কাবরেরাকে নিয়ে কমিটিতেই মতবিরোধ, বাফুফে কী ভাবছে?
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
হাভিয়ের কাবরেরা/ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘যদি আমি ভুল না করে থাকি, তাহলে আমার চুক্তি ৩০ এপ্রিল ২০২৬ পর্যন্ত আছে। তাই না?’ – কথাগুলো কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেছিলেন, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ঠিক আগে সংবাদ সম্মেলনে। তিনি তার জায়গা নিয়ে নিশ্চিন্তই ছিলেন তখন পর্যন্ত। তবে স্প্যানিশ কোচের কাছে এ ধরনের প্রশ্ন ছুটে যাওয়ার মানেই হচ্ছে, তাকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে বেশ, আর তা বেশ নেতিবাচকই বটে।
কোচ কাবরেরার কৌশল আর দলগঠন নিয়ে আগে থেকেই সমালোচনা ছিল। সেটা শেষ কয়েক মাসে বাফুফের ভেতর থেকেও আসছে। বর্তমান কমিটির অনেকেই তার কাজে অসন্তুষ্ট। আর সে থলের বেড়াল বেরিয়ে এল গতকাল মহাখালীর রাওয়া কমপ্লেক্সে বাফুফে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে। সেখানে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয় দল কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন মঞ্চে বসেই কাবরেরার পদত্যাগ দাবি করে বসেন।
এমন কিছুর দেখা হরহামেশাই পাবেন না আপনি। বাফুফের ইতিহাসে তো নয়ই। বাফুফের কোনো সদস্য এভাবে ভরা মজলিশে দলের কোচকে শূলে চড়াচ্ছেন, তার পদত্যাগ দাবি করছেন, এমন কিছু ঘটেনি কখনোই।
তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় দল কমিটির সদস্য। সে হিসেবে আমার একটাই এজেন্ডা। জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার পদত্যাগ চাই। দেশের ১৮ কোটি মানুষের চাওয়া এটি। আমি ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে চাই।’
এরপর তিনি সংবাদ মাধ্যমে কোনো রাখঢাক না রেখেই সমালোচনার কাঁটায় বিঁধেছেন কাবরেরাকে। প্রশ্ন তুলেছেন তার যোগ্যতা নিয়েও। একট পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘কাবরেরা তো খেলাই বোঝে না। হামজার মতো খেলোয়াড়ের কোচ হওয়ার যোগ্যতা তো অনেক পরে, বড়জোর বাংলাদেশের থার্ড ডিভিশন বা পাইওনিয়ারে কোচিং করানোর যোগ্যতা আছে তার (কাবরেরা)।’
গেল উইন্ডোর আগে কাবরেরা দেশে ছিলেন খুব কম সময়। মার্চ থেকে শুরু করে গেল উইন্ডোর শেষ পর্যন্ত সব মিলিয়ে এক মাসও তিনি ছিলেন না বাংলাদেশে। এমনকি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শেষ পর্যায়ের খেলা যখন চলছে, তখনও তিনি ছিলেন ছুটিতে।
যদিও তিনি জানিয়েছিলেন লিগের খেলা তিনি দেখেছেন টিভিতে, তবে লিগের পারফর্ম্যান্সের ছাপ ছিল না তার ঘোষিত স্কোয়াডে। ‘মুখস্ত’ দল নির্বাচনের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ আগে থেকেই ছিল। তা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সিঙ্গাপুর ম্যাচে। প্রথাগত স্ট্রাইকার খেলাননি তিনি, জামাল ভূঁইয়াকে না খেলানো, গোলদাতা রাকিব হোসেনকে শেষ দিকে উইংব্যাক পজিশনে পাঠিয়ে দেওয়া… তার কৌশল সমালোচনার মুখে পড়েছে বেশ। তাতে বাফুফের ভেতর তাকে নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে ভালোভাবেই। তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে।
তবে এখনই কোচকে বিদায়ের ভাবনা নেই বাফুফের। ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্তা শাহীনের মন্তব্যকে ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, বিষয়টা আনুষ্ঠানিক নয় মোটেও।
কোচের চুক্তিতে আরও ১১ মাসের মতো সময় বাকি। তাকে বিদায় করতে হলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে গচ্চা দিতে হবে প্রায় ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অঙ্কটা ছোট নয় আদৌ। সঙ্গে নতুন কোচ খোঁজার ঝক্কিও আছে। তবে সেসব ভাবনা আসবে কাবরেরাকে যদি যোগ্য মনে না করা হয় তখন। সেসব ভাবনা আসবে মূল্যায়নের ফলাফল নেতিবাচক হলে, ইঙ্গিত দিয়েছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের স্ট্যান্ডার্ড একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। জাতীয় দল কমিটি অ্যাসেসমেন্ট ও রিভিউ করবে। অ্যাসেসমেন্ট হওয়ার পর (কাবরেরার থাকা না থাকা বিষয়ে) আপনাদের প্রশ্ন নেওয়া যাবে এবং উত্তরও দেওয়া যাবে।’ সব মিলিয়ে কাবরেরার বিদায়ের সম্ভাবনা নেই এখনই।



