|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিখ্যাত গায়ক তালাত মাহমুদ ১৯২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের লখনৌয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মঞ্জুর মাহমুদ। শৈশবেই তিনি সংগীতের প্রতি মনোনিবেশ করেন। সারা রাত জেগে তিনি নিবিষ্ট চিত্তে তৎকালীন বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় গায়কদের গান শুনতেন। তিনি ছিলেন এমন একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান, যেখানে সংগীতচর্চাকে উৎসাহিত করা হতো না। চলচ্চিত্রে কাজ করবেন, নাকি বাড়িতে অবস্থান করবেন, এ দুইয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার বিষয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। পিতার আপত্তি সত্ত্বেও তিনি চলচ্চিত্রকেই বেছে নেন। তবে চলচ্চিত্রশিল্পে সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করলে এক যুগ পর তার পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়। তালাত মাহমুদকে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা অ-শাস্ত্রীয় ও অর্ধ-শাস্ত্রীয় গায়ক বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তার ছিল সহজাত প্রতিভা, অনুপম সৌন্দর্যচেতনা ও মাধুর্য। প্লে-ব্যাক কণ্ঠশিল্পী হলেও তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন, যদিও এক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাননি।
১৯৩০-এর দশকের শেষদিকে তিনি লখনৌর মরিস সংগীত মহাবিদ্যালয়ে পণ্ডিত এসসিআর ভাটের কাছে ধ্রুপদী সংগীতে হাতেখড়ি নেন। ১৯৩৯ সালে গজল গায়ক হিসাবে সংগীতজীবন শুরু করেন। মাত্র ষোল বছর বয়সে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গজল গান। তার কণ্ঠস্বর অন্য গায়কদের চেয়ে স্বতন্ত্র প্রকৃতির ছিল। তার এই স্বাতন্ত্র্য লক্ষ করে এইচএমভি গ্রুপ ১৯৪১ সালে গানের ডিস্ক বের করার প্রস্তাব দেয়, যাতে ছিল ‘সব দিন সামান নেহি থা’, ‘বান জাঁও গিয়া কিয়া সে কিয়া মেঁ’, ‘ইস্কা তো কুচ ধিয়ান নেহিঁ থা’র মতো গান।
গজল গায়ক হিসাবে তার খ্যাতি লখনৌ ছাড়িয়ে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছে, যেটি তার গন্তব্য হয়ে যায়। তখন কলকাতায় ছিলেন বিখ্যাত গজল গায়ক ও সংগীতজ্ঞ উস্তাদ বরকত আলি খান, কে এল সাইগল এবং এম এ রউফের মতো ব্যক্তি। ১৯৪৪ সালে তালাত মাহমুদের গানের ডিস্ক সর্বাধিক বিক্রীতের তালিকায় জায়গা করে নেয়। তিনি অনেক বাংলা গানও পরিবেশন করেছেন। তার গাওয়া কিছু বাংলা গান ছিল সুপার হিট এবং এখনো বেতারে বাজে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, দুটি পাখি দুটি তীরে, এই রিমঝিমঝিম বরষা, চাঁদের এত আলো, এ যদি আকাশ হয় এবং তুমি সুন্দর যদি নাহি হও।
তালাত মাহমুদ ১৯৯৮ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন।
