|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উল্টা পাল্টা এই বিষয় নিয়ে এর আগেও ভেবেছি। উল্টা পাল্টা মানে শব্দের ওলট পালট খেলা। খেলা না বলে ভাবনা বলাই ভালো। এতদিনে ভুলে গেছিলাম। মনে করিয়ে দিলো কিউটি। আমার বান্ধবী। বিষয়টা সোজা। কিউটির কাছে মজারও। বুঝিয়ে বলছি। এক্সপার্টরা সব জিনিসের যে নাম রেখেছেন, সে নাম যদি সে নাম না হয়ে এ নাম হতো, আর এ নাম হতো সে নাম-কেমন হতো? এই যেমন এ নাম বলতেই মনে হলো, এ নাম একটু চাপিয়ে এনাম করে দিলেই তো মামার দোকানের নাম হয়ে যায়। এনাম স্টোর। আর ‘এনাম’কে যদি আমরা ‘সেনাম’ ডাকি, এনাম স্টোর হয়ে যায় সেনাম স্টোর। তাতে স্টোরের কিছুই আসে যায় না। ভেতরের মালপত্র আর কাস্টমার ঠিকই থাকে। এরকম আর কী।
রিকশায় যাচ্ছি দুজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে। দুজনের মুখেই মাস্ক।
‘বলো না, তোমার উল্টা পাল্টা কথা।’ কিউট আবদার ধরে কিউটি।
আমি : উল্টা পাল্টা কেন হবে? বলো শব্দের ওলট পালট।
কিউটি : ওই তো। উল্টে একটু পাল্টে বলো।
আমি : কী নিয়ে বলব?
একটু ভাবে কিউটি। ভাব নিয়ে বলে, ‘মমম মাস্ক নিয়ে বলো।’
আমি : বিষয়টা একটু জটিল।
কিউটি : কেমন?
আমি : ধরো, মানুষ যদি মাস্ককে মাস্ক নাম না দিয়ে কেক নাম দিতো আর কেককে ডাকত মাস্ক, তাহলে কী কাণ্ডটাই না হতো!
কিউটি : কী হতো?
আমি : আমরা তখন মুখে মাস্ক না পরে কেক পরে বের হতাম।
কিউটি : ইয়াম্মি! তাহলে কী মজাই না হতো। একেক দিন একেক কেক পরে বের হতাম আমি তখন। চকোলেট কেক, ভ্যানিলা কেক, ক্যারামেল অ্যাপল কেক, চিজ কেক...। আহ, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে একেকটা ফ্লেভার।
আমি : আমি অবশ্য কফি কেক পরে বসে থাকতাম। কফি নিয়েই থাকতাম আমি।
কিউটি : আচ্ছা, আমরা কেক পরলে মাস্কের কী হতো তখন?
আমি : কী আর হতো? পেস্ট্রি শপে মাস্ক বিক্রি হতো। আমরা পাউন্ড হিসাবে মাস্ক কিনতাম।
কিউটি : অথবা পিস হিসাবে। পিস কেককে বলতাম সার্জিক্যাল মাস্ক।
আমি হাসি। বলি, ‘হয়তো বলতাম। তখন তোমার বার্থডে’তে আন্টি অর্ডার করে বিরাট এক মাস্ক আনাতেন। মাস্কে লেখা থাকত-হ্যাপি বার্থডে টু কিউটি। রাত বারোটা বাজতেই মাস্ক কেটে ফেসবুকে পোস্ট দিতে। আদর করে তোমার মুখে এক টুকরো মাস্ক দিত আন্টি।’
কিউটি : ইয়াক। আমি কখনোই ওই মাস্ক মুখে দিতাম না। চলো, অন্য শব্দে যাই। এ কী! এমনভাবে তাকিয়ে আছো কেন? অসভ্য ধর্ষকের দৃষ্টিতে?
আমি : ধর্ষক না, চিন্তাশীল দর্শকের দৃষ্টিতে। চেয়ে চেয়ে ভাবছিলাম তোমার কামিজ নিয়ে।
কিউটি : উল্টা পাল্টা কিছু?
আমি : তা তো অবশ্যই।
গম্ভীর হয়ে যায় কিউটি।
কিউটি : কেমন?
আমি : যেমন, আজ যদি টি শার্টকে কামিজ আর কামিজকে টি শার্ট ডাকা হতো, তাহলে এখন তুমি টি শার্ট-সালোয়ার আর আমি কামিজ-লং শর্টস পরে বসে থাকতাম!
কিউটি : এ মা! সালোয়ারের সঙ্গে টি শার্ট? ছি ছি ছি!
আমি : আমারটা তো আরও ভয়াবহ। লং শর্টস তো লং কামিজে পুরো ঢেকে যেত।
কিউটি : হা হা হা...।
আমি : হায়েনার মতো ভ্যাটকাচ্ছো কেন? কামিজ আর টি শার্ট উল্টে যদি পাল্টে যায়, এমনই তো হবে।
বলা শেষ হয়নি, কিউটির হাসির ঝাঁকিতেই নাকি রিকশার চাকা গর্তে পড়ায় আমরা সবাই একেবারে হেট মুন্ড ঊর্ধ্ব পদ। ধপাস। ‘আআআউউউচ’ বলে কিউটির গগনবিদারী চিৎকার। আমি সামলে উঠে দাঁড়িয়ে গেছি। রিকশাওয়ালাও দাঁড়িয়ে তার পা নেড়ে চেড়ে দেখছে ঠিক আছে কিনা। রিকশাটা প্রায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে। হাত ধরে টেনে কিউটিকে উঠাই। আহ্লাদী গলায় বলে, ‘আমার চুল ঠিক আছে?’ বলি, ‘হ্যাঁ, ক্যান্ডিফ্লস ঠিক আছে।’
কিউটি : ক্যান্ডিফ্লস?
আমি : ওই তো। চুলকে ক্যান্ডিফ্লসই ডাকলাম। তাতে তো আর তোমার কালো চুল গোলাপি হয়ে যাচ্ছে না, ক্যান্ডিফ্লসও চুপসে হাওয়াই মিঠাই হচ্ছে না। মনে হলো খুশি হয়েছে কিউটি। রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার মার্সিডিজ বেঞ্জের খবর কী?’ বলল, ‘সামনের চাক্কা পুরা ভচকায় গ্যাছে স্যার। সব স্পোক পাল্টানো লাগব।’ আসলেই চাকাটা পুরো আঁকা-বাঁকা হয়ে গেছে। বললাম, ‘কিছু না। রিকশা উল্টে মার্সিডিজ হয়ে চাকা পাল্টে গেছে। স্পোক পাল্টালেই ঠিক হয়ে যাবে।’ ২০০ টাকা দিয়ে বিদায় দিলাম। কিউটিকে বললাম, ‘তোমার সোনার চামচ ফেলে যাবে আবার। রানওয়ের পাশ থেকে তুলে নাও।’
কিউটি : সোনার চামচ? রানওয়ে?
আমি : ওই তো, তোমার পার্সটাকে না হয় সোনার চামচই বললাম আর রাস্তাকে বললাম রানওয়ে। তাতে কী বা এসে গেলো? পার্স দিয়ে এক চামচ মধুও খাওয়া যাবে না আর রাস্তা দিয়ে প্লেনও দৌড়াবে না। আজ সবই যখন পাল্টেছে, এরাও না হয় উল্টে একটু পাল্টে যাক।’
একটু খোঁড়াতে খোঁড়াতে কিউটি পার্সটা তুলে নিয়ে এগিয়ে আসছে। মনে হলো কোনো র্যাম্প মডেল হেঁটে আসছে। হাঁটাটাও কি উল্টে ও পাল্টে দিয়েছে?
