সাপে কাটলে কী করবেন? কোন ভুলগুলো একদমই করা উচিত নয়?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বর্ষা এলেই বাড়ে সাপের উপদ্রব। ভারী বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও বন্যার কারণে শুধু গ্রাম নয়, শহরাঞ্চলেও সাপের দেখা মিলতে থাকে। বিশেষ করে বর্ষায় যারা পাহাড়ি এলাকা বা বনে ঘুরতে যান, তাদেরও সাপের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। গত কয়েক বছরে দেশে সাপে কাটার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, মানুষজন সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেক সময়ই ভুল পদক্ষেপ নেয়, যা আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এই কারণে সাপে কামড়ালে কী করবেন, এবং কোন কাজগুলো একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে—তা জানা অত্যন্ত জরুরি।
সাপে কাটলে যা করবেন
সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গেই সবচেয়ে জরুরি হলো আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়া। তবে হাসপাতাল পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যা প্রাণরক্ষায় সহায়ক হতে পারে:
আতঙ্ক কাটান: সাপে কাটা ব্যক্তি সাধারণত প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান, যা অনেক সময় হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে বিষ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। তাকে আশ্বস্ত করুন, সাহস দিন। মনে রাখবেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপ বিষহীন। আর বিষধর সাপও সবসময় মারাত্মক পরিমাণ বিষ দেয় না।
আক্রান্ত অঙ্গ স্থির রাখুন: সাপে কামড়ানো অঙ্গ যতটা সম্ভব নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত রাখতে হবে। বেশি নড়াচড়া করলে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রেসার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করুন: ক্ষতস্থান থেকে কিছুটা উপরের দিকে একটি মাঝারি চাপযুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় (গামছা, ওড়না ইত্যাদি) পেঁচিয়ে বেঁধে দিন। এর মাধ্যমে বিষ ছড়িয়ে পড়া কিছুটা ধীর হতে পারে। তবে কখনোই খুব শক্ত করে বাঁধবেন না।
জীবাণুমুক্ত করুন: আক্রান্ত স্থানটি সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, তারপর পরিষ্কার ও ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।
অলঙ্কার খুলে ফেলুন: দংশিত অঙ্গে থাকা আংটি, ঘড়ি, চুড়ি বা তাবিজ—সব কিছু দ্রুত খুলে ফেলুন। কারণ অঙ্গ ফুলে গেলে এসব বস্তু রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
শ্বাসকষ্ট হলে সহায়তা করুন: রোগী যদি শ্বাস না নিতে পারে, তবে মুখে মুখ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করুন।
যেসব ভুল একদমই করবেন না
সাপে কাটা ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করলে বিপরীত ফল হতে পারে। নিচে এমন কিছু কাজের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো:
ওঝার কাছে নেওয়া যাবে না: সাপে কাটা রোগীকে ঝাড়ফুঁক বা তাবিজের আশায় ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। এটি প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
মুখ দিয়ে বিষ টানবেন না: সাপে কাটা জায়গায় মুখ লাগিয়ে বিষ টেনে বের করার পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভুল এবং বিপজ্জনক। এতে বিষ বের হয় না, বরং ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
ক্ষতস্থানে ছুরি/ব্লেড ব্যবহার নয়: অনেকে ক্ষতস্থান কেটে বা আঁচড়ে বিষ বের করার চেষ্টা করেন। এই কাজ থেকে বিরত থাকুন। এতে রক্তপাত বাড়ে এবং সংক্রমণ হয়।
শক্তভাবে অঙ্গ বেঁধে রাখবেন না: অনেকে দংশনের জায়গায় খুব শক্ত করে রশি বা কাপড় বেঁধে ফেলেন, যা টিস্যু নষ্ট করে দিতে পারে। এর ফলে অঙ্গ কেটে ফেলতে হতে পারে।
ভেষজ বা কাদামাটি ব্যবহার করবেন না: ক্ষতস্থানে লালা, কাদা, উদ্ভিদের পাতা বা ঘরোয়া কোনো বস্তু লাগানো ঠিক নয়। এতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
অ্যাসপিরিন খাওয়ানো যাবে না: ব্যথা কমাতে অনেকেই অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ান, যা রক্ত পাতলা করে ও অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে।
বমি করানোর চেষ্টা করবেন না: অনেক সময় রোগী খাওয়ার পর বমি করলে ভাল হবে বলে খাইয়ে দেন, যা সাপের বিষে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে।
শেষ কথা
সাপে কাটা অবস্থায় সঠিক সময়, সঠিক সিদ্ধান্ত ও প্রাথমিক চিকিৎসাই রোগীকে বাঁচাতে পারে। ওঝা কিংবা কুসংস্কারের আশ্রয় না নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক যত্ন হিসেবে ক্ষতস্থানে সংক্রমণ রোধ, অঙ্গ স্থির রাখা ও রোগীকে মানসিকভাবে সান্ত্বনা দেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
জরুরি পরিস্থিতিতে এই জ্ঞান একজন সাধারণ মানুষকেও রক্ষা করতে পারে অন্যের প্রাণ। তাই সচেতন থাকুন, জীবন বাঁচান।
