Logo
Logo
×

স্মরণীয়-বরণীয়

আবুল মনসুর আহমদ

Icon

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আবুল মনসুর আহমদ একাধারে ছিলেন সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সাংবাদিক। তিনি ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রহিম ফরাজী, মাতার নাম মীর জাহান খাতুন। আবুল মনসুর আহমদ ১৯১৭ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক পাশ করেন। ওই সময়টা ছিল খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের। তিনি ৯ বছর ময়মনসিংহে আইন চর্চা করেন। তারপর কলকাতায় পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে কাজ শুরু করেন।

গোঁড়া মোহাম্মদী পরিবারের সন্তান ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। লাল তুর্কি টুপি মাথায় মোহাম্মদীর পক্ষে তর্কেও যেতেন। ঘটনাক্রমে একদিন তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের হেড মৌলভী আলী নেওয়াজ ও শিক্ষক মৌলভী শেখ আবদুল মজিদের সংস্পর্শে আসেন। তাদের সাহচর্যে আবুল মনসুর প্রথম উদারতার পাঠ গ্রহণ করেন। তার এই উদারতার প্রকাশ ঘটে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি। ১৯১৮-১৯ সাল থেকে তিনি হিন্দু-মুসলিম সমাজের সব কুসংস্কারের সরাসরি বিরোধিতা শুরু করেন।

কর্মজীবনে আবুল মনসুর আহমদ সাংবাদিক হিসাবে বিভিন্ন সংবাদপত্রে কাজ করেছেন, যেমন-ইত্তেহাদ, সুলতান, মোহাম্মদী, নাভায়ু। ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদের সম্পাদক হিসাবে এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি। ইত্তেহাদের সম্পাদক হিসাবে তিনি ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন।

তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর তিনি বাংলার মুসলিম লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৫ সালে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। পূর্ব বাংলার শিল্পায়নে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের (পরবর্তীকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠাতা-নেতা ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালে তিনি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আবুল মনসুর আহমদ একজন শক্তিমান লেখক ছিলেন। তিনি ব্যঙ্গাত্মক রচনায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ‘আয়না’ ও ‘ফুড কনফারেন্স’ গল্পগ্রন্থে তিনি সমাজের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা, ভণ্ডামিসহ নানা কুসংস্কারকে ব্যঙ্গ করেছেন। ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ ও ‘আত্মকথা’ তার বিখ্যাত দুটি আত্মজীবনীমূলক রচনা। তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-‘গালিভারের সফরনামা’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘জীবনক্ষুধা’, ‘আবে হায়াত’, ‘হুযুর কেবলা’, ‘বাংলাদেশের কালচার’, ‘আসমানী পর্দা’ ইত্যাদি।

সাহিত্য চর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য তাকে ১৯৭৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০) এবং নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন।

আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম