Logo
Logo
×

বিচ্ছু

পাঠকবাড়ি রসের হাঁড়ি

বাজিতে উভয় পক্ষের পরাজয়

Icon

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্ধু মানেই শক্তি, আবার বন্ধু মানেই বদের হাড্ডি! বন্ধুদের সঙ্গেই ঘটে জীবনের অনেক মিষ্টি মধুর ঘটনা। আমার ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি মজার ঘটনা মনে পড়ছে খুব। তখন আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে বার্ষিক শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিনের জন্য কক্সবাজার ট্যুর। আমার বন্ধুরা দুষ্টুমির ছলে কখনো আমাকে নাজেহাল করতে পারেনি। নাজেহাল করা মানে লজ্জাজনক অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া।

ওরা প্রতিজ্ঞা করেছে, এবারের ট্যুরে কক্সবাজারের মাটিতে আমাকে যেভাবেই হোক নাজেহাল করে ছাড়বে। আমিও বলেছিলাম, তোদের কখনো সেই সৌভাগ্য হবে না। এসব নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমরা বাজি ধরে ফেললাম। যদি আমাকে কক্সবাজারের মাটিতে নাজেহাল করতে পারে, তাহলে আমি ওদের এক হাজার টাকা দেবো, আর না পারলে ওরা আমাকে দুই হাজার টাকা দেবে। কথা ফাইনাল।

যথাসময়ে আমরা শিক্ষা সফরে কক্সবাজারে পৌঁছে গেলাম। সেখানে সবাই মিলে খুব মজা করছি। তবে আমি সব সময় খুব সতর্ক থাকার চেষ্টা করতে লাগলাম। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ওপর কড়া নজর রাখছিলাম, যাদের সঙ্গে আমি বাজি ধরে ছিলাম। যেন কোনোভাবেই আমাকে বেকায়দায় ফেলে নাজেহাল করতে না পারে। ওরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বেশ চেষ্টা করতে লাগল; কিন্তু আমি সতর্ক থাকার কারণে কোনোভাবেই সফল হতে পারছিল না।

এভাবে দু’দিন চলে গেল। আমিও বেশ ফুরফুরে মেজাজে ঘুরতে লাগলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, বাজির দুই হাজার টাকা আমার পকেটে ঢুকবে নিশ্চিত। সেই টাকা হাতে পেলে সবাইকে নিয়ে একটা জম্পেশ পার্টি দেবো। তৃতীয় দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কক্সবাজার থেকে আমাদের ফেরার পালা। শেষ দিন আমি আরও বেশি সতর্ক ছিলাম। যেন কোনো রকমে ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি। তাই ওদের কাছ থেকে একটু দূরে দূরে অবস্থান করছিলাম। তবে শেষ রক্ষা আর হয়নি! শেষ দিনে একদম শেষ মুহূর্তে এসে ধরাটা খেলাম।

আমরা তৃতীয় দিন বিকালের দিকে শেষবারের জন্য সমুদ্রে নেমে দাপাদাপি করছিলাম। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ফুটবল নিয়ে সমুদ্রের পানিতে লোফালুফি খেলছে। আর আমি চালাকি করে ওদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকার জন্য টিউব ভাড়া নিয়ে মনের সুখে সমুদ্রের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই ওরা সবাই ফুটবল নিয়ে আমার কাছে চলে এলো। খেয়াল করলাম কে যেন ডুব দিয়ে আমার প্যান্ট খুলে নিয়ে গেছে! গায়ে টি-শার্ট ছাড়া আর কিছু নেই। বুঝতে পারলাম, এটাই ছিল ওদের ফন্দি।

কথায় আছে, বুদ্ধি থাকলে একটা না একটা উপায় বের হবেই। আমিও বুদ্ধি খাটিয়ে আমার ইজ্জত রক্ষার্থে আশপাশের লোকজনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলাম। আমার এ অসহায় দৃশ্য দূর থেকে দেখে আমার বদের হাড্ডি বন্ধুরা হাসাহাসি করতে লাগল খুব। এদিকে আমার দুরাবস্থা দেখে আমাকে সাহায্য করতে এক অপরিচিত ভাই এগিয়ে এলেন। তিনি আমার জন্য একটা টাওয়েল আনতে গেলেন; কিন্তু আর ফিরে এলেন না। আমি সেই আগের মতোই সমুদ্রে বুক পানিতে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর আরও একজনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলাম। তিনিও প্রথম ব্যক্তির মতো সেই যে গেলেন আর ফিরে এলেন না। পরে বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম, আমার সাহায্যকারী ওই দুই অপরিচিত লোককে ওরাই বাধা দিয়েছিল। এদিকে শরীরে ঠাণ্ডা লেগে যাচ্ছে আবার বেলাও বয়ে যাচ্ছে। পরাজয় স্বীকার করে বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে সমুদ্র থেকে আমাকে উঠতেই হবে। কী আর করা! অগত্যা শেষ মুহূর্তে পরাজয় মেনে নিয়ে নাজেহাল হয়ে সে যাত্রায় ইজ্জত বাঁচিয়ে সমুদ্র থেকে উঠলাম।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওরা যেভাবে আমার সঙ্গে বাঁদরামো করে আমাকে নাজেহাল করেছিল, তেমনি আমিও ওদের সঙ্গে বাঁদরামো করেছিলাম। ওরা যখন বাজিতে জেতার টাকা চাইলো, আমি তখন উল্টো ওদের কাছে বাজিতে জেতার টাকা চাইলাম। ওরা আমার আবদার শুনে টাসকি খেয়ে গেল। আমি ওদের শর্তের কথা মনে করিয়ে দিলাম। কথা ছিল কক্সবাজারের মাটিতে আমাকে নাজেহাল করতে হবে; কিন্তু ওরা আমাকে পানিতে নাজেহাল করেছে! তাই শর্ত মোতাবেক আমি বাজিতে জিতেছি। এটি নিয়ে বাসে আমরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে অনেক তর্কাতর্কি করলাম। কোনো পক্ষ পরাজয় মেনে নিতে রাজি নই। শেষ পর্যন্ত আমাদের একজন স্যার এসে সবকিছু শুনে এর সমাধান দিলেন। যেহেতু আমি সমুদ্র থেকে ওঠার সময় ওদের কাছে পরাজয় স্বীকার করেছিলাম এবং ওরাও শর্ত মোতাবেক আমাকে কক্সবাজারের মাটিতে নাজেহাল করতে পারেনি, তাই আমরা উভয় পক্ষই বাজিতে হেরে গেছি! পরে আমরা দুই পক্ষই বাজিতে হেরে যাওয়ার টাকা স্যারের হাতে জমা দিলাম। যাত্রাবিরতির সময় বাসের সবাই বাজির টাকায় পেটভরে খেলাম। স্যার এই পার্টির নাম দিয়েছিলেন পরাজয়ের পার্টি। সম্ভবত আমরাই প্রথম বাজিতে উভয় পক্ষ হেরে গিয়েছিলাম এবং উভয় পক্ষই আনন্দ উল্লাসে পরাজয়ের পার্টি খেলাম।

চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ, ঢাকা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম