|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রচুর ধনসম্পদের চেয়ে সুন্দর নামের মূল্য বেশি-উক্তিটি কার, মনে করতে পারেন না অনন্যা অপরাজিতা। বাণী শ্রবণ করে নিজের সেকেলে নাম বাদ দিয়ে বর্তমান নামটি ধারণ করেছেন। বাবা-মার সঙ্গে এই বিষয়ে রাগও করতে পারেন না-তারা তো জানতেন না মাইয়াডা একদিন দুইন্যাটা ভাইজ্যা খাইব!
নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ধীরে এবং জোরে নিজ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এখন তিনি বিলাসবহুল এলাকায় থাকেন। নিজস্ব অফিসেও সারাক্ষণ গিজগিজ করে লোকজন। স্ত্রৈণ স্বামী ভালোবাসার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে নামের শেষে ‘অপরাজিতা’ যোগ করেছেন। লোকজন হাসাহাসি করলেও কিছু মনে করেন না।
স্ত্রী তার লক্ষ্মী, দেনমোহরের টাকার খোঁটা দেয়নি। উল্টো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারে মোহর ঢেলে যাচ্ছেন! ছেলেমেয়েরাও ভোগ করছে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা। আগে মাদক ও সঙ্গ নিতে বাইরে যেত, এখন বাসাতেই বানিয়ে নিয়েছেন বার ও বিনোদন ভুবন।
অনন্যা যেখানে হাত দেন, সাফল্য আসতেই থাকে। সর্বশেষ প্রজেক্ট ফেসবুক ইউজার ফোরাম (ফেইফো)। এ সংগঠনের ভেতরেই রয়েছে বাণিজ্যের রকমারি জোগান। প্রথমত লাখ লাখ ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট ফি দিয়েই সদস্য পদ নেবে। এখানেই কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। দৈনন্দিন জীবনে এরা মোবাইল ফোনের টকটাইম থেকে শুরু করে কত কেনাকাটাই না করে। এসব সরবরাহ করবে ফেইফো কনজুমার সেল। শক্ত হাতে হ্যান্ডেল করতে পারলে এটাই হয়ে উঠবে টাকার খনি।
বেয়াড়া ও অবাধ্য কিছু লোক বরাবরই থাকে। এখানেও দেখা মিলল। একেকজনকে একেকভাবে টাইট দিলেন অনন্যা অপরাজিতা। নিজের উঠতি বয়সের কিছু ছবি ফটোশপে কোলাজ করিয়ে নিয়েছেন। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে থাকল বিদ্রোহীদের খোলামেলা সব ছবি। সামাজিক ও পারিবারিক শান্তি বজায় রাখার জন্য চুপচাপ সব সয়ে গেল এরা। এই কাজ করতে গিয়ে নতুন করে উপলব্ধি করলেন, ছবির কী শক্তি! নানা ক্ষেত্রের ক্ষমতাবান ও বরেণ্যজনের সঙ্গে অকাতরে ছবি তুলতে থাকেন। নিজের ওয়ালে আপলোডও করতে থাকেন সমানে। সম্পূর্ণ বিপরীত রুচির নারী-পুরুষের ছবি আপলোড করতে থাকলে সোচ্চার হয় ফলোয়ার গোষ্ঠী। নিজে তো জানেন, সব মানুষের হাতেই অল্প-বিস্তর ক্ষমতা থাকে। এসব প্রয়োজনের সময়ে ভালোই কাজে দেয়। ক্ষমতার পালাবদলে যাতে কোনো সমস্যা না হয়-তৎপর থাকেন।
প্রতিপক্ষ দলের শীর্ষনেতাদের বাসা, অফিস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে তুলে আনতে লাগলেন এক্সক্লুসিভ সব ছবি। ছবিগুলো নানাভাবেই কাজ দিতে শুরু করে। ক্ষমতার তেজ দেখানোর পাশাপাশি অবাধ্য দমনেও ধন্বন্তরী। ফেইফো’র পেজ ও নিজের আইডি ভেরিফায়েড হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। বাণিজ্যের অঙ্কও লাফিয়ে লাফিয়ে উঠেছে শত কোটি টাকায়। ফেসবুকে এবং বাইরে অনন্যা অপরাজিতা এখন পরিচিত প্রিয়মুখ। স্বামী আবুল অপরাজিতা ব্লু ব্যাজের টিক চিহ্নটা কাঠের ফ্রেমে খোদাই করে নিয়েছেন। ব্যাজটা উঁচিয়ে তিনি হাঁটেন স্ত্রীর পিছু পিছু। ‘আবুল হালার কোনো মার্কা নাই, বউয়ের লেঙ্গুড় ধইরা ঘোরে’ এমন ফিসফাসেও রা করেন না দুজনের কেউই।
প্রবাসী ফেসবুক ফোরাম’র (প্রফেফো) সদস্যরা ভোগান্তির ফিরিস্তি প্রকাশ করেন। সেটা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। অনুসন্ধান করতে এসে একজন সাংবাদিক অনন্যাকে প্রশ্ন করেন, ‘এসব ভুঁইফোঁড় কাণ্ডের হোতা আপনিই?’
ডাঁট বজায় রেখে জবাব দেন, ‘হোয়াট ইজ ভুঁইফোঁড়? এটা যদি ভালো কিছু হয়, আমি অবশ্যই ভুঁইফোঁড়!’
‘এভাবে জনসেবার নামে ভোগান্তি সৃষ্টি কি উচিত! আর্থিক অনিয়মের প্রচুর অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে।’
‘আমি আবারো নির্বাচন করব। মানুষ সুফল পাবে। ফান্ড গঠনের জন্য একটু ইয়ে তো করা লাগেই! বেকারদের জন্য বানাচ্ছি নতুন প্লাটফর্ম।’
অনন্যা অপরাজিতার কিছু অসংলগ্ন কথা ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন সন্ধ্যা-রাতে পুলিশের দেখা পান। বাহিনী ঘিরে ফেলেছে ফেইফো কার্যালয়। পুলিশ কর্মকর্তার আত্মসমর্পণের প্রস্তাবে তেলে-নুনে জ্বলে ওঠেন অপরাজিতা, ‘আমি এখন বড় নেতা! কেন আত্মসমর্পণ করব?’
‘বেহুদা সময় নষ্ট করবেন না। অন্যথায় আমরা কঠোর হব।’
‘একই কথা আমারও। আমি আইনের প্রতি প্রচণ্ড শ্রদ্ধাশীল, আস্থাশীল।’
‘কীভাবে?’
‘ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল টুন্ডা মকবুল। বিবৃতি দিলাম-সে নির্দোষ! আদম পাচারের অভিযোগে মামলা হলো বিলকিসের বিরুদ্ধে। আমি বললাম, সে সাচ্চা আদমি। ঘুসসহ হাতেনাতে ধরা পড়ল মফিজ। সাফ জানিয়ে দিলাম, মফিজ সচ্চরিত্র, কখনই ঘুস খায় না। এমন কত শত কৃতিত্বের কথা শুনবেন?’
‘এটা আইন-প্রেম নাকি বেআইনি কাজের নমুনা?’
‘এত কথার কী আছে! কোথায় যেন বেড়াতে নিতে চাচ্ছেন, চলুন!’
চলতে শুরু করে পুলিশের গাড়ি। অনন্যা অপরাজিতার মুখভরা হাসি। মাস্ক খুলে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন!
শুরু থেকেই কাষ্ঠনির্মিত ব্লু ব্যাজ উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন; এখনো অবস্থানের এতটুকু নড়চড় করেননি!
