কবি আবদুল কাদির ১৯০৬ সালের ১ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জের আড়াইসিধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাঁচটি বিষয়ে লেটারসহ ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। অতঃপর তিনি বিএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯২৬ সালে কলকাতায় বিখ্যাত সওগাত পত্রিকায় সম্পাদনা বিভাগে চাকরি নেন তিনি। ১৯৩০-এ কলকাতা করপোরেশনের একটি প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৩৫ সালে কমরেড মুজাফফর আহমদের কন্যা আফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। তিনি জয়তী নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা ছাড়াও নবশক্তি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতার যুগান্তর পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৪২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৈনিক নবযুগ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সরকারের প্রচার সংস্থার বাংলা অনুবাদক পদে যোগ দেন। ১৯৪৬ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী ও অর্ধ-সাপ্তাহিক পয়গাম পত্রিকায় চাকরি করেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপত্র মাসিক মাহেনও পত্রিকায় কর্মরত থাকার পর ১৯৬৪ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রকাশনা কর্মকতা হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭০ সালের ১ জুন তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

মুসলিম সাহিত্য সমাজের (১৯২৬) নেতৃত্বে ঢাকায় যে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন সূচিত হয়, কবি আবদুল কাদির ছিলেন তার নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তা। তিনি ছিলেন সাহিত্য সমাজের মুখপত্র বার্ষিক শিখা (১৯২৭) পত্রিকার প্রকাশক ও লেখক। প্রকাশিত কাব্য দিলরুবা (১৯৩৩) ও উত্তর বসন্ত (১৯৬৭)। তার অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ছন্দ সমীক্ষণ’ (১৯৭৯), যেখানে তিনি বাংলা ছন্দ সম্পর্কে মৌলিক বক্তব্য রেখেছেন। সাহিত্য সম্পাদক হিসাবেও তিনি পরিশ্রম ও একনিষ্ঠতার ছাপ রেখেছেন। তিনি সম্পাদনা করেছেন বিখ্যাত কাব্য সংকলন কাব্য মালঞ্চ, মুসলিম সাহিত্যের সেরা গল্প, নজরুল রচনাবলি (প্রথম খণ্ড-পঞ্চম খণ্ড), রোকেয়া রচনাবলি, শিরাজী রচনাবলি, লুৎফর রহমান রচনাবলি, ইয়াকুব আলী চৌধুরী রচনাবলি, আবুল হুসেন রচনাবলি, কাব্যবীথি ইত্যাদি। সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, মুক্তধারা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।