বাফুফের কাবরেরা প্রীতির সাতকাহন, নেপথ্যে যত ষড়যন্ত্র
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা/ছবি: বাফুফে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে যোগ দেন স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা। আর এই প্রতিবেদন যখন লিখছি, তখন সময় ২৩ জুন ২০২৫। মাঝে পেরিয়েছে সাড়ে তিন বছর। বদলে গেছে অনেক কিছু। ছাত্র-জনতার তীব্র জনরোষে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক বাফুফের চেয়ার আগলে রাখা কাজী সালাউদ্দিন সরে গেছেন। বাংলাদেশের ফুটবলে চলছে এখন তাবিথ আউয়ালযুগ। এসেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা বাংলাদেশের গৌরব হামজা চৌধুরীসহ আরও বেশ কিছু নতুন মুখ।
কিন্তু পালটায়নি সেই কারবেরা। এখনো তার সেই মান্ধাতা আমলের টেকনিকেই চলছে দেশের ফুটবল। আর ফলাফল সে তো আপনার চোখের সামনেই। ইউরোপ-আমেরিকা দাপিয়ে বেড়ানো ফুটবলারকেও খাবি খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশের জয় দেখতে যাওয়া জাতীয় স্টেডিয়াম দখল করা সমর্থকদের মাঠ ছাড়তে হচ্ছে মুখ ভোঁতা করে। আর এমনই যদি চলতে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই মুখ ভোঁতা করে মাঠ ছাড়তে খুব বেশি দিন স্টেডিয়ামে যাবেন না ফুটবলপ্রেমী দর্শকরা। ফুটবলে লাগা এই গণজোয়ার শেষ পর্যন্ত চলে যাবে অকাল গর্ভে।
বাফুফের কর্তারা কী ভাববেন এ ব্যাপারে। নাকি কাবরেরায় মুগ্ধ হয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন। অট্টহাসি দিয়ে বলবেন—জয় কাবরেরার জয়। লাখো সমর্থকের আবেগকে গলাটিপে ধরে সুর তুলবেন— তোরা যে যাই বলিস ভাই, আমার কাবরেরাকে চাই...।
বাফুফের কর্তারা কী ভাববেন এ ব্যাপারে। নাকি কাবরেরায় মুগ্ধ হয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন। অট্টহাসি দিয়ে বলবেন—জয় কাবরেরার জয়। লাখো সমর্থকের আবেগকে গলাটিপে ধরে সুর তুলবেন— তোরা যে যাই বলিস ভাই, আমার কাবরেরাকে চাই...। বাফুফের কাবরেরা প্রীতির সাতকাহন ও এর নেপথ্যের কারণই জানাব এই প্রতিবেদনে।
যদি বলি, বাফুফের সম্পদ কার—কর্মকর্তাদের নাকি জনগণের? উত্তরটা হলো— স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের; কর্মকর্তারা শুধু সেবক মাত্র। তাই বাফুফের ফুটবল নিয়ে কুকর্ম-অপকর্ম এবং ভালো কর্ম—সব কর্মের জবাবদিহি করতে হবে জনগণের কাছে। এ মুহূর্তে ফুটবল নিয়ে চলছে অনেক নাটক। আর এ নাটকের সমাপ্তি চায় জনগণ।
যদিও বাংলাদেশ ফুটবলে এখন চলছে স্বর্ণালি যুগ। আর গত ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সেই স্বর্ণালি যাত্রা শুরু হয়েছে। ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরীকে জাতীয় ফুটবল দলে ভিড়িয়ে সেই যাত্রা শুরু হয়েছে। যদিও এর আগে এ যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়ার দলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে। তবে এখন চলছে দেশব্যাপী ফুটবলের গণজোয়ার। ইতোমধ্যে হামজা ছাড়াও দলে যুক্ত হয়েছেন ফাহামেদুল ও শমিত সোম। এ ছাড়া দলে যোগদানের অপেক্ষায় কিউবা মিচেল। আরও অনেকেই আসছেন এবং আসবেন। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে ফুটবলে জয়জয়কার অবস্থা।

এর মধ্যেই এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। তবে এর ফলাফলের ভিত্তিতেই শুরু হয়েছে দেশব্যাপী ফুটবলে সমালোচনার ঝড়—কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরাকে হটাও। কোচের অগোছালো সিদ্ধান্তে আমাদের এ পরাজয়। সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর মাঠ থেকে দর্শকরা বের হওয়ার সময়ই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। এমনকি সাবেক ফুটবলার এমিলি, আলফাজ,
সাব্বিররা বিতর্কিত ভুল সিদ্ধান্ত আর বোঝাপড়ার অভাবে ম্যাচ পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলেও জানিয়েছেন।
শুধু তাই নয়; সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর বাফুফে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয় দল কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন মঞ্চে বসেই কাবরেরার পদত্যাগ দাবি করে বসেন। প্রশ্ন তুলেছেন তার যোগ্যতা নিয়েও। যদিও কোচ কাবরেরার কৌশল আর দলগঠন নিয়ে বাফুফেতে আগে থেকেই সমালোচনা চলছিল। শেষ কয়েক মাসে বাফুফের ভেতর থেকেও গুঞ্জন আসছিল। কিন্তু ভারতের সঙ্গে ড্র আর সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ম্যাচ হারার পর বর্তমান কমিটির অনেকেই তার কাজে অসন্তুষ্ট। এ বিষয়ে কেউ কথা না বললেও সাখাওয়াত হোসেন কোচের পদত্যাগ দাবি জানিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, যা বাফুফের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
দেশের ১৮ কোটি মানুষের চাওয়া এটি। আমি ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে চাই। কাবরেরা তো খেলাই বোঝেন না। হামজার মতো খেলোয়াড়ের কোচ হওয়ার যোগ্যতা তো অনেক পরের।
বাফুফের কোনো সদস্য এভাবে ভরা মজলিশে দলের কোচকে শূলে চড়াচ্ছেন,
তার পদত্যাগ দাবি করেছেন— এর আগে এমন ঘটনা কখনই ঘটেনি। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমার এজেন্ডা অডিট নয়; আমার একমাত্র এজেন্ডা জাতীয় দল। এই কমিটির একজন সদস্য হিসাবে স্পষ্ট করে বলছি— আমি হ্যাভিয়ের কাবরেরার পদত্যাগ চাই।
তিনি আরও বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের চাওয়া এটি। আমি ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে চাই। কাবরেরা তো খেলাই বোঝেন না। হামজার মতো খেলোয়াড়ের কোচ হওয়ার যোগ্যতা তো অনেক পরের। বড়জোর বাংলাদেশের থার্ড ডিভিশন কিংবা পাইওনিয়ারে কোচিং করানোর যোগ্যতা আছে।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিঙ্গাপুর ম্যাচে প্রথাগত স্ট্রাইকার খেলাননি তিনি। জামাল ভূঁইয়াকে না খেলানো, গোলদাতা রাকিব হোসেনকে শেষ দিকে উইংব্যাক পজিশনে পাঠিয়ে দেওয়াও ছিল তার ভুল সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে জাতীয় দল কমিটির এ সদস্য কোচ হ্যাভিয়ের
কাবরেরার
পদত্যাগ
চাওয়ায়
বাফুফে
কর্মকর্তাদের
মধ্যে
ক্ষোভ
ও
অসন্তোষ
বিরাজ
করছে।
দায়িত্বশীল
জায়গা
থেকে
কোচের
পদত্যাগ
চাওয়ায়
সাখাওয়াত
হোসেনের
বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা
নেওয়া
হবে
বলেও
জানিয়েছেন
নাম
প্রকাশে
অনিচ্ছুক
বাফুফের
এক
ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তা।
তার
এমন
মন্তব্যে
নির্বাহী
কমিটির
সবাই
হতবাক।
সেই কর্মকর্তা
আরও
বলেন,
দায়িত্বশীল
একটা
জায়গা
থেকে
সংবাদ
সম্মেলনে
এভাবে
ক্যাবরেরার
পদত্যাগ
চাইতে
পারেন
না
তিনি।
কোচের
প্রতি
আমরা
প্রায়
সবাই
অসন্তুষ্ট।
তাই
বলে
ওপেন
মন্তব্য
করাটা
তার
সমীচীন
হয়নি।
কোচের
ব্যাপারে
কিছু
বলতে
হলে
সেটি
জাতীয়
দল
ব্যবস্থাপনা
কমিটির
চেয়ারম্যান
ছিলেন,
তিনি
বলতেন।
একজন
সদস্য
হিসেবে
তিনি
কোচ
নিয়ে
কথা
বলতে
পারেন
না।
তার
বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা
নেওয়া
হবে
বলেও
জানান
সেই
কর্মকর্তা।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার প্রশ্ন— নাম প্রকাশ না করে বাফুফের যে কর্মকর্তা এমন কথা বলেছেন, উনি কি বাফুফের সম্পদ লুটপাট করার জন্য সেখানে বসে আছেন, নাকি জনগণের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ফুটবলের উন্নয়নে ব্যস্ত থাকবেন?

জাতীয় দল কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন তার যোগ্য দায়িত্ব পালন করে যোগ্য কথা বলেছেন। তিনি ফুটবলপ্রেমীর মনের কথা বলেছেন— কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার পদত্যাগ চাই। জনগণের কথায় চলবে ফুটবল, বাফুফে শুধু প্রতিনিধিত্ব করবে। তারা শুধু সেবা দিয়ে যাবেন ফুটবলের। কারণ তারা জনগণের সেবক মাত্র।
আর এতেই প্রমাণ হয়, যে আশা আর উদ্দীপনা নিয়ে এ ফুটবলের স্বর্ণালি যাত্রা, তা যেন এখনো ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আটকে আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত ভারতেই অবস্থান করছেন স্বৈরাচার আওয়ামী নেত্রী। আর দেশের নেতৃত্ব পরিবর্তনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেও এসেছে সেই পরিবর্তন। বাফুফের নির্বাচিত সভাপতি তাবিথ আউয়াল। এতে ফুটবলপ্রেমীরাও ভীষণ খুশি। এখনো সেই খুশির আমেজ ধরে রেখেছেন সভাপতিসহ একাংশের কর্মকর্তারা। কিন্তু এর মধ্যেই দেখা গেল দোসরদের নিখুঁত ষড়যন্ত্র।
এতেই বোঝা যায়, দোসরমুক্ত হয়নি ফুটবল ফেডারেশন। সভাপতি তাবিথ আউয়ালের এ অগ্রযাত্রা পদে পদে বাধার সম্মুখীন। এর প্রমাণ মেলে ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচে ভুলভাল সিদ্ধান্তে গণজোয়ার নিয়ে আসা ফুটবলের পরাজয়।
তাই বাফুফের সভাপতির কাছে আমার একান্ত দাবি— শুধু কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা নয়; পুরো কোচিং প্যানেলকে বরখাস্ত করে হংকং ম্যাচের আগে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা হোক। যদি আপনি এশিয়ান বাছাইয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে আর কোনো ম্যাচে পরাজয় বরণ নয়; আর একটি ম্যাচে পরাজয় বরণ করার অর্থ হচ্ছে— আপনার স্বপ্ন থেকে ছিটকে পড়া।
যে স্বপ্ন নিয়ে আপনি একের পর এক চমক দেখিয়ে প্রবাসী ফুটবলার দলে ভিড়িয়ে যাচ্ছেন, তা শুধু কাগজ-কলমেই শক্তিশালী হচ্ছে, বাস্তবে নয়। কারণ...
(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল)


-680f15e2130ea.jpg)