Logo
Logo
×

বিচ্ছু

রম্যগল্প

মন্টু মিয়ার বিদেশযাত্রা

Icon

আসমা আরবী সাথী

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মন্টুর মা সবসময় মন্টুকে বকাঝকা করত ইংরেজি শেখার জন্য। তার একটাই কথা, ‘ইংরেজি শিখলে বিদেশে যেতে পারবি, প্লেন চালাতে পারবি, ইংরেজিতে কথা বলতে পারবি, বিদেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবি!’

মা’র কথামতো মন্টু তাই ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত ইংরেজিতে মনোযোগ দিলো। সব বিষয়ে টেনেটুনে ৩৩ পেলেও ইংরেজিতে সে সবসময় কৃতিত্বের সঙ্গে ৩৪ পেত!

মন্টুর মনে অনেক আশা বিদেশে যাবে। স্বপ্ন দেখতে দেখতে মন্টু ‘সি গ্রেডে’ এসএসসি পাশ করল! এবার মন্টু বিদেশে যাবে! বাবার জমি, মায়ের গহনা-সব বিক্রি করে আদম ব্যাপারির হাতে তুলে দিল নগদ পাঁচ লাখ টাকা!

মন্টুর গন্তব্য মালয়েশিয়া। প্রতিদিন মন্টু স্বপ্নে ইংরেজিতে কথা বলে! স্বপ্নে সে মালয়েশিয়ার বুর্জ খলিফার একটি ফ্ল্যাটও কিনে ফেলল! এমনকি মালয়েশিয়া থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল মন্টু!

দিন গণনা শেষে, মালয়েশিয়া যাওয়ার দিন চলে এলো। আদম ব্যাপারি মন্টুসহ বাকি সবাইকে চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশিথা ট্রেনে তুলে দিল। জানালো চট্টগ্রামে নেমে সাগর দিয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে খুব কম সময় লাগে! তূর্ণা নিশিথা থেকে নেমে চট্টগ্রামের সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের একটা ভটভটিতে তুলে দেওয়া হলো সবাইকে। আজকের দিনটা পার করে রাতের শেষেই স্বপ্নের মালয়েশিয়া পৌঁছে যাবে মন্টু এবং তার সহযাত্রীরা! ভটভটি ড্রাইভার বলল, ‘বঙ্গোপসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে যেতে মাত্র দুই-তিন ঘণ্টা লাগে!’

শুনে স্বপ্নে বিভোর মন্টু। কর্ণফুলী নদী আর বঙ্গোপসাগর দেখতে দেখতে কখন যেন মন্টুর চোখ লেগে গেল। যখন চোখ মেলল তখন ভোরের আলো ফুটি ফুটি করছে। চারদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন! ভটভটি ড্রাইভার নিখোঁজ! সবাই চোখ কচলাতে কচলাতে দেখল নতুন দেশ! নতুন এক স্বপ্ন! মালয়েশিয়ার তীর!

ওদের ভটভটি দেখে তীরের অনেক মানুষ ওদের দেখতে এলো। চারদিকে কানাঘুষা চলছে। মন্টুদের একজন সহযাত্রী খেয়াল করল, তীরের সবাই বাংলায় কথা বলছে! সে চিৎকার করে বলল, ‘আরে সবাই দেখেন, মালয়েশিয়ানরাও বাংলায় কথা কয়!’

উৎসুক জনতার একজন বললেন, ‘ও মিয়া, বাংলা কই মানে? কই আইছেন আপনেরা? কোইথ্থে আইছেন?’

সহযাত্রী আবুল বললেন, ‘ক্যান ভাই? আমরা বাংলাদেশি! মালয়েশিয়ায় আসছি!’

শুনে সে ব্যক্তি ধমক দিয়ে বললেন, ‘রাখেন মালয়েশিয়া! কে কইছে মালয়েশিয়া এইটা? এটা তো টেকনাফ! কইত্তে আইছে সব বেক্কলের দল!’

টেকনাফ শুনে সহযাত্রীদের অধিকাংশই অজ্ঞান হয়ে ভটভটিতে লুটিয়ে পড়ল। পুলিশের হস্তক্ষেপে ব্যাপারটা মিটমাট হলো। যে যার বাড়ি ফিরে গেল, কিন্তু পাঁচ লাখ টাকা আর কেউ ফিরে পেল না।

টাকা-পয়সা হারিয়ে, বেজির মতো বেজার মুখ করে মন্টু একটি মোটরগাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ নিল। মেকানিকের কাজ করে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। কিন্তু মন্টুর মায়ের মনে আশা, ছেলে বিদেশ যাবে। ইংরেজি বলবে!

আবার চেষ্টা শুরু হলো। ধার-দেনা করে মন্টুকে আবার বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো, তবে এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায়। মন্টু এবার বৈধভাবে বিদেশ গেল, স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায়। মন্টু এখন মালয়েশিয়ায় একটি মোটরগাড়ির ওয়ার্কশপে মেকানিকের কাজ করে। মন্টুর মায়ের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। তবে একটি!

মন্টু বিদেশে থাকে ঠিকই; কিন্তু সে যেখানে কাজ করে সেখানে কেউ ইংরেজি ব্যবহার করে না, পারেও না। সেখানে মালয়েশিয়ান ভাষা ছাড়া কোনো ভাষা ব্যবহার হয় না!

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম