|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিখ্যাত গজল গায়ক মেহেদী হাসান খান ১৯২৭ সালের ১৮ জুলাই অবিভক্ত ভারতের রাজস্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওস্তাদ আজিম খান একজন গায়ক ছিলেন। চাচা ওস্তাদ ইসমাইল খান ও পিতা আজিম খানের কাছ থেকে তার সংগীতে হাতেখড়ি হয়। তারা উভয়েই ধ্রুপদী সংগীতে দক্ষ ছিলেন। মেহেদী হাসান শৈশব থেকেই সংগীত পরিবেশন করতেন।
ভারত বিভাজনের পর ২০ বছর বয়সি মেহেদী হাসান এবং তার পরিবার পাকিস্তানে অভিবাসিত হন। সেখানে আসার পর তাকে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগতে হয়। চিচাওয়ান্তি এলাকার একটি সাইকেলের দোকানে কাজ করতে থাকেন তিনি। সেখানে গাড়ি এবং ডিজেল ট্রাক্টর মেকানিক হিসাবেও কাজ করেন। এ সময় আর্থিক অসচ্ছলতা সত্ত্বেও সংগীতচর্চা করতে থাকেন। প্রতিদিন রুটিনমাফিক গানচর্চা অব্যাহত রাখেন। ১৯৫২ সালে মেহেদী হাসান প্রথমবারের মতো রেডিও পাকিস্তানে গান করার সুযোগ পান। প্রাথমিকভাবে সেখানে তিনি ঠুমরি গায়ক ছিলেন। চাচা ইসমাইল খান তাকে সংগীত পরিচালক হিসাবে গড়ে তুলতে সর্বতোভাবে সহায়তা করেন। এতে তিনি সংগীতবোদ্ধাদের মন জয় করেন। উর্দু ভাষায় রচিত কবিতায় তার আগ্রহ ছিল বেশি। পরীক্ষামূলকভাবে খণ্ডকালীন ভিত্তিতে তিনি গজল গাইতে শুরু করেন। রেডিও কর্মকর্তা জেড এ বুখারী এবং রফিক আনোয়ার তার গজলের অনুরক্ত হন। তাদের আন্তরিক অনুপ্রেরণায় মেহেদী হাসান পাকিস্তান ও ভারতের সংগীত ঘরানায় অন্যতম জনপ্রিয় গজল গায়কে পরিণত হন। বস্তুত রেডিও পাকিস্তানে সুযোগ পাওয়ার পরই তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তার গজল লাখ লাখ মানুষের মন জয় করে। পাকিস্তানের চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে তিনি তমঘা-ই-ইমতিয়াজ, প্রাইড অফ পারফরম্যান্স এবং হিলাল-ই-ইমতিয়াজ এবং নেপাল সরকারের কাছ থেকে গোর্খা দক্ষিণা বাহু উপাধিতে ভূষিত হন। তার কয়েকটি জনপ্রিয় গজল হলো-আব কি বিচরে; ম্যায় হোস ম্যায় থা তো ফির; জিন্দেগি ম্যায় তো সাভি। বাংলা ভাষায় গেয়েছেন-ঢাকো যত না নয়ন দু’হাতে; হারানো দিনের কথা; তুমি যে আমার। ১৯৮০-এর দশকের শেষার্ধে মেহেদী হাসান বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হতে থাকেন। ফলে একান্তই বাধ্য হয়ে সংগীতজীবন ত্যাগ করেন। ২০১২ সালের ১৩ জুন তিনি করাচিতে মৃত্যুবরণ করেন।
