Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

প্রভুর কাছে প্রিয় ইবাদত নামাজ

Icon

মো. লোকমান হেকিম

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রভুর কাছে প্রিয় ইবাদত নামাজ

নামাজই হচ্ছে ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ আনুষ্ঠানিক ইবাদত এবং ইসলামের প্রতীক। নামাজকে দ্বীনের খুঁটিও বলা হয়েছে। খুঁটি ছাড়া যেমন ঘর নির্মাণ করা যায় না, তেমনি নামাজ ছাড়া সমাজ বিনির্মাণ করা যায় না; দ্বীন পরিপূর্ণ হয় না। কালেমার সাক্ষ্য দেওয়ার পর নামাজই হচ্ছে ইসলামের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বা রুকন।

এমনকি আল্লাহ পাক নামাজকে ইমান নামেও অভিহিত করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ এরূপ নন যে তিনি তোমাদের ইমানকে (নামাজ) নষ্ট করে দেবেন।’ (সূরা বাকারাহ ২:১৪৩)। এ আয়াতে নামাজকে ইমান রূপক অর্থে বলা হয়েছে। যেহেতু ইমানের বহিঃপ্রকাশ ও দাবি হলো নামাজ আদায় করা, যদিও নামাজ না পড়লে ইমান চলে যায় না। অবশ্য ইমান দুর্বল হয়ে যায়।

সুতরাং ইমানের ওপর নামাজের প্রভাব অনস্বীকার্য। ইসলামের যাবতীয় অবশ্য পালনীয় বা ফরজ বিধানগুলো জিবরাইল (আ.) মারফত নবি (সা.)-এর ওপর নাজিল করা হয়েছে। কিন্তু নামাজ এর ব্যতিক্রম। নামাজের জন্য তাঁকে মহান আল্লাহর দরবারে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মানের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সর্বাবস্থায় নামাজ আদায় করতে হবে। এমনকি যেখানে শত্রুর আক্রমণের ভয় আছে সেখানেও নামাজ আদায়ের হুকুম আছে কৌশলগতভাবে।

এমনকি অসুস্থ থাকলেও নামাজ পড়ার বিধান আছে। দাঁড়িয়ে থেকে নামাজ পড়তে অক্ষম হলে বসে নামাজ পড়বে, বসে পড়তে অক্ষম হলে শুয়ে পড়বে অথবা ইশারা ইঙ্গিতে পড়বে। তবুও মাফ নেই। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) বলেছেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ পড়। যদি অক্ষম হও, বসে নামাজ পড়। আর তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ইশারা করে নামাজ পড়।’ (সহিহ আল বুখারি)।

সময়মতো নামাজ আদায় করা ফরজ। আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।’ (আন নিসা ৪:১০৩)। উড়োজাহাজ বা ট্রেন, বিমানবন্দর বা রেলস্টেশন ছেড়ে যাওয়ার ৫-৭ মিনিট পর সেখানে পৌঁছলে আপনি কি ভ্রমণ করতে পারবেন? তাই যারা জেনে-শুনে, বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ অসময়ে আদায় করছেন, তারা অন্যায় কাজ করছেন। তাই নামাজ প্রকৃত সময়েই আদায় করতে হবে।

নামাজকে যারা এর নির্দিষ্ট সময় থেকে পিছিয়ে অসময়ে আদায় করে, তাদের আল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) তার বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘হজের মতো নামাজেরও সময় নির্ধারিত।’ অপর সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মত এমনটিই। তিনি বলেছেন, ‘হজের মতো নামাজেরও একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে।’ তাই হজ যেমন নির্ধারিত সময়ে আদায় না করে অন্য সময়ে আদায় করা যায় না, তেমনি নামাজও নির্ধারিত সময় ছাড়া আদায় করা যায় না।

শরয়ি ওজর ছাড়া নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় না করলে আল্লাহ তা কবুল নাও করতে পারেন। মুমিন ও কাফিরের বাহ্যিক পার্থক্য নামাজ : নামাজ ত্যাগ করলে কুফরিতে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। জাবির (রা.)-এর বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন বান্দা ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত পরিত্যাগ করা।’ (সহিস মুসলিম)। অর্থাৎ মুমিনরা নামাজ পড়ে আর কাফিররা নামাজ পড়ে না। যেহেতু একজন মুমিন যে আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে নামাজ ছাড়তে পারে না।

তাই আমি বলব, যে ব্যক্তি মুসলমান হয়েও নামাজ পড়ে না, সে সত্যি দুর্ভাগা। হজরত বুরায়দা (রা.) বর্ণনা করেন, নবি (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গিকার (পার্থক্য) আছে, তা হচ্ছে সালাত। সুতরাং যে সালাত পরিত্যাগ করল, সে প্রকাশ্যে কুফরি করল।’ (মুসনাদে আহ্মাদ, তিরমিজি, নাসাই, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)। তাই যে কুফরি করছে, সে কি করে বেহেশতে যাওয়ার আশা করবে? হজরত উমর (রা.) বলেন-‘যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দিল, ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।’ ইমাম আহমদ (রহ.) মত প্রকাশ করেন যে, ‘একজন লোক নামাজ অস্বীকার না করলেও কেবল নামাজ পরিত্যাগ করলেই কুফরির অন্তর্ভুক্ত হবে।’

তিনি নিম্নোক্ত হাদিসটিকে দলিল হিসাবে গ্রহণ করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সর্বপ্রথম তোমরা দ্বীনের যা হারাবে তা হলো আমানত এবং সর্বশেষ দ্বীনের যা হারাবে তা হলো নামাজ।’ (শু’য়াবুল ইমান, বায়হাকি)। তাই এ হাদিসের ওপর ভিত্তি করে ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘সুতরাং ইসলাম থেকে চলে যাওয়া সর্বশেষ বস্তু যখন নামাজ অতএব, যে বস্তুর শেষ চলে যায় সে বস্তু সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়। এ জন্য আপনারা দ্বীনের সর্বশেষ অংশ (নামাজ)কে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরুন।’ (কিতাবুস্ সালাত)।

সুতরাং যার ভেতর নামাজ নেই তার ভেতর কিছুই নেই। তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা ঠিক নয়। এটা ঠিক যে, অনেক তথাকথিত নামাজি দোজখে যেতে পারে, যারা লোক দেখানো নামাজ পড়ে। কিন্তু কোনো বেনামাজি ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ তার কাছে বেহেশতের দরজা খোলার কোনো চাবি নেই।

নামাজ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম