Logo
Logo
×

বিচ্ছু

চিরায়ত রস

বাগানের গাছ ও বনের গাছ

Icon

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বীরবলকে নিয়ে একদিন সম্রাট ভ্রমণে বেরিয়েছেন। একটি গ্রাম অতিক্রম করার সময় সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে গ্রামের মানুষগুলো ভীষণ কর্মঠ। বিশেষত মহিলারা খুব পরিশ্রমী। তারা কলসি কাঁখে পুকুরে যাচ্ছে পানি আনতে। কাঠ কেটে কেটে বয়ে আনছে। কৃষকরা জমিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এসব দৃশ্য দেখে সম্রাট বললেন, ‘এদের দেখো বীরবল, কী পরিশ্রমটাই না করছে এরা। অথচ কত অল্প টাকা আয় করে। কত কম খেয়ে থাকে। কী কঠিন জীবন এদের। নিজেদের কাজ নিজেরাই করে এরা।’

বীরবল চুপচাপ শুনে গেলেন। কিছু বললেন না। প্রাসাদে ফিরেই সম্রাট হুকুম জারি করলেন, প্রাসাদের সবারই যার যার কাজ, তার তার করতে হবে। গ্রামের আধাপেট খাওয়া মহিলারা যদি কঠোর পরিশ্রম করতে পারে, তাহলে তিন বেলা বিপুল খানা খাওয়া, স্বাস্থ্যবতী বেগম এবং অন্যরা কেন পারবে না? পারতেই হবে। এখন থেকে চুল বাঁধা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজ নিজেদের করতে হবে। কোনো দাসী-বাঁদী ডাকা চলবে না।

সম্রাটের নির্দেশে বেগম ও শাহজাদীরা চোখে সর্ষে ফুল দেখতে লাগলেন। যারা সোনার পালঙ্কে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত, কীভাবে তারা এত কাজ করবেন? কিন্তু সম্রাটের নির্দেশ উপেক্ষা করলে তো শাস্তি হবে। শেষতক বীরবলকে ডেকে পাঠালেন এক বাদশাহজাদী।

এলেন বীরবল। বাদশাহজাদী তাকে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করলেন। তাদের করুণ অবস্থা দেখে বীরবল প্রতিজ্ঞা করলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি একটা বিহিত করবেন।

সম্রাটের বাগানের ফুলগাছে পানি দিতেন এক মালী। বীরবল তাকে ডেকে বললেন, ‘আজ থেকে তুমি আর গাছে পানি দেবে না।’

মালী ভীত হয়ে বললেন, ‘সম্রাট তো তাহলে আমাকে শাস্তি দেবেন!’ বীরবল বললেন, ‘তোমার কিছুই হবে না। আমি যা বলব তুমি কেবল তাই করবে।’ সেদিন থেকে বাগানে পানি দেয়া বন্ধ হয়ে গেল। কদিন পর সম্রাট ও বীরবল বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। সম্রাট দেখলেন, ফুলগাছের চারাগুলো পানি না পেয়ে শুকিয়ে গেছে। ক্রুদ্ধ হয়ে মালীকে তলব করলেন তিনি।

বীরবল বললেন, ‘অত ভাববেন না হুজুর, সব ঠিক হয়ে যাবে। বনের ফুল, গাছপালা দেখেননি? কেউ তো ওখানে পানি দেয় না, পরিচর্যা করে না। তবু কেমন তরতর করে বেড়ে ওঠে।’

সম্রাট রেগে বললেন, ‘কী যা তা বলছ! বাগানের এই সুন্দর ফুলগাছের সঙ্গে কি বুনো জংলি ফুলগাছের তুলনা হয়?’

‘কেন হবে না, মহামান্য সম্রাট?’ বীরবল অবাক হয়ে বললেন, ‘যদি গ্রামের খেটে খাওয়া ওই মহিলাদের সঙ্গে বাদশাহজাদীদের তুলনা হয়, তবে বাগানের গাছের সঙ্গে জংলী ফুলগাছের কেন তুলনা হবে না?’

সম্রাট মূল সমস্যাটা বুঝতে পেরে বললেন, ‘হুম। তুমি কী বলতে চাইছ আমি বুঝতে পেরেছি। ঠিক আছে, আজ থেকে বেগম ও বাহশাহজাদীরা আবার তাদের দাসী-বাঁদীদের সঙ্গে রাখতে পারবে। আমার আদেশ আমি প্রত্যাহার করে নিলাম।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম