|
ফলো করুন |
|
|---|---|
হাসান আজিজুল হক ছিলেন কথাসাহিত্যিক। তিনি ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও একান্নবর্তী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ দোয়া বখশ্ এবং মাতার নাম জোহরা খাতুন। তিনি ১৯৫৪ সালে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় এবং ১৯৫৬ সালে খুলনা শহরের অদূরে দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শনে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পিএইচডি অধ্যয়নের জন্য অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন অধ্যয়ন করেছেন। কিন্তু গবেষণা শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক শিক্ষক হাসান আজিজুল হক তার জীবনের অধিকাংশ সময় রাজশাহীতে কাটিয়েছেন।
ষাটের দশকে আবির্ভূত এ কথাসাহিত্যিক তার ব্যতিক্রমী গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য খ্যাতি লাভ করেছেন। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধান অনুষঙ্গ। আগুনপাখি তার রচিত প্রথম উপন্যাস। প্রবেশিকা পাশের পরপরই তিনি লেখেন ‘মাটি ও মানুষ’ শীর্ষক একটি উপন্যাস। ‘শকুন’ গল্পটি প্রকাশের আগেই ১৯৫৬ সালে নাসির উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ‘মুকুল’ পত্রিকায় তার ‘মাটি ও পাহাড়’ শীর্ষক একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর মর্যাদাসম্পন্ন বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ অব্যাহত থাকে। সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় ১৯৬০ সালে ‘শকুন’ শীর্ষক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে হাসান আজিজুল হক সুধী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই বছর ‘পূর্বমেঘ’ পত্রিকায় ‘একজন চরিত্রহীনের স্বপক্ষে’ নামে গল্প প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি একজন ব্যতিক্রমী কথাশিল্পী হিসাবে গণ্য হন। ‘পূবালী’, ‘কালবেলা’, ‘গণসাহিত্য’, ‘ছোটগল্প’, ‘নাগরিক’, ‘পরিক্রম’, ‘কণ্ঠস্বর’, ‘পূর্বমেঘ’-এসব পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন। ১৯৬৩ সালে সুহৃদ নাজিম মাহমুদের সহযোগিতায় সন্দীপন গোষ্ঠী নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে হাসান আজিজুল হক যুক্ত হন। তিনি এ সময় সুহৃদ নাজিম মাহমুদের সঙ্গে যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেন ‘সন্দীপন’ শীর্ষক একটি সাহিত্য পত্রিকা।
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি লাভ করেন। এছাড়া আরও অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে তিনি আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি পান। ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান।
