শখের ‘বই’ পোকার খাদ্য, জেনে নিন কীভাবে যত্নে রাখবেন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১১:১৫ এএম
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আকারে খুবই ছোট। কোনোটিকে আবার খালি চোখে দেখাও যায় না। কিন্তু তাদের কাজের পরিধি দেখলে মনে হয়, কান-মাথা ভোঁ ভোঁ করতেই পারে। পাতা কেটে ও খেয়ে নষ্ট করেছে পোকা। অনেক পোকা চোখেও পড়ে না, অথচ বই নষ্ট করে অগোচরে। গ্রন্থভান্ডার নষ্ট করার পক্ষে তাদের অতিক্ষুদ্র আকৃতিই যথেষ্ট। এরা হলো— বইপোকা।
অভিধানে ‘বইপোকা’র দুই অর্থ। এক. যে পতঙ্গ বা পোকামাকড় বইয়ের বাঁধানো বোর্ড, মলাট ও পাতা খেয়ে ফাঁক করে দেয়। দুই. ‘বইপোকা’ হলো যারা বইপ্রেমী। শখ করে কেনা বই, দুষ্প্রাপ্য নথি যদি কেটে ও নষ্ট করে খেয়ে ফাঁক করে দেয় পোকারা, তা হলে কার না মাথাগরম হয়?
আরা যারা এ কাজটি করে, তারা সংখ্যা বা প্রজাতি— কোনোটিতেই কম নয়। তাদের বই নষ্ট করার ধরনও বিচিত্র। উইপোকা থেকে ছোট আরশোলা, বুক লাইস, বিট্ল— একেক জনের বই ও পাতা নষ্ট করার ধরন-ধারণ এক এক রকম।
তাদের শায়েস্তা করার পন্থা আছে ঠিকই, তবে তার আগে জানা দরকার, জ্ঞানভান্ডারের এমন ক্ষতি করে চলেছে কারা? কী তাদের উদ্দেশ্য?
উইপোকা
বইয়ের জন্য খুব বিপজ্জনক উইকোপা। কাঠের তাক, দরজা কিংবা আলমারিতে এরা হানা দেয়। এরপর ধীরে ধীরে সেই বইয়ে ঢুকে পড়ে। পাতা খেয়ে ফেলে। উইপোকার উৎপাত শুরু হলে বই বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।
আরশোলা: পুরোনো বই ঘাঁটলেই মাঝেমধ্যে ভেতর থেকে খুদে আরশোলার আনাগোনা চোখে পড়ে। বইয়ের মধ্যে ডিমও দেখা যায় আরশোলার। বইয়ের ভান্ডার নষ্ট করে, এমন পোকার সংখ্যা নেহাত কম নয়। বড় পোকা, তাদের লার্ভারা পাতা নষ্ট করে দিনের পর দিন। কিছু পোকা বইয়ের খাঁজে ও বাঁধানো মলাটের পাশে ডিম পাড়ে। তা ফুটে লার্ভা বেরোয়। এ ধরনের পোকার অসংখ্য প্রজাতি ও ধরন আছে।
পিঁপড়া
বই নষ্ট করার মতো কাজটি করে থাকে পিঁপড়াও। তবে যে ধরনের পিঁপড়া সচরাচর আমরা দেখি, সেগুলো নয়। বিশেষ ধরনের কিছু পিঁপড়া আছে, যাদের পাতা খেয়ে ফেলার ধরন কিছুটা উইপোকার মতোই। এ তালিকায় পড়ে ‘ব্ল্যাক কার্পেন্টার অ্যান্ট’, ‘হারকিউলিস অ্যান্ট’।
বুকলাইস
নামে লাইস হলেও এরা অবশ্য চুলে হওয়া উকুন নয়। বইয়ের মলাট বা পাতায় যে ছত্রাকের আক্রমণ হয়, তারই লোভে তাদের আনাগোনা। আকারে ১ মিলিমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্র, শরীর নরম। আসলে ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে জায়গাই এদের পছন্দ। আলো-হাওয়া আসে না, ভিজে ভাব বেশি— এমন আবহে থাকলে বইয়ে অনেক ছত্রাক হয়, যা সব সময় খালি চোখে দেখা যায় না। তবে তারই সন্ধানে জুটে যায় বুকলাইসের দল। বইয়ের বাঁধানো মলাট, আঠা এসব এদের পছন্দের খাবার।
বই নিরাপদে রাখতে যে কাজ করবেন—
ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই থাকতে পছন্দ করে কিছু কিছু পোকামাকড়। বইয়ের মোল্ড বা ছত্রাকের লোভেই আসে তারা। তাই বইগুলো যদি মাঝেমধ্যে রোদে রাখা যায়, পাতা পরিষ্কার করা যায় এবং মাঝেমধ্যে আলো-হাওয়া লাগে, তা হলে এই সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। বাড়িতে গ্রন্থাগার বা প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ থাকলে মাঝেমধ্যেই সেগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ছত্রাক পরিষ্কারের জন্য বোরক্স পাউডার ও বাজারচলতি রাসায়নিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর আর্দ্র পরিবেশ বা বাড়ির দেয়ালে পানি বসতে থাকলে সমস্যা বাড়ে। তা ছাড়া বদ্ধ ঘরেও এ ধরনের পোকামাকড়ের উৎপাত বাড়ে। তাই ঘরে যথেষ্ট আলো-হাওয়ার চলাচল প্রয়োজন। সমস্যা দূর করতে ডি-হিউমিডিফায়ার বা এসি লাগানো যেতে পারে। এতে কিছুটা হলেও স্যাঁতসেঁতে আবহ থেকে মুক্তি মিলবে।
আর ঘরে প্রচুর পরিমাণে বই থাকলে পোকার আক্রমণ বেশি হয়। পেশাদার কারও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। রাসায়নিকের সাহায্যে পোকা দূর করাই হবে উপায়। তবে এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের বিষয়টিও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। বইয়ের রাসায়নিকের অংশবিশেষ লেগে থাকলে এবং হাতের মাধ্যমে তা চোখেমুখে গেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
