চিরকুমারদের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র
মেহেদী হাসান গালিব
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফেব্রুয়ারি মাসে লেবেঞ্চুস দিবস থেকে শুরু করে ভালোবাসা দিবস হওয়ায় চিরকুমাররা যতটা না খুশিতে থাকে, ঠিক ততটাই আতঙ্কে থাকে প্রেমিকাদের আদরের বাবুরা। প্রেমিকার আবদার পূরণ করতে করতে মানিব্যাগের টাকা থেকে শুরু করে ক্ষয় হতে থাকে জুতার তলা। তবুও দিনশেষে তাদের শুনতে হয়, ‘কাল গুড নাইট দেয়ার পর কী সুন্দর একটা স্টিকার পাঠিয়েছিলে। আর আজ কোনো স্টিকার নেই- শুধু গুড নাইট? যাও আর কোনো কথা নেই।’ ব্যস, এক রাতের ঘুম কিংবা পরবর্তী দিনে সঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার সংকল্প নষ্ট করতে এই একটা কথাই যথেষ্ট, ‘যাও আর কোনো কথা নেই।’
এতসব অন্যায় আবদার আর ভালোবাসার নামে প্রহসনের পরও কেউ কেউ মাথা নিচু করে মোবাইলে মেসেজ পাঠায়, ‘জানু খাইছো?’ প্রতিটা বাক্যের আগে আর পরে থাকে একটা লাল, একটা সবুজ আর একটা নীল রঙের লাভ ইমোটিকন। তবুও এ পাশটায় উদ্বেগের শেষ নেই- মন ভরবে তো? কিন্তু সবাই এভাবে মাথা নিচু করে বাঁচতে পারে না। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ তরুণীদের প্রোফাইল পিকচারে নির্দ্বিধায় ‘হা হা’ রিয়্যাক্ট দিতে পারে। এতে তাদের বুক কাঁপে না।
স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে-বসে ও শুয়ে থাকা সে সব তরুণকেই একটি সংগঠন ‘রুয়েট চিরকুমার সংঘ’। ১৪ ফেব্রুয়ারি যখন দলে দলে সবাই ভালোবাসা দিবস পালন করে, তখন এই সংগঠন একদল ১০০% বিশুদ্ধ চিরকুমারদের নিয়ে পালন করে চিরকুমার দিবস। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ল্যাফটেনেন্ট সেলিম হলের সামনে একটি গাছের ডালে ঝুলে আছে রুয়েট চিরকুমার সংঘের একটি সাইনবোর্ড, ঠিক যেভাবে মেয়েদের রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ঝুলে থাকে ওই সব প্রেমিক যুবকরা। রুয়েটে এই জায়গাটি পরিচিত চিরকুমার চত্বর নামে।
বিগত চার বছরের ন্যায় এই চিরকুমার দিবসেও আয়োজন করা হয় চিরকুমার আসরের। ১৩ তারিখ রাত থেকেই চলতে থাকে প্রস্তুতি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়ে প্রেমের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করা হয়। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল নামার আগে আগেই নীলরঙা টি-শার্টে ছেয়ে যায় চিরকুমার চত্বর। শার্টের পেছনে বড় করে লেখা, ‘চিরকুমার নু পযড়রপব, হড়ঃ নু পযধহপব।’ অনেকেই মনে করে থাকে এই সংগঠনের সবার জীবনেই রয়েছে একের অধিক ছ্যাঁকা খাওয়ার ঘটনা। তাদের সব ভ্রান্ত ধারণা দূর করার উদ্দেশ্যেই এই লেখা। এরপর সব চিরকুমার জমায়েত হলে ব্যানার হাতে শান্তি মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলে সব চিরকুমার গলার রগ ফুলিয়ে স্লোগান দেয়, ‘চিরকুমারদের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র’, ‘নারী তোমার ছলনায় ভুলি নাই- ভুলবো না’, ‘চিরকুমারদের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন লেডিস হলে!’ এমন আরও অনেক স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসের আকাশ-বাতাস। এ সব স্লোগান শুনে রিকশায় করে ঘুরতে আসা অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাই রিকশার হুডে নিজেদের লুকিয়ে ফেলে। মিছিল শেষে প্রয়াত চিরকুমারদের সিঙ্গেল
আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে ৬৯ সেকেন্ড নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর আয়োজন করা হয় ‘মোরগ লড়াই’। এ সময় জীবনের আরেকটি বসন্ত চিরকুমার হিসেবে কাটানোর স্বীকৃতিস্বরূপ সবার হাতে একটি করে মিষ্টি তুলে দেয়া হয়। মিষ্টি খাওয়া শেষে শুরু হয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। দেশে যে হারে প্রেমিক-প্রেমিকাদের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেয়ার জন্য কোনো ফাঁকা গাছই খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই তারা নিজেরাই নিজেদের বিশ্রামের জন্য প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ করে। এরপর ফটোসেশন। চিরকুমারের টি-শার্ট পরে যদি দুই-একটা সেলফি-ই তোলা না যায়, তবে চিরকুমার হয়ে লাভটা কী? সবশেষে রাতের আকাশে ফানুস উড়িয়ে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ৫ম চিরকুমার আসরের।
