|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছোটবেলাতেই একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে পড়ানো হয় ফেইলর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস। এ দেশের বেকার ছেলেদের ফেইলরের পিলার যদি কাজে লাগান যেত, তাহলে এ দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড যেমন সেতু, উড়াল সেতুর পিলারের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো না। বিনামূল্যেই এমন অনেক ফেইলরের মজবুত পিলার পাওয়া যেত।
রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে বসে দুই কাপ চা কিনে চারজনে পান করতে করতে এমন আলাপই করছিল। পকেটে পয়সা না থাকলে পার্সোনালিটিও গায়েব হয়ে যায়, তাই এ কাটিং চায়ের বিল আসলে কে দেবে চা পান করতে করতে সে টেনশনে চায়ের মজা নিতেই ভুলে গেল বেকার ভুলু। আসলে এখানে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে আসা ওরা চারজনই বেকার।
শুধু শুধু ভুলুর নামের আগে এ বিশেষণ যুক্ত করার কোনো মানে হয় না। বেকার থাকা অবস্থায় চাকরি বা কাজ না পাওয়া গেলে এক সময় বিষণ্নতা ঘিরে ধরে। বেকার যুবক এক সময় জুয়াড়ির মতো চিন্তাভাবনা শুরু করে। দীর্ঘদিন বেকার থাকলে এক সময় সব কিছু সুদে আসলে পাওয়ার কামনা জাগে। তখন আর চাকরি বাকরি খোঁজার ইচ্ছা থাকে না। তখন শুধু জ্যাকপট খুঁজে মন। এমন কিছু করবে যাতে আর চাকরি করার দরকার হবে না, এতদিন বেকার থেকে যে ‘লস’ হয়েছে তাও পুষিয়ে যাবে!
চায়ের দোকানে কাটিং চা পানরত বেকার বন্ধুরা আসলে বিভিন্নভাবে ধরা খাওয়া ব্যক্তি। ভুলু যখন ব্যর্থ হতে হতে সাকসেসের পিলারের কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল, তখনই তার কাছে এলো ‘পিলার কাহিনি’। ব্রিটিশ আমলে পুঁতে রাখা পিলার এ আমলে খুঁজে বের করতে পারলেই এক ঝটকায় কোটিপতি!
আর কত হাজার টাকার চাকরি খোঁজা? সেই চাকরি দিয়ে কবে হবে লাখ টাকা আর আদৌ কোটিপতি হওয়া যাবে কিনা সন্দেহ? তারচেয়ে সাকসেসের জন্য যে পিলারের কথা ছোটবেলায় পড়ানো হয়েছিল হয়তো সেই পিলার হয়েই এ ব্রিটিশ পিলারের হাতছানি এসেছে। সুতরাং বাবা-মা এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার দেনা করে সেই সীমানা পিলারের নকশা কেনা হলো। খুব দ্রুত কোটিপতি হওয়ার লক্ষ্যে এবং খুব দ্রুতই চোখে মুখে ধুলা মাটি লেগে বুঝতে অসুবিধা হলো না আসলে ভুলু ঠগের পাল্লায় পড়েছিল। যারা চোখে ধুলা দিয়ে তার টাকা নিয়ে সটকে পড়েছে। এখন বেকারত্বের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ঋণের বোঝা। কোটিপতি তো পরের কথা, এখন অটোরিকশা চালিয়ে বেচারা ঋণ পরিশোধ করছে কিছু কিছু।
ভুলুর পাশেই বসেছিল বাবু। সেও দ্রুত বড়লোক হওয়ার তাগিদে এক সময় তক্ষকের পেছনে ছুটেছিল। লক্ষ-কোটি টাকায় বিক্রির আশায় বনে-বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে যাও দু’একটা তক্ষক ধরেছিল, বেরসিক পুলিশ সেগুলোকে খাঁচা থেকে ছেড়ে দিয়ে তাদেরই আটকে রাখলো জেলখানার খাঁচায়! অতঃপর মুক্তি পেয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন আবার ছোটখাটো চাকরি খোঁজার চেষ্টায় আছে বেচারা।
তবে কাটিং চায়ের আড্ডায় সবচেয়ে স্টাইলিশ ব্যক্তিটি কিন্তু একেবারেই হতাশ নন। ইনিও এদের কাতারে কিনা এক ঝলকে যদিও বোঝা যায় না। কেননা এনার পোশাক আশাক অন্যদের চেয়ে উন্নত। ইনি এদের বন্ধু হলেও এদের চেয়ে কিছুটা অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের। সম্প্রতি ইনিও ধরা খেয়েছেন। তবে অন্য বন্ধুদের মতো তক্ষকের পেছনে কিংবা পিলারের পেছনে ছুটে নয়। বরং ঘরে বসেই খেয়েছেন ধরা। ইনিও বাবা-মা, আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার-দেনা করেছেন। এক ঝটকায় কোটিপতি হওয়ার মতো বোকা উনি নন। উনি মোটামুটি চালাক গোছের মানুষ।
তাই কোটিপতি না হলেও লাখপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। অর্ধেক দামে বাইক কিংবা ফ্রিজ কিনে সেগুলো পুরো দামে বিক্রি করে অনায়াসেই কামাতে চেয়েছিলেন। তাই অনলাইনে বিশাল বিশাল ডিসকাউন্টের অফারে প্রলুব্ধ হয়ে ইনি লাখ লাখ টাকা ঢেলেছিলেন কিছু ঠগিদের শপে। পরিণাম? তক্ষক কিংবা পিলারের চেয়ে ভালো কিছু হয়নি এটা নিশ্চিত।
অর্থাৎ যে যেভাবেই ধরা খাক না কেন পরিণাম কিন্তু সবারই এক। অর্থাৎ চারদিকেই আছে এই ঠগির দল। তা অনলাইনে হোক কিংবা অফলাইন, লোভে পড়েছেন তো ফেঁসেছেন। সাকসেস পাওয়ার কোনো শর্টকার্ট রাস্তা নাই, তাই শর্টকার্ট খুঁজতে গেলেই রাস্তার পাশের দোকানে বসে চা-ও পান করতে হবে শর্ট করে অর্থাৎ হাফ করে। এক সময় রাস্তাঘাটে কিছু ঠগি তাদের লোকদের কাছে কম দামে জিনিস বিক্রি করে দেখাত তারা কমে পণ্য বিক্রি করছে। আর ক্রেতাবেশে ঠগির লোকজন বিক্রেতার বা পণ্যের প্রশংসা করত। সময় বদলেছে, তাই ঠগিও বদলেছে। কিছু ক্রেতাকে তারা বিশাল ডিসকাউন্টে পণ্য দেয় যাতে অন্যরাও আকৃষ্ট হয়। আর ফলাফল? সেই রাস্তার ধারের ঠগিদের মতোই। সুতরাং ঠগিরা আগের মতোই আছে শুধু তাদের মেধা, জ্ঞান, পোশাক এবং পেশায় এসেছে পরিবর্তন। কেননা আগে আপনি রাস্তাঘাটে বেশি থাকতেন। এখন অনলাইনে বেশি থাকেন। আর তারাও আপনাকে ফলো করে, আগে রাস্তায় করত এখন অনলাইনে!
