Logo
Logo
×

স্মরণীয়-বরণীয়

সুভাষ দত্ত

Icon

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুভাষ দত্ত ছিলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, সিনেমা চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা। তিনি ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মামার বাড়িতে দিনাজপুরের মুন্সিপাড়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাসস্থান বগুড়া জেলার চকরতি গ্রামে। তার কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল সিনেমার পোস্টার এঁকে। এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর পোস্টার ডিজাইনার হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। মাটির পাহাড় চলচ্চিত্রে আর্ট ডিরেকশনের মধ্য দিয়ে তার পরিচালনা জীবন শুরু হয়। এরপর তিনি এহতেশাম পরিচালিত এ দেশ তোমার আমার ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ২০০৮ সালে মুক্তি লাভ করে। তিনি বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার ইচ্ছা পোষণ করলেও তা পূরণ করে যেতে পারেননি। তিনি বসবাস করতেন পুরান ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের নিজ বাড়িতে। স্ত্রী সীমা দত্ত ২০০১ সালের অক্টোবরে মারা যান। তিনি দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।

সুভাষ দত্ত চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল শিখতে ভারতের বোম্বেতে গিয়ে পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে একটি ছায়াছবির প্রচারবিষয়ক স্টুডিওতে মাত্র ত্রিশ টাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে একটি প্রচার সংস্থায় যোগ দেন। এরপর তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন চলচ্চিত্রের পোস্টার আঁকার কাজের মাধ্যমে। ১৯৫৮ সালে পরিচালক এহতেশামের এ দেশ তোমার আমার চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন, যা মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। ষাটের দশকের শুরুর দিকে নির্মিত বহুল আলোচিত হারানো দিন চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। মুস্তাফিজ পরিচালিত এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি লাভ করে ১৯৬১ সালে এবং এটি এক প্রেক্ষাগৃহে পঁচিশ সপ্তাহ প্রদর্শনের রেকর্ড তৈরি করে। এরপর তিনি বেশকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রে তিনি কৌতুকাভিনেতা হিসাবে অভিনয় করেও প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।

১৯৬৩ সালে তিনি নির্মাণ শুরু করেন সুতরাং চলচ্চিত্রটি এবং ১৯৬৪ সালে এটি মুক্তি পায়। এর প্রধান অভিনেতার চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন নবাগতা অভিনেত্রী কবরীর বিপরীতে এবং এটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্মাননা লাভ করেছিল। ১৯৬৮ সালে তিনি আবির্ভাব চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন এবং ছবির একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে তিনি নির্মাণ করেন অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, যাকে তার বানানো অন্যতম সেরা ছবি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭৭ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘২৩ নম্বর তৈলচিত্র’ অবলম্বনে বসুন্ধরা নামের যে চলচ্চিত্রটি সুভাষ দত্ত নির্মাণ করেন-তা আজো চলচ্চিত্র সমালোচকদের আলোচনার বিষয়। সত্তর দশকের শেষের দিকে ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা গল্প গলির ধারের ছেলেটি অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করছিলেন ডুমুরের ফুল চলচ্চিত্রটি। এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তিনি একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও শিল্প নির্দেশক ছিলেন এবং এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন।

চলচ্চিত্র ছাড়া তিনি প্রচুর মঞ্চনাটকেও অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ১৯৭২ সালে ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলের প্রথম প্রযোজনা কবর নাটকে প্রথম মঞ্চাভিনয়ের সুযোগ ঘটে তার। তিনি ১৯৭৭ সালে ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তার প্রযোজনা-পরিচালনার বসুন্ধরা চলচ্চিত্রটির জন্য সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ এটি মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করে। এ ছাড়া তিনি দেশি-বিদেশি অনেক সম্মাননা লাভ করেছেন। ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি মারা যান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম