|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ছিলেন শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক। ১৯২৭ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খালিশপুর গ্রামে তার জন্ম। পিতা বজলুর রহিম চৌধুরী এবং মাতা মাহফুজা খাতুন উভয়ই ছিলেন শিক্ষা ও সাহিত্যের প্রতি বিশেষভাবে অনুরক্ত। অল্প বয়সে পিতৃবিয়োগ হওয়ায় মোফাজ্জল হায়দারের বাল্য ও কৈশোর অতিবাহিত হয় তার মাতুলের আশ্রয়ে। তার স্কুলজীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয় নোয়াখালীর আহমদিয়া হাইস্কুলে। কৃতী ছাত্র হিসাবে মোফাজ্জল হায়দারের বরাবরই খ্যাতি ছিল। তিনি জীবনের সব পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রবেশিকা এবং ১৯৪৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে ঢাকা বেতারে পাণ্ডুলিপি রচয়িতা হিসাবে। তার অধ্যাপনার সূচনা ঢাকার জগন্নাথ কলেজে; নটর ডেম কলেজেও তিনি খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ধ্বনিতত্ত্বে গবেষণার জন্য ইংল্যান্ড যান। সেখান থেকে ফিরে ১৯৭০ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। ব্যক্তিজীবনে মোফাজ্জল হায়দার ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী এবং পরিশীলিত রুচির অধিকারী। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন সবসময় প্রত্যয়নিষ্ঠ। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি প্রবল সমবেদনা থাকলেও বহু মানুষের সংসর্গ ও কোলাহল থেকে দূরে থাকতেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন সৃজনশীল ও মননশীল প্রতিভার অধিকারী। গবেষণার পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন অনেক কবিতা, গল্প ও নাটক। তবে প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনাতেই তার প্রতিভা সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়েছে। রবীন্দ্রসাহিত্য ও রবীন্দ্র প্রসঙ্গ ছিল তার অধ্যয়ন ও চিন্তাচেতনার প্রধান অংশ। এর প্রত্যক্ষ ফসল তার ‘রবি পরিক্রমা’ গ্রন্থটি। এছাড়া তিনি বেশকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার প্রাক্কালে তিনি অপহৃত হন এবং তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
