Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

যেসব কারণে রোজা ভেঙে কাজা ওয়াজিব হয়

মুফতি বিলাল হুসাইন খান

মুফতি বিলাল হুসাইন খান

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৮ এএম

যেসব কারণে রোজা ভেঙে কাজা ওয়াজিব হয়

১. রোজাদারকে যদি মেরে ফেলার কিংবা ক্ষতিসাধনের হুমকি দিয়ে কোনো কিছু আহার করানো হয় বা পান করানো হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

২. গোসল কিংবা ওজুতে কুলি করার সময় বা নাকে পানি দেওয়ার সময় যদি কণ্ঠনালীতে পানি চলে যায় এবং সেই সময় রোজার কথা স্মরণ থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা করা ওয়াজিব হবে। 

৩. যেসব জিনিস সাধারণত খাদ্য কিংবা ওষুধ অথবা অন্য কোন উপকার হিসাবে ব্যবহার করা হয় না- যেমন কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি, তা খেলে বা পান করলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

৪. যদি দাঁতে ছোলা বুটের চেয়ে বড় কোনো খাদ্য টুকরা আটকে থাকে আর তা পেটে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। তবে যদি সে টুকরা ছোলা বুটের চেয়ে ছোট হয় তাহলে রোজা ভেঙে যায় না, তবে এরূপ করা মাকরূহ। 

৫. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে তা যদি থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালীর নিচে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। আর যদি রক্তের চেয়ে থুথুর পরিমাণ বেশি হয় তাহলে রোজা ভেঙে যায় না। 

৬. রোজাদারের ঘাম বা অশ্রু যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি মুখ দিয়ে কণ্ঠনালীর নিচে চলে যায় এবং কণ্ঠনালীতে তার স্বাদ অনুভব হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। আর যদি সামান্য পরিমাণ ঘাম বা অশ্রু মুখ দিয়ে প্রবেশ করে তাহলে রোজা ভাঙবে না। 

৭. পায়খানার রাস্তায় ওষুধ প্রবেশ করালে এমনিভাবে কানে বা নাকে ওষুধ দিলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

৮. স্ত্রীর যোনিতে কোনো ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে, তবে পুরুষের পেশাবের রাস্তায় কোন ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। 

৯. পেট বা মাথার ক্ষতস্থানে কোনো ওষুধ লাগালে তা যদি পেটে বা মাথার ভিতরে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। এছাড়া শরীরের অন্য কোনো ক্ষতস্থানে ওষুধ ব্যবহার করলে তা যদি পেটে বা মাথার অভ্যন্তরে চলে না যায় তাহলে রোজা ভাঙবে না। 

১০. পানি বা তেল দ্বারা ভিজা আঙুল যোনিতে বা পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হয়। 

১১. পায়খানার রাস্তা পানি দ্বারা এত বেশি ধৌত করা যে, ভিতরে পানি পৌঁছে গেছে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

১২. রাত আছে মনে করে স্ত্রী সহবাস অবস্থায় যদি সুবহে সাদেক হয়ে যায় এবং পূর্বের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।  

১৩. নিজের স্ত্রী বা কোনো বেগানা নারী কিংবা কোন পুরুষকে স্পর্শ করা কিংবা চুম্বন করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে বীর্যপাত না হলে রোজা না ভাঙ্গলেও অবশ্যই তা মাকরূহ হবে। 

১৪. কোনো জীব-জন্তুর সঙ্গে সংগম করলে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

১৫. হস্তমৈথুন করলে যদি বীর্যপাত হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

১৬. ভুলে পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

১৭. রোজার দিনে স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে গেছে মনে করে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে পানাহার করে তাহলে ইচ্ছাকৃত পানাহারের কারণে রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

১৮. নিজের স্ত্রী বা কোন বেগানা নারীকে শাহওয়াতের সাথে শুধু নজর করার কারণেই যদি বীর্যপাত ঘটে যায় তাহলে রোজা ভাঙবে না, তবে স্ত্রী বা কোনো নারীকে শুধু শাহওয়াতের সাথে নজর করার কারণে রোজা ভেঙে গেছে মনে করে কেউ যদি আবার ইচ্ছাকৃতভাবে রোজাকে ভেঙে ফেলে তাহলে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

১৯. কোনো ব্যক্তি স্বয়ং রমজানের চাঁদ দেখার পর লোকদেরকে চাঁদ দেখা সম্পর্কে সাক্ষ্য দিল কিন্তু নেসাবে শাহাদাৎ না হওয়ার কারণে তার সাক্ষ্যকে গ্রহণ করা হলো না, এহেন অবস্থায় ওই ব্যক্তির ওপর রোজা রাখা আবশ্যক। সুতরাং সে যদি ওই দিন রোজা না রাখে তাহলে তার জন্য শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। 

২০. কানে পানি দেওয়া বা অনিচ্ছা বশত চলে যাওয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে পানি দিলে সতর্কতা হলো সে রোজা কাজা করে নেয়া। 

২১. কানে বা নাকে ওষুধ দিলে, বিড়ি-সিগারেট বা হুক্কা খেলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা ওয়াজিব।

রোজা রমজান কাজা ওয়াজিব

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম