|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কমরেড মুজফ্ফর আহমদ (১৮৮৯-১৯৭৩) ছিলেন উপমহাদেশের বামপন্থি রাজনীতির এক উজ্জ্বল পথিকৃৎ। তিনি শুধু কমিউনিস্ট নেতা নন, বরং ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, শ্রমিক-কৃষক রাজনীতি এবং প্রগতিশীল চিন্তার এক নিরলস সংগঠক। তার জীবন ছিল ত্যাগ, সাধনা এবং রাজনৈতিক আদর্শের এক অনন্য সংমিশ্রণ।
তার জন্ম ১৮৮৯ সালের ৫ আগস্ট সন্দ্বীপের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছাত্রাবস্থায়ই তার মধ্যে সামাজিক অসংগতি ও ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধে। ছাত্রজীবনেই তিনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং দ্রুতই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রুশ বিপ্লবের আদর্শ তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ১৯২০ সালে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের ক্ষেত্রে মুজফ্ফর আহমদ ছিলেন প্রধান কারিগর। তিনি বিশ্বাস করতেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তি শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই পূর্ণতা পাবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করতে শুরু করেন। ফলস্বরূপ, ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে তাকে বারবার জেল খাটতে হয়েছে। বিখ্যাত ‘কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা’ এবং ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’য় তাকে দীর্ঘ মেয়াদে কারাবরণ করতে হয়।
কিন্তু দমন-পীড়ন তার আদর্শচ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বরং কারাগার থেকেই তিনি লেখালেখি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আন্দোলনকে পথনির্দেশ দিয়েছেন। ‘লাঙ্গল’, ‘গণবাণী’ প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বাম রাজনীতির বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি শক্তিশালী করে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও তার বিশেষ ভূমিকা ছিল। তার রচিত ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ গ্রন্থটি শুধু একটি আত্মজীবনী নয়, বরং উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তার নেতৃত্বেই একঝাঁক তরুণ নেতা তৈরি হয়েছিলেন যারা পরবর্তীকালে বামপন্থি রাজনীতিকে জনমানুষের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন।
কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ছিলেন সাদাসিধে জীবনযাপনে বিশ্বাসী, আপসহীন আদর্শবাদী এক মানুষ। ক্ষমতা বা ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, মানুষের মুক্তি ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নই ছিল তার রাজনীতির মূল প্রেরণা। আজকের বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের বাম আন্দোলনের ইতিহাসে তিনি এক অবিস্মরণীয় নাম-যিনি শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
