তাসনিম জারাকে ঘিরে যেভাবে চলছে সাইবার হয়রানি, নেপথ্যে কারা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১২ পিএম
তাসনিম জারা। ছবি: ডিসমিসল্যাব থেকে সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া ছবি, ভিডিও, ফটোকার্ড তৈরি করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর নেপথ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কর্মী–সর্মথকদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব। চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬২টি পোস্ট বিশ্লেষণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি পোস্ট আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকদের ফেসবুক প্রোফাইল ও পেজ থেকে করা হয়েছে।
ডিসিমিসল্যাব বলছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ৬২টি পোস্টের ভুয়া ছবি, মূলধারার গণমাধ্যমের আদলে বানানো বিভ্রান্তিকর ফটোকার্ড এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্মিত ভিডিও ও অডিও ব্যবহার করে তাসনিম জারাকে টার্গেট করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাষা ছিল আক্রমণাত্মক, অবমাননাকর ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ, যা ফেসবুকের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। কিছু পোস্টে এমনকি জারার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে যৌনবাহিত রোগের ওষুধের ভুয়া বিজ্ঞাপনে।
পোস্টগুলো মোট ২৯ হাজার ৬৯৩ বার শেয়ার হয়েছে এবং ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৯০০ বার দেখা হয়েছে। এগুলোতে মোট ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩৪টি প্রতিক্রিয়া এবং ৩৪ হাজার ৯৫৭টি মন্তব্য এসেছে। যার বেশির ভাগই ছিল অবমাননাকর ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ।
ডিসমিসল্যাব অনুসন্ধান করে দেখেছে, পোস্টকারীদের মধ্যে তাসনিম জারার বিকৃত ছবি সবচেয়ে বেশি শেয়ার করেছেন মো. সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। চলতি বছরের ২ মে থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনি অন্তত ২০টি ছবি শেয়ার করেন, যার মধ্যে ১৮টিই বিকৃত। বাকি দুটি আসল ছবি হলেও সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে জারার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য। ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতে (পরিচয়) সাইফুল নিজেকে বর্ণনা করেছেন ‘জয় বাংলার সৈনিক’ হিসেবে, আর কভার ফটোতে রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।
ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধান থেকে আরও জানা গেছে, অন্যান্য যেসব ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল থেকে তাসনীম জারার বিকৃত কনটেন্ট ছড়ানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, আওয়ামী লীগ ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বাংলাদেশ আওয়ামী মুজিবাবাদী লীগ বা স্বঘোষিত ‘মুজিব সৈনিক’। এরমধ্যে একটি হলো ব্যঙ্গাত্মক পেজ, তিনটি পেজ নিজেদের সংবাদমাধ্যম বলে দাবি করেছে এবং ১৪টি পেইজ ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপন ছড়াচ্ছিল। বাকি দুটি অ্যাকাউন্টের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তাদের নাম বা প্রোফাইল থেকে বোঝা যায়নি। অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনোটি খোলা হয়েছিল ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই। আর সবচেয়ে নতুনটি তৈরি হয়েছে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট।
ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মোট ৬২টি পেজ ও প্রোফাইলের মধ্যে ৫৭টি পরিচালনা করছিলেন ১৩৩ জন অ্যাডমিন। যাদের মধ্যে ১০২ জনই বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। এছাড়া মালয়েশিয়ায় রয়েছে ২২ জন, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে ৩ জন করে ও ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পর্তুগালে ১ জন করে।
এ বিষয়ে তাসনিম জারা বলেন, ‘আমাকে কীভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। তবে এ অভিজ্ঞতা শুধু আমার নয়, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত প্রায় সব নারীই এর মুখোমুখি হন। এটা রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম থাকার প্রধান একটি কারণ।’
ফেসবুকে কোনো ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে ভুয়া বিজ্ঞাপন চালানো এই প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব নীতিমালারও লঙ্ঘন উল্লেখ করে তাসনিম জারা বলেন, ‘কিন্তু ফেসবুক এখানে দায় এড়িয়ে চলে, কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আমাদের সরকারের উচিত এই বিষয়ে টেক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা।’
নারীর বিরুদ্ধে অনলাইন সহিংসতা বন্ধে দলমত–নির্বিশেষে একটি সাধারণ আচরণবিধি এবং দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করার পদ্ধতি বের করার বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।





