আপাতত ঢাকায় রেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ পিএম
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় আজ লন্ডন নেওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আপাতত ঢাকায় রেখেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে। ফলে এ নিয়ে দুই দফা পিছিয়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের শিডিউল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে ১২-১৪ ঘণ্টা বিমানযাত্রা উপযুক্ত মনে করছে না তার মেডিকেল বোর্ড। প্রতিদিনই অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। মূল সমস্যা হলো একটি জটিলতা কেটে গেলে নতুন আরেকটি জটিলতা দেখা দেয়। একটি রোগের প্যারামিটার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আরেকটি বেড়ে যায়। লিভারের দীর্ঘদিনের পুরোনো জটিলতা নিয়ন্ত্রণে এলেও কিডনি নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে মেডিকেল বোর্ড। শারীরিক অবস্থা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবছে না বোর্ড।
সোমবার সন্ধ্যায় বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের অবস্থার উন্নতি আছে। তবে আহামরি বলা যাবে না। বয়সজনিত কারণে সেরে ওঠতে সময় লাগবে। এ দফায় তার উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। তার মাল্টিপল ডিজিস (বহুমুখী জটিলতা) থাকায় একটি রোগ থেকে সেরে উঠলে আরেকটি দেখা দেয়। লিভার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি জটিলতায় বেশ ভুগছেন। কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বর্ডার লাইন (ঝুঁকিপূর্ণ সীমা) অতিক্রম করেছে বেশ আগেই। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখাই কষ্ট হচ্ছে। এখানে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রতিনিয়ত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই কিডনির অবস্থার অবনতি হয়।
তিনি বলেন, সিসিইউতে নেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্যারামিটারগুলো স্বাভাবিক থাকলেও একেবারে ঝুঁকিমুক্তও হচ্ছেন না। সিসিইউতে অ্যাডভান্স টিট্রমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতিরাতে বৈঠকে প্রতিটি আলাদা আলাদা রোগ নিয়ে আলোচনা করে। রিপোর্ট দেখে কিছু ওষুধ বন্ধ করে, আবার চালু করে। কিছু ওষুধের মাত্রা কমায় কিংবা প্রয়োজনে বাড়িয়ে দেয়। দেশে ফেরার পর বোর্ডে সশরীরে অংশ নেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান।
এদিকে দিনের বেশির ভাগ সময় এভারকেয়ার হাসপাতালে শাশুড়ির শয্যাপাশে কাটান ডা. জোবাইদা রহমান। বাসায় থাকার সময়ও টেলিফোনে শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। চিকিৎসার বিষয়গুলো তিনি সমন্বয় করেন। ডা. জোবাইদা বেশ কয়েকদিন দেশেই থাকবেন।
মেডিকেল বোর্ডের আরেকজন সদস্য জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিক আছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, সৈয়দা শর্মিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা এবং স্টাফ রূপা আক্তার। বিএনপির চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সার্বক্ষণিক পাশে আছেন। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের এক ডজন চিকিৎসক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারকি করছে।
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স : উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ আসছে না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আজ সকালে তাদের ঢাকায় নামার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটর সোমবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে আজকের ওই ফ্লাইট বাতিল করার আবেদন করেছে বলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন (এফএসআর) বিভাগের ওই কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমরা এফএআই এভিয়েশন গ্রুপের স্থানীয় এজেন্টের কাছ থেকে আগের স্লট অনুমোদন প্রত্যাহারের আবেদন পেয়েছি। ইতোমধ্যে আবেদনটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রোববার অপারেটরের প্রাথমিক আবেদন অনুযায়ী, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি মঙ্গলবার (আজ) সকাল ৮টায় ঢাকা পৌঁছানোর অনুমতি দেয় বেবিচক। আবেদনপত্রে জানানো হয়, রাত ৯টার দিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে উড্ডয়ন করবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটটি। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ৯ ডিসেম্বরের স্লট বাতিল করায় তার যাত্রা আবার পিছিয়ে গেল।
বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার বিষয়টি নির্ভর করছে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তার চিকিৎসকদল। এদিকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয় বাস্তুহারা দল দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে।
