|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শহীদুল্লা কায়সার ছিলেন কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও লেখক। তিনি ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তার পিতার নাম মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ এবং মাতার নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। শহীদুল্লা কায়সারের পিতা ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান তার অনুজ। পান্না কায়সার তার সহধর্মিণী।
শহীদুল্লা কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ (১৯৪৬) পাশ করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন, কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। ছাত্রজীবনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ৩ জুন গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৮ সালের ১৪ অক্টোবর সামরিক শাসক কর্তৃক তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন এবং প্রায় চার বছর কারাভোগের পর ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তিলাভ করেন।
১৯৪৯ সালে ঢাকার সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তার সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে তিনি সংবাদে সহযোগী সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। এখানেই তার সাংবাদিকতা ও সাহিত্যকর্মের গৌরবময় অধ্যায় রচিত হয়। শহীদুল্লা কায়সারের উপন্যাস ‘সারেং বউ’-এ মানুষ ও তার অস্তিত্বের সংগ্রামের কথা বর্ণিত হয়েছে। তার কাম্য ছিল সুস্থ ও পরিশীলিত জীবনভিত্তিক একটি উন্নত সমাজ। তার অন্যান্য উপন্যাস হলো-সংশপ্তক, কৃষ্ণচূড়া মেঘ, তিমির বলয়, দিগন্তে ফুলের আগুন, সমুদ্র ও তৃষ্ণা, চন্দ্রভানের কন্যা, কবে পোহাবে বিভাবরী (অসমাপ্ত)। ‘রাজবন্দির রোজনামচা’ ও ‘পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ’ তার স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবৃত্তান্ত। তার রচিত উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিয়াল নির্মিত হয়েছে। শহীদুল্লা কায়সার সাহিত্যকর্মের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্বমুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার বাসভবন থেকে তিনি অপহৃত হন এবং আর ফিরে আসেননি।
