ঢাকাই রস
দক্ষিণের মশা উত্তরের মশা
তায়েব মিল্লাত হোসেন
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শরীরের নাম মহাশয়, যা সহাবেন তাহাই সয়- চিরন্তনী এ বাণী কিন্তু মশার বেলায় খাটবে না। মিরপুর কিংবা সূত্রাপুর যেখানেই বাসা হোক না কেন, আয়েশ করে সোফায় বসে সাকিব-তামিমের ব্যাটিং দেখবেন, সে উপায় নেই। আপনাকেও চালাতে হবে ব্যাট।
অবশ্য ট্রা ট্রা ট্রা...শব্দে মশা মারার সেই ব্যাটিংও কম আনন্দদায়ক নয়। কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে যতই মারুন, শূন্যতা পূরণে দেরি করে না মশক দল। তাই বিরতিহীনভাবে মশা মারার সেই ব্যাট চালিয়ে আপনাকে অপরাজিত থাকতেই হবে।
সবকিছুর শেষে ঘুমুতে যাওয়ার আগে আপনাকে মশারি খাটাতে হবেই হবে। মশা তাই ঢাকা শহরে দাম্পত্য জীবনের আকাশেও দুর্যোগের এক বড় ঘনঘটা। কারণ মশারি কে টানাবে- এ নিয়ে ঘরে ঘরে লড়াই লেগেই থাকে। আবার টানানোর পর মশারির ভেতরে যদি দু’একখানা মশা থেকে যায়, তা নিয়েও এক পশলা ঝগড়া হয়ে যেতে পারে স্বামী-স্ত্রীতে। হাতাহাতিতেও কিন্তু নিয়ে যেতে পারে মশা। কারণ বেহুঁশ হয়ে মশা মারতে গিয়ে কার গালে, কে কখন চড় বসিয়ে দেবে, তারও কিন্তু স্টেশন নেই!
এদিকে মশার যন্ত্রণা থাকলেও ব্যাচেলর জীবনে কিন্তু মশারির যন্ত্রণা কম। কারণ একবার কোনোরকমে টানিয়ে ফেললে ছয় মাস ধরে চলতে পারে। আর টানানোর জন্য দেওয়ালে যদি পেরেক না থাকে তবে বইয়ের স্তূপে, চেয়ারের হাতলে, দরজার ছিটকিনিতে কোনোরকম দড়িগুলো আটকে দিতে পারলেই কেল্লাফতে!
যারা আবার বেশি সচেতন, তারা দরজা-জানালায় সরু ছিদ্রের তারের জালি লাগিয়ে দেন। পুরো বাসা তাতে একরকম মশারির অধীনে চলে আসে। গুলশানের এক চৌধুরী সাহেবের জীবনে তবুও স্বস্তি আসেনি। গিন্নির অভিযোগ, তিনি দরজা-জানালা ঠিকঠাক লাগান না বলেই এতকিছুর পরও বাসায় মশার উপস্থিতি। এটা সয়ে নিতে পারলেও মশার যন্ত্রণা তো সওয়ার উপায় নেই। সবশেষে চৌধুরী সাহেব আবিষ্কার করলেন, তারা যখন লিফটে চড়ে ঘরে ঢুকেন, সেই সময়ে অনাহুত অতিথির মতো বাসায় চলে আসে মশার দল। অভিজাত ঢাকা উত্তরের মশাও লিফটে চড়তে শিখে গেছে তাহলে! দক্ষিণের ঢাকাইয়া মশা কী এই কায়দা রপ্ত করতে পেরেছে?
তবে বুড়িগঙ্গা তীরের নগর প্রশাসনের মতে, পুরোনো শহরে যে মশার আধিক্য, তারা ‘ঢাকাইয়া’ না। তাদের আগমন নাকি উত্তর থেকে! নর্দমার মশা যদি বলে উঠত, ‘আমি ভি ঢাকাইয়া।’ তবে না মশার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যেত। চেনা যেতে পারে অন্য কায়দায়ও। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘গাপ্পি মাছ চেনো? তেলাপিয়া চেনো? হাঁস চেনো?’ যদি মশার দল উত্তরে বলে, ‘আবে কয় কী, চিনমু না ক্যালা!’ তবে বুঝতে হবে এগুলো দক্ষিণের মশা।
তা দক্ষিণ না হয় চেনা গেল, উত্তরের পরিচয় মিলবে কীভাবে? সে কায়দাও আছে। একেবারেই নতুন প্রজন্মের মশকের দল যদি ড্রোন চেনে, তবে তা গুলশান-বনানী-উত্তরার মশাই হবে। কারণ হালে এসব এলাকায় ড্রোন দিয়ে মশা মারার অভিযান চলছে। কচুরিপানার আড়ালে লুকিয়ে থাকায় কীটনাশকের হাত থেকে বেঁচে গেছে, আর চিনে নিয়েছে ড্রোন।
যাক এবার লেখায় ইতি টানি। কারণ মশার কামড়ে ধৈর্যহারা কোনো ঢাকাইয়া সপাটে নিজের পায়ে হাত চালিয়ে রক্ত মাখা মশা ঢলতে ঢলতে বলে ফেলতেই পারেন, ‘আবে হালা, এতো কতা ভি না কইয়া, মশা কমানির কায়দাটা বাইর কইরা ফালা না। দরকার লাগলে আমগোর গুলিস্তানের কামানডা ভি লইয়া যা!’ তবে কামান নয়, মশা মারতে দক্ষিণে যে ব্যাঙ ছাড়া হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। গাপ্পি, তেলাপিয়া, হাঁস, ড্রোন সফল না হলেও ব্যাঙের আশু সাফল্য কামনা করছি আমরা।
