রাজশাহী বিভাগে বিএনপির ৫ আসন
শরিকদের ছেড়ে দিলে ভরাডুবির শঙ্কা
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩২ পিএম
ফাইল ছবি।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের মধ্যে বিএনপি ৩ নভেম্বর ৩৪টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলেও ৫ জেলার ৫টি আসন ফাঁকা রেখেছে। ফাঁকা এসব আসনের প্রতিটিতে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য জোট হলে বিএনপি জোট শরিক দলগুলোকে এসব আসন ছেড়ে দিতে পারে বলে নির্বাচনি এলাকায় জোর আলোচনা রয়েছে।
এদিকে ফাঁকা আসনগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছেন এসব আসন সম্ভাব্য জোটের শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দেবে বিএনপি। যদি এসব আসন এনসিপি বা অন্য কোনো সম্ভাব্য শরিককে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে আসনগুলোয় শরিকদের বড় ভরাডুবির শঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আসনগুলো জামায়াতের ঝুলিতে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আরও বলছেন, এসব ফাঁকা আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। একেক আসনে তিন-চারজন করে মাঠে থাকায় প্রার্থী নির্বাচন জটিলতায় মনোনয়ন ঘোষণা বন্ধ রয়েছে।
দলীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে নাটোর-৩ (সিংড়া), নওগাঁ-৫ (সদর), পাবনা-১ (সাঁথিয়া), বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) ও সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সিরাজগঞ্জ সদর) আসন বিএনপি ফাঁকা রেখেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর-৩ (সিংড়া) থেকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ পরপর তিনবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে বিএনপির আরও তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। অন্যদিকে আসনটিতে জেলা এনসিপির সদস্য সচিব এসএম জার্জিস কাদির গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে তিনি এনসিপির মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। অধ্যাপক কাদির রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। আসনটিতে জার্জিস কাদির এনসিপির প্রভাবশালী প্রার্থী। তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নয়, আরও কোনো কোনো দলের সঙ্গে সম্ভাব্য জোটের বিষয়ে আলোচনা আছে। যদিও নাটোর জেলা এনসিপির আহ্বায়ক আব্দুল মান্নাফ বলেছেন, বিএনপি আসনটি এনসিপিকে ছেড়ে দেবে-এমন কোনো আলোচনার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া) আসনটিতেও বিএনপি কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। এ আসনে জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জিতেছিলেন। ২০১৮ সালে পাবনা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন। তিনি এবারও এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এছাড়া বিএনপির আরও দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন প্রয়াত মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, আসনটি বিএনপি সম্ভাব্য জোট শরিক গণফোরামকে ছেড়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে গণফোরাম নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ প্রার্থী হতে পারেন।
নওগাঁ-৫ (সদর) আসনটি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের আসন হিসাবে পরিচিত। তবে সর্বশেষ ১৯৯১ সালে এই আসনটিতে জিতেছিলেন বিএনপির সামস উদ্দিন আহমদ। এবার এই আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল হক সনিসহ আরও ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এ আসনে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। মনিরা শারমিন বলেন, আমি নওগাঁ-৫ থেকে নির্বাচন করছি, এটুকু নিশ্চিত বলতে পারি।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনটিতেও কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১১ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়ার সাতটি আসনের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডাকা হয়েছিল। ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে বগুড়া-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আলোচনার সময় উঠে আসে আসনটিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গটি। উপস্থিত বগুড়া জেলা বিএনপির নেতারা বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন।
এদিকে সর্বশেষ জানা যায়, বিএনপিতে যোগ দেওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিএনপিতে যোগদান করে রোববার (৯ নভেম্বর) বগুড়া-২ আসনে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। স্নিগ্ধ বলেন, ঐতিহাসিক শিবগঞ্জের মহাস্থান থেকে বিএনপির সঙ্গে তার পথচলা শুরু হলো। তিনি শিবগঞ্জের মানুষের সঙ্গে থাকবেন। তাদের জন্য কাজ করবেন।
সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদর) আসনটিতে বিএনপি দলীয় প্রার্থী দেবে নাকি সম্ভাব্য জোট শরিক দলের কাউকে ছেড়ে দেবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। ২০১৮ সালে কনকচাঁপা এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। বিএনপি নেতা সেলিম রেজাও এই আসনের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে বিএনপি আসনটি দলীয় কোনো প্রার্থীকে দেবে নাকি সম্ভাব্য জোটের কোনো দলকে ছেড়ে দেবে, তা নিয়ে জোর আলোচনা রয়েছে এলাকায়। মনোনয়নপ্রত্যাশী কনকচাঁপা বলেন, আল্লাহ উত্তম ফয়সালাকারী। যেটা আমার জন্য ভালো, মহান আল্লাহ তাই করবেন। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আমার আস্থা অটুট রয়েছে।



