Logo
Logo
×

বিচ্ছু

বীরবলের হাসির গল্প

স্বভাব অকৃতজ্ঞ ও জাত-কৃতজ্ঞ

Icon

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একদিন সম্রাট আকবর বীরবলকে আদেশ করলেন, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এমন দুটি প্রাণী হাজির করতে, যাদের একটি হবে স্বভাব-কৃতজ্ঞ আর অন্যটি হবে জাত-অকৃতজ্ঞ!

শুনে তো বীরবলের চক্ষু স্থির। এমন খেয়ালিপনার অর্থ কী? তাকে চুপ থাকতে দেখে সম্রাট ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, ‘ব্যর্থ হলে কিন্তু মৃত্যু অনিবার্য!’

বীরবল নতমুখে বাড়ির দিকে রওনা হল। দরবারের অনেকে মহাখুশি। বীরবল এবার ব্যর্থ হবেই। তাদের পথের কাঁটা দূর হবে এতে।

এদিকে বীরবলকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখে তার মেয়ে রঙিলা জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে?’

মেয়েকে সবকিছু খুলে বলতেই সে বীরবলকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করল।

পরদিন যথাসময়ে বীরবল দরবারে হাজির হল। সঙ্গে মেয়ের পরামর্শ মতো বাড়ির পোষা কুকুর ও মেয়ের জামাই বীরবলের সঙ্গে উপস্থিত। বীরবলকে দেখে সবাই রীতিমতো অবাক।

সম্রাট গম্ভীর সুরে বললেন, ‘কী বীরবল, এনেছ কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞকে?’

সম্রাটকে কুর্নিশ করে বীরবল সঙ্গের কুকুর আর জামাইকে দেখিয়ে দিল। সম্রাট রেগে গিয়ে বললেন, ‘তুমি কি আমার সঙ্গে তামাশা করছ?’

বীরবল নির্ভীকচিত্তে বললেন, ‘আজ্ঞে জাহাঁপনা, আপনি সব শুনলেই বুঝতে পারবেন। এই যে কুকুরটি দেখছেন, এ হচ্ছে স্বভাব-কৃতজ্ঞ। এ রকম কৃতজ্ঞ প্রাণী আর দ্বিতীয়টি এই দুনিয়ায় নেই। মনিবের সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদের সঙ্গী। কোনো অবস্থাতেই মনিবকে ছেড়ে যায় না। আর এ লোকটি হচ্ছে আমার মেয়ে জামাই। এরা হচ্ছে জাত অকৃতজ্ঞ। যত খাতির যত্ন করুন, উপহার দিন, কোনোদিনই খাঁই মিটবে না, অকৃতজ্ঞ থেকেই যাবে।’

বীরবলের জবাব শুনে সম্রাট খুব খুশি হলেন। পাশাপাশি হুকুম জারি করলেন, তার রাজত্বে কোনো অকৃতজ্ঞ প্রাণীর স্থান হবে না। তাই তৎক্ষণাৎ বীরবলের মেয়ের জামাইয়ের গর্দান নেয়ার আদেশ করলেন।

সঙ্গে সঙ্গে বীরবল বলে উঠলেন, ‘মহামান্য সম্রাট, আপনার নির্দেশ সব অকৃতজ্ঞের জন্যই তো, তাই না? কিন্তু, জাহাঁপনাসহ এখানে আমরা সবাই তো কারও না কারও জামাই। তাহলে কি...’

বীরবলের কথা শেষ হওয়ার আগেই গোটা দরবার হাসিতে ফেটে পড়ল। সম্রাটও হাসতে লাগলেন। আর বীরবলের বুদ্ধিমত্তা ও রসবোধের জন্য সম্রাট তাকে প্রচুর উপহার দিয়ে হুকুম ফিরিয়ে নিলেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম