাসত্বের নয় বরং ন্যায্যতার— এ কথাগুলো বারবার হৃদয় দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছিল যে নিরহঙ্কারী মানুষটির মুখে- তিনিই হচ্ছেন আমাদের শরিফ ওসমান বিন হাদি। 

হাদি তো বিপ্লবের অপর নাম, দ্রোহের নাম, যেকোনো অন্যায়-অসত্য-জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের মতো লাখো তরুণের সমর্থনের নাম। সেই সমর্থন অলিখিত তবে নিঃশর্ত ও অসীম। হাদির চরম শত্রুও তার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।   

৩. এ দেশের আবহাওয়া নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট উর্বর। একাত্তরের পর নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এরপর বিশাল বিরতি দিয়ে জুলাই বিপ্লব। যে বিপ্লব বহু তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টি করেছে; কিন্তু এ দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা ও ঘুণে ধরা রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা এবং দীর্ঘ একনায়কি চরিত্র তরুণদের সহজেই বিপথগামী করে ফেলে। একাত্তর-নব্বইয়ের ধারাবাহিকতায় জুলাই বিপ্লবের পরও নেতৃত্ব দুষিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। 

জুলাই বিপ্লবের সময়টুকু আমাদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয়েছে। হাজারও শহীদের রক্তস্নাত পথ মাড়িয়ে গণঅভ্যুত্থানের পরপরই চোখের সামনে কত কিছু ঘটে গেল। বিপ্লবের পর বহু তরুণ নেতা বিপথগামী হয়ে গেছেন। যে স্বপ্ন নিয়ে, যে প্রতীতী নিয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, যে প্রত্যয় নিয়ে তরুণ নেতৃত্বের পথচলা শুরু হয়েছিল গত দেড় বছরে সেটি কতটা সঠিক পথে আছে! চোখের সামনে কত প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাময়ী তরুণ নেতৃত্ব বিপথগামী হয়ে গেলেন। ব্যতিক্রম কয়েকজনের মধ্যে যার নাম সবার আগে আসবে— তিনি আমাদের শরিফ ওসমান হাদি। বিলাসবহুল গাড়ি, ঢাকা শহরে বিশাল অট্টালিকা নিয়ে বসবাস, কোটি টাকার বাণিজ্যের প্রলোভন, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার অবারিত সুযোগ তাকে ছুঁতে পারেনি। সততা ও আদর্শ নিয়ে সুন্দর সমাজ গঠন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নানা ঘটনায় নতুন নতুন বয়ান নিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করা, ভিন্নধর্মী স্লোগান সামনে নিয়ে আসা, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার দুর্দান্ত প্রতিভা ও সাহস ছিল এই যুবকের। বিপ্লব বেহাত হয়ে যাওয়ার বারংবার প্রচেষ্টার মধ্যেও স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন হাদি। সহযোদ্ধাদের যেকোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হিমালয়সম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ কারণে সহপাঠী, বন্ধু ও সতীর্থদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে মতপার্থক্য হয়েছে। 

রাজপথ, টেলিভিশন মিডিয়া, সেমিনার সব জায়গায় যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন হাদি। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ব্যক্তি কিংবা ভবিষ্যতে ক্ষমতাবান হবেন এমন ব্যক্তির সামনে চোখে চোখ রেখে বারবার সত্য কথাটা দৃঢ়তা নিয়ে উচ্চারণ করেছেন। এটি ছিল তার সহজাত। সব অন্যায় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুঙ্কার ছিল তার। তাকে দেখে বহু মানুষ প্রেরণা পায়। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে বাঁকবদলের এ সন্ধিক্ষণে তাকে যে খুবই দরকার ছিল এই জাতির। সেটি আর হলো কই। ওই যে রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন—

‘মৃত্যুর ঝর্ণা স্থির করে তোলে জীবনের জলকে।’

হাদি তো সব কিছু স্থির করে দিয়ে চলে গেলেন। তার এই চলে যাওয়ায় যে বেদনাগাথা তৈরি হয়েছে সেটি ভুলতে হয়তো সময় লাগবে না। কারণ আমরা তো অতীত ভুলে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন জাতি! নিকট অতীতের হিরো আবরার-সাঈদ-মুগ্ধদের কজন মনে রেখেছেন। তাদের ত্যাগকে সামনে রেখে কতজন পথ চলেছেন! হাদির জন্য আজ সারাদেশে শোকগাঁথা রচিত হয়েছে। পত্রিকার পাতাজুড়ে, টেলিভিশনের স্ক্রিনজুড়ে বড় বড় শিরোনামে খবর। কদিন না যেতেই আমরা ভুলে যাব তার ত্যাগ, আদর্শ।

তবুও সত্যিকার অর্থে জন্মের পরমুহূর্ত থেকেই শুরু হয় আমাদের মৃত্যুর গন্তব্যে পৌঁছানোর অভিযাত্রা। আমরা কেউই এই পথপরিক্রমার বাইরে নই। তবুও কিছু কিছু মৃত্যু, সত্যি এভাবে থমকে দেয়, বিষণ্ন করে দেয় আমাদের। মহাকালের অনন্তযাত্রায় হাদি এখন স্মৃতির জগতে অনির্বাণ হয়ে জ্বলবে। হাদি তুমি ভালো থাকো।


৪. কয়েক দিন আগের ঘটনা। সম্ভবত ১৯ সেপ্টেম্বর। ঘুম থেকে উঠে দেখি হোয়াটসঅ্যাপে হাদির মেসেজ। ‘আজ বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে নির্বাচনি বিসমিল্লাহ উপলক্ষে মিলাদ, গীত ও বাতাসা বৈঠকের দাওয়াত।’ অলক্ষ্যে স্ক্রিনে ভেসে মেসেজটা চলে যায়। দুপুরের দিকে ফোন করে ওপার থেকে একজন বলছেন- ‘ভাই-আসবেন না, ছোট ভাইকে দোয়া করতে’। সঙ্গত কারণেই হাদি ভেবেছিল মেসেজটি আমি সিন করিনি, কারণ মেসেজে লাইক-লাভ কিছুই নেই। কারণ তার যেকোনো মেসেজে আমার কোনো একটা রিয়েকশন থাকে। বিনয়ী-মার্জিত ও নিপাট ভদ্র তরুণটি বলতে থাকে—ভাই আপনি আসলে আমি অনেক খুশি হব। স্নেহের অনুজের এমন আবদার কী অপূর্ণ রাখা যায়! আশ্বাস দিলাম আসব আমি। বললাম, বাতাসার আয়োজন কেন? বলল ভাই, আমি নির্বাচন করব কী করব না- সেটি নিয়ে অনেক ভেবেছি। কারণ নির্বাচন করার এত টাকা পাব কোথায়? বললাম তোমার ভোট করতে টাকা লাগবে কেন? মানুষ ভালোবেসে নিজের পকেটের টাকায় তোমার নির্বাচন করবে। ওপার থেকে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর, ভাই আপনারা এত আপন ভাবেন বলেই আশা দেখি। বার্তাকক্ষের নিয়মিত ব্যস্ততার জাঁতাকালে হাদির সেই নির্বাচনি বিসমিল্লায় যাওয়া হয়ে উঠেনি। ১৮ ডিসেম্বর তার চিরপ্রস্থানের সংবাদ আসার পর নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল। বারবার ভাবছিলাম- এমন একটা তরুণের ডাকেও সাড়া না দেওয়া যায়! যার জন্য রিকশাওয়ালা, গৃহিণী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পথচারী নিজের পকেটে টাকা তুলে নির্বাচন করছেন। বলে রাখা ভালো- হাদি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমাদের ৫ বছরের অনুজ। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে বেরিয়ে আসি সম্ভবত তখন তারা ভর্তি হয়। তার সঙ্গে সরাসরি পরিচয় বছর তিনেক আগে। পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে আমি ‘আপনি’ সম্বোধন করলে আস্তে করে স্বাভাবিক সরলতায় বলত ভাই- কেমন জানি লাগে, দূরের কেউ মনে হয়। তুই/তুমি বলা যায় না! 

হাদি সাদাসিদে জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। নির্বাচনি প্রচারেও ছিলেন ব্যতিক্রম। যেকোনো মসজিদে ফজরের নামাজের পর শুরু করতেন প্রচার, শেষ হতো গভীর রাতে। কয়েক দিন আগে নির্বাচনি গণসংযোগে যাওয়ার পর ময়লার পানি গায়ে এসে পড়েছে। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে দুষ্টজনেরা ট্রল করছিল। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ফোন দিলে— হাদি জানান, ঘটনা অনেকটা এ রকমই। প্রচারের সময় তার কর্মীর গায়ে কেউ ভাতের মাড় ছুড়ে দেয়। হাদি বলেন, কর্মীর গায়ে ময়লা ছুড়ে দেওয়া তো আমার গায়ে-ই দেওয়া। এরপর হাদি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তার স্টাইলে ঘোষণা দেয়—আমার গায়ে কার কার ময়লা দিতে মন চায় আওয়াজ দিয়েন, আমি বাসার সামনে হাজির হয়ে যাব। হাদির অ্যাপ্রোচ ছিল একেবারেই আন্তরিক, নির্ভেজাল। অকৃত্রিম ভালোবাসার বাঁধনে যে কাউকে বাঁধতে পারত সে। 

হাদি যা বিশ্বাস করত তা বলে ফেলত উচ্চকণ্ঠে। এজন্য তার শত্রুও তৈরি হয়েছিল। এ জাতি তো সমালোচনা সহ্য করার নয়! তাকে বারবার মেরে ফেলার হুমকি আসছিল। তবে ভীত হননি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে হাদি বলেছিলেন—            

‘মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে নয়, আসমানে হয়। আমি চলে গেলে আমার সন্তান লড়বে, তার সন্তান লড়বে। যুগ হতে যুগান্তরে আজাদির সন্তানরা স্বাধীনতার পতাকা সমুন্নত রাখবেই। মৃ-ত্যু-র ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো শাহাদতের জন্যই মায়ের উদর হতে পৃথিবীতে পা রেখেছি।’

যে হাদিদের সংগ্রামে চব্বিশের রক্তরঞ্জিত স্বাপ্নিক বহুল কাঙিক্ষত দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি সেই হাদিকেই আমরা রক্ষা করতে পারলাম না। ক্ষমা করো হাদি। নতুবা অভিশাপ দিও আমাদের।

যে হাদিদের সংগ্রামে চব্বিশের রক্তরঞ্জিত স্বাপ্নিক বহুল কাঙিক্ষত দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি সেই হাদিকেই আমরা রক্ষা করতে পারলাম না। ক্ষমা করো হাদি। নতুবা অভিশাপ দিও আমাদের।

পবিত্র কুরআনের সুরা আল ফাজরে আল্লাহ বলেছেন-

হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের নিকট ফিরে এসো সন্তুষ্টচিত্তে। অতঃপর আমার বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও; আর প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।

অমর্ত্য অনন্তলোকে স্রষ্টার সৃষ্ট প্রাণ তারই অস্তিত্বে বিলীন। আমাদের সবারই প্রত্যাবর্তন তারই কাছে। 

শরিফ ওসমান হাদি তো অনন্তলোকে চলে গেলেন। শাহাদতের অমীয় সুধা পান করেছেন। তার একমাত্র সন্তানের অনাথ জীবন শুরু; যার জন্য কেঁদেছিলেন হাদি। ঢাকার ব্যস্ত রাজনীতি সন্তানের মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত রেখেছে এই হাদিকে। তার সন্তানটার বেড়ে ওঠা, বড় হওয়ার সঙ্গী তো এখন কান্না, আক্ষেপ আর বাবার স্পর্শহীন শূন্যতা নিয়ে।

শরিফ ওসমান হাদি তো অনন্তলোকে চলে গেলেন। শাহাদতের অমীয় সুধা পান করেছেন। তার একমাত্র সন্তানের অনাথ জীবন শুরু; যার জন্য কেঁদেছিলেন হাদি। ঢাকার ব্যস্ত রাজনীতি সন্তানের মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত রেখেছে এই হাদিকে। তার সন্তানটার বেড়ে ওঠা, বড় হওয়ার সঙ্গী তো এখন কান্না, আক্ষেপ আর বাবার স্পর্শহীন শূন্যতা নিয়ে। হয়তো আকাশের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকবে, আর অলক্ষ্যে চোখের পানি মুছবে। দেশকে ভালোবেসে বাবাটা পরিবারটাকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন। বিপ্লবীরা হয়তো এমনই হয়। 

হাদির লাশ কিছুক্ষণ আগে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছে। তার চাওয়া অনুযায়ী ছোট্ট সাদাসিদে কফিনে। কিছুক্ষণ পরই নেওয়া হবে প্রিয় ক্যাম্পাসে। এটাই শেষ যাত্রা তার। 

প্রিয় অনুজের অকাল প্রয়াণে আজ আমি খুবই বেদনাহত। বারবার মনে হচ্ছে- কিছু মৃত্যুর কোনো সান্ত্বনা হয় না। কোনো কোনো মৃত্যু আমাদের মনকে এতটাই আলোড়িত করে- বেদনাবিধূর করে যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এভাবে এমন করে এমন অসময়ে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সবেমাত্র তারুণ্য পেরিয়ে- হাদি এভাবে আমাদের কাঁদিয়ে চলে যাবে; তা আমার কল্পনাতেও আসেনি কখনো। 

প্রিয় অনুজের প্রতি শোকার্ত শব্দাবলি শেষ করব কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর একটি পঙক্তি দিয়ে—

‘ভুল ভেঙে গেলে ডাক দিও, 

আমি মৃত্যুর আলিঙ্গন ফেলে 

আত্মমগ্ন আগুন ললাটের সৌমতায় 

তোমার লিখে দেবো একখানা প্রিয় নাম 

ভালোবাসা।’

লেখক পরিচিতি

সাংবাদিক ও লেখক।

ঘটনাপ্রবাহ: ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম