|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভাস্কর শামীম সিকদার ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ, স্টিল, গ্লাস ফাইবার ইত্যাদি মাধ্যমে কাজ করেছেন। তার বড় ভাই ছিলেন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির প্রধান নেতা সিরাজ সিকদার, যিনি ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি তৎকালীন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন।
শামীম সিকদার ১৯৮০ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব লাভ করেন। সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পান ১৯৯৩ সালে। এরপর ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে তিনি ইংল্যান্ড চলে যান।
শামীম সিকদার ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তার সহকারী ছিলেন শিল্পী হিমাংশু রায়। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড এলাকায় এক পাক ঘুরে এলেই চোখে পড়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য চত্বর। আকারে ছোট, মাঝারি ও মোটামুটি বিশাল সব ভাস্কর্যে পরিপূর্ণ এ স্থানটি। মূলত ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ-বাংলাদেশের ইতিহাসের এসব তাৎপর্যপূর্ণ অংশ থেকে বেছে আনা ব্যক্তিত্বদের ভাস্কর্যই এ চত্বরের মূল আকর্ষণ। এই ভাস্কর্যগুলো শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয়, দৃষ্টি আকৃষ্ট করে অন্যান্য পথচারীকেও। তিনি ২০০০ সালে এসব ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তার অপর একটি ভাস্কর্য ‘গলিং ফোর্স’ ১৯৮২ সালে নির্মিত হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ‘একটি মধুর স্বপ্ন’ ভাস্কর্যটি চারুকলা ইনস্টিটিউটে রাখা আছে, যা ১৯৮৩ সালে নির্মিত। ‘আশা ও উদ্দীপনার একটি পাখি’ নামের ভাস্কর্যটি ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত মাদার তেরেসা চ্যারিটি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে ১৯৯৪ সালে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়ও তার নির্মিত ভাস্কর্য আছে।
দেশে-বিদেশে শামীম সিকদারের শিল্পকর্মের অনেক প্রদর্শনী হয়েছে। তার কয়েকটি প্রকাশিত গ্রন্থও রয়েছে। এগুলো হলো-ইনার ট্রুথ অব স্কাল্পচার : আ বুক অন স্কাল্পচার, স্কাল্পচার কামিং ফ্রম হেভেন, কনটেম্পোরারি আর্ট সিরিজ অব বাংলাদেশ।
তিনি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস পুরস্কার অর্জন করেন ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৩ সালে অর্জন করেন সিলভার জুবিলি অ্যাওয়ার্ড অব ফাইন আর্ট। ১৯৭৪ সালে ভাস্কর্যের ওপর প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার পান। ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
শামীম সিকদার ২০২৩ সালের ২১ মার্চ ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
