Logo
Logo
×

স্মরণীয়-বরণীয়

আবদুল হক

Icon

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আবদুল হক ছিলেন বাম রাজনীতিক এবং বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। তিনি ১৯২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর যশোর জেলার সদর থানার খড়কি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র ফেডারেশনের বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৩৯ সালে আবদুল হক কলকাতায় হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। পার্টির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত থাকায় তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ফাইনাল পরীক্ষার আগেই তিনি পার্টির নির্দেশে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনে যুক্ত হন। হাটবাজারের টোল আদায় বন্ধ আন্দোলন (১৯৩৯-৪০), দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ আন্দোলন ও তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৩-৪৪) সংগঠনে তিনি বনগাঁ ও মাগুরায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার দেশের কমিউনিস্টদের ওপর দমনপীড়ন শুরু করে। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে বহু কমিউনিস্ট নেতাকর্মীর সঙ্গে তিনিও গ্রেফতার হন। ১৯৫০ সালে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে অনশন ধর্মঘটরত বিপ্লবীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে তিনি মারাত্মক আহত হন। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি ১৯৫৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হলে তিনি পিকিংপন্থি অংশে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর তিনি তার নেতৃত্বাধীন দলের অংশের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরও তার পার্টির নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৭৮ সালে এ পার্টির নতুন নামকরণ হয় বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আবদুল হক পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল ছিলেন।

প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আবদুল হক সম্পর্কে লেখক আহমদ ছফা তার এক প্রবন্ধে বলেছেন, “কিছুকাল আগে প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আবদুল হক ... একটি নাতিক্ষুদ্র পুস্তিকা লিখেছিলেন। পুরো ষাটের দশক, এমনকী সত্তর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই পুস্তিকাটি বামপন্থী রাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধিজীবীদের কিছুটা প্রভাবিত করেছিল। কমরেড আবদুল হক চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড মাও সে তুং, চীনাসমাজের যে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাটি দাঁড় করিয়েছিলেন সেই লাইন অনুসরণ করে এই ব্যাখ্যাটি দাঁড় করিয়েছিলেন। র‌্যাডিক্যাল অর্থনীতিবিদ বলে খ্যাত ড. আবু মাহমুদের মতো মানুষও আবদুল হকের ব্যাখ্যাটি সঠিক প্রমাণিত করে একাধিক রচনা প্রকাশ করেছেন। আমার কাছে এই ব্যাখ্যাগুলো হেঁয়ালির মতো মনে হচ্ছিল। অন্যদিকে মানবেন্দ্রনাথ রায় ‘ইন্ডিয়া ইন টানজিশন’ গ্রন্থে যে পদ্ধতিতে ভারতীয় সমাজের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছিলেন সেটা আমার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু আমি সামান্য মানুষ। এই সমস্ত বিষয়ে কোনো মতামত প্রদান করা কিংবা মতামত সত্যি বলে মেনে নেয়া কোনোটাই সম্ভব ছিল না।”

১৯৯৫ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম