Logo
Logo
×

বিচ্ছু

ধারাবাহিক রম্য টল TALK

বীর বলে স্ট্রিট Fall এ

Icon

শায়ের খান

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রিকশায় ওঠা নিয়ে ট্রাম্প মামা আর মিথিলার এক চোট হয়ে যায়। বলছি। রিকশায় দুজনই ডানপন্থী। মানে কিনা সিটের ডান পাশে বসা অভ্যাস। টল বিরহের কারণে মিথিলা এমনিতেই আপসেট। তাই সিটের সেটআপে ছাড় দিতে রাজি না। মেজাজ চিরতার পানি হয়ে আছে। তার ওপর চিকির সাজটা আজকে প্রোভোকিং। উত্তেজক। ইচ্ছে করেই এ সাজটা নিয়েছে চিকি, জানে মিথিলা। ট্রাম্প মামা তার মিথিলিনের ধুন ধরা মেজাজকে বেশি ঘাটাতে চাচ্ছেন না। যদিও কারণ অজানা, তবু মামা বুঝতে পারছেন নাড়াচাড়া করলেই ফেটে যেতে পারে বোম্ব। তাই মিথিলিনের ডানে বসার জেদ মেনে নিয়েই রিকশার বাঁ পাশে এগোন বসতে। বীরের মতোই এগোন বল নিয়ে। মনোবল। বীরবল বললেও ভুল হবে না। বলবান বীরবল ট্রাম্প মামার বুদ্ধি তো কম চোখা না। মিথিলা ধুন ধরা মুখেই ডানপাশে বসে পড়েছে এরই মধ্যে। হঠাৎ ট্রাম্প মামার ‘ও মাই গড’ এর সঙ্গে মিথিলার আর্তচিৎকার আর তার পরপরই রিকশা উল্টে পড়ার ধপাস শব্দ। কারণ কিছুই না। অনভ্যস্ততার কারণে বাঁ পাশ দিয়ে রিকশায় উঠতে গিয়ে মামা পা হড়কে যান। শেষ সাপোর্ট হিসেবে মিথিলাকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন। কিন্তু ভার সইতে পারেনি রিকশা। ট্রাম্প মামার দেহ ভার আর মিথিলার মুখ ভারেই হয়তো ভারাক্রান্ত রিকশা নিজেই উল্টে পড়ে সবাইকে নিয়ে। উল্টে না বলে কাত হয়ে পড়ে বলাই ভালো। আর রিকশার কাতে কাতর হয়ে পড়েন মামা আর মিথিলা। কাতরাতে থাকেন কাতর হয়ে। তাদের আর্তচিৎকারে ঢাকা পড়ে যায় ক্যাংটা পটাশ পিচ্চি রিকশাওয়ালার এক পায়ের তীব্র ধ্বনিতে ডিসকো নাচ। লোকজন দৌড়ে আসে। মামার বীরত্বের বল যে বীরবলেরই কাহিনী হয়ে যাবে, বুঝে উঠতে পারেননি উনি।

এবার আমরা এ অংশটুকু ডিপ ফ্রিজে রেখে চলে যাই ঝটিকা মিসের দিকে। ওদিকেই যে ঝটিকা বেগে ছুটেছে ছানামুখি অ্যান্ড গং। ছুটেছে না বলে পৌঁছে গেছে বলাই ভালো। আর ঝটিকা মিসের চেম্বারে ঢুকে থতমত খায় সবাই। মিস একটা বড়সড় মাস্ক পরে বসে আছেন, পাশে আরেক ছোট মিস ছোট মাস্ক পরা। মাথা নোড করে ওদের বসতে বলেন। মুখ হাসি না গম্ভীর বোঝা যায় না মাস্কের জন্য। সবাই বসে। খুব গম্ভীর হয়ে যায় ছানামুখি। টুং করে গ্রুপ চ্যাটিংয়ে সবার ফোনে মেসেজ যায়। লেখা- নানি যদি মুখ ঢেকে রাখে, সেলফিতে কী লিখব? নানা, নানি নাকি ভূতনি? টল লিখে- প্লিজ লেট আস সী ম্যাম।

ঝটিকা : নাচবে কে?

চিকি : আমি মিস।

ঝটিকা : হুম। ওয়েট কমাতে হবে।

ঠোঁট চিপে ডানে-বাঁয়ে নিয়ে মিনি তাচ্ছিল্য করে চিকি ঝটিকার চোখ এড়িয়ে। আর ঠোঁট চেপে হাসি চাপে চীপু। হঠাৎ টলের ফোন আসে।

টল : ইয়েস মিথিলা ম্যাম। হোয়াট? এক্সিডেন্ট? ট্রাম্প স্যার ফেইন্ট? অজ্ঞান? ওহ হো! চিত হয়ে? ক্রেন? ক্রেন কেন? আমরা আসছি!

চিকি : কী হয়েছে মামার?

টল : রিকশা উল্টে রাস্তায় চিত হয়ে পড়ে আছেন মামা। সরি ঝটিকা মিস, আমাদের যেতে হচ্ছে। আমরা আবার আসব।

ঝটিকা : না না যান তাড়াতাড়ি। ওই যে আপনাদের বাঘাইর মাছের মতো ড্রাম মামা? উনি?

ছানামুখি : ড্রাম না, ট্রাম্প। চল চল। হারি আপ!

ছানামুখি যেন মুখোশওয়ালা নানির কাছ থেকে কোনো ছুতোয় পালালেই বাঁচে। বেরিয়ে যায় সবাই।

আবার ডিপ ফ্রিজ থেকে মিথিলা-ট্রাম্প মামার ঘটনা বের করি। এখানে ছোটখাটো একটা জটলা হয়ে গেছে। রিকশাওয়ালা আর মিথিলা উঠে দাঁড়ালেও মামা চিত হয়ে আছেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন মিলে মামাকে ওঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। গুঞ্জনের মধ্য থেকে একজনের কথা ভেসে আসে, ‘একটা মাইনসের এত্ত উজন হয় ক্যামনে?’

ঝটিকা বেগে উপস্থিত হয় টল, চিকি, চীপু, ছানামুখি। ঝটিকালয় থেকে।

ছানামুখি : কিরে? তুই নিজে নিজে চেষ্টা কর ট্রাম্পু। তোর মতো একজন হেভিওয়েট বক্সার!

ট্রাম্প : অনেক ট্রাই করেছি বুবু, উঠতে পারি না। ওরা ছয়-সাতজন মিলেও পারেনি উঠাতে।

মিথিলা : আমি তো ক্রেন অর্ডার দিচ্ছিলাম। মিস্টার টলের কথায় ডাকিনি।

একজন স্মার্ট গোছের লোক এগিয়ে আসে। বলে, ‘না না, ক্রেন লাগবে কেন? আগে ওনার শারীরিক একজামিনেশনটা করে নিই।’ তারপর টলের দিকে ঘুরে বলে, ‘আসুন তো, দুজন মিলে দেখি। আমি ডক্টর সায়মন।’ হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে দুজন।

টল আর সায়মন মিলে মামাকে ধরে। ডক্টর সায়মন পালস দেখতে থাকেন। হঠাৎ টল চিৎকার করে ওঠে, ‘হোল্ড অন ডক্টর। পালস দেখা লাগবে না। পেয়ে গেছি!’ বলেই অতি উৎসাহে ট্রাম্প মামার কোমরের বেল্ট খুলে ফেলে টল। বলে, ‘উঠেন তো স্যার। উঠে পড়েন।’ সবাইকে অবাক করে নরমাল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে যান ট্রাম্প মামা। উপস্থিত উৎসাহী জনতা আনন্দে হুররে বলে তালি দিয়ে ওঠে। আর মামার দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সবার চোখের সামনে ঘটনাটাও পরিষ্কার হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আসলে মামা পড়েছিলেন ম্যানহোলের ভাঙা ঢাকনার ওপর। মামার কোমরের বেল্ট আটকে গিয়েছিল ঢাকনার হুকে। কেউ তা খেয়াল করেনি।

ডক্টর সায়মন বিদায় নিতে গেলে টলের অনুরোধে দাঁড়ান। ছানামুখিকে পরিচয় করিয়ে দেয় টল। ছানামুখি-সায়মনের কথার ফাঁকে টুশ করে ছবি তুলে নেয় টল দুজনের। সায়মন বিদায় নিলে ছানামুখি ফিসফিসিয়ে বলে, ‘ওর সাথে পিক দিয়ে কী হবে?’ টল ফিসফিসিয়ে বাঁকা হাসিতে বলে, ‘আসমাকে আপনার বাচ্চা নানি দিয়েই হারাতে হবে কে বলেছে ম্যাম? বাচ্চা নানা দিয়েও তো হারানো যায়।’ খুশিতে চোখ কপালে উঠে যায় ছানামুখির। উচ্ছলভাবে চিৎকার করে বলে, ‘চল চল সবাই, গাড়িতে চল!’

চিকি : এতজন গাড়িতে আটবে?

ট্রাম্প : আটবে। তোরা সবাই গাড়ির ভেতর যা। আমি ব্যাক ডালা খুলে মালপত্রের মতো চিত হয়ে ওখানে ঘুমাতে ঘুমাতে যাবো। বেশ ধকল গেছে।

কোমরে বেল্ট লাগাতে লাগাতে বীর ঢঙে একরাশ বল নিয়ে বীরবল ট্রাম্প মামা এগোতে থাকেন গাড়ির ব্যাক ডালার দিকে।

(চলবে)

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম