Logo
Logo
×

বিচ্ছু

শ্যামবর্ণ পাত্রী চাই

Icon

জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শ্যামবর্ণ পাত্রী চাই

খালাতো ভাইয়ের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখাদেখি চলছে। ছেলে এদিকে পণ করেছে শ্যামবর্ণ বা কালোবর্ণ মেয়ে ছাড়া বিয়ে করবে না। খালা বলেছে, তবে তাই হোক।

ভাইটা আমার খুব গল্প-উপন্যাসপাগল। উপন্যাসে শ্যামবর্ণ মিষ্টি চেহারার নায়িকাদের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তারাশঙ্করের মতো বলে, ‘কালো যদি মন্দ হয় চুল পাকিলে কান্দ কেন?’ কলেজে থাকাকালীন এক শ্যামবর্ণ মেয়েকে এ কবিতা নিজের বলে চালাতেই সে বলেছিল, ‘এটা তো তারাশঙ্করের লেখা! নিজের বলে চালান লজ্জা করে না? যান প্রেম করব না।’

কাজেই এখন সে মেয়ে খুঁজছে এবং কালো বা শ্যামবর্ণ মেয়ে ছাড়া বিয়ে করবে না। কালো মেয়েকে কাজল আর টিপ পরিয়ে দু’চোখ ভরে দেখবে, মাঝেমধ্যে নিজের বিয়ে উপলক্ষে লেখা কবিতাগুলো শোনাবে। তার মধ্যে একটা কবিতা এমন, কন্যার চিরল বিরল চুল, তাহার কেশে গোলাপ ফুল। হুমায়ূন আহমেদের লেখা একটা গানের সঙ্গে সাদৃশ্য উল্লেখ করায় আমাকে বলেছে, ‘তুই বেশি বুঝবি না।’

যাই হোক, মেয়ে দেখতে গিয়েছি। ভাইয়া আগেই মেয়েকে লক্ষ্য করে আমাকে কানে কানে বলল, ‘মেয়ে ফর্সা।’

‘শ্যামবর্ণ শুনেই তো দেখতে আসা! মেকআপ করেছে বোধহয়।’

‘মেকআপ কেন করবে?’

আমি কিছু একটা বলতে যাওয়ার আগেই খালা বললেন, ‘মা, পা দেখাও।’

মেয়ে পা দেখাল, পা ফর্সা। খালা আশাহত হয়ে বললেন, ‘মেয়ে শুনেছিলাম শ্যামলা!’

মেয়ের মা বললেন, ‘ছিল! বিয়ে উপলক্ষ্যে ক্রিমট্রিম ঘষাঘষি করে ফর্সা হয়ে গেছে।’

ভাইয়া ভদ্রতার ধারে-কাছে না ঘেঁষে সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে উঠে চলে এলেন। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

শ্যামলা শুনে আরেক মেয়ে দেখতে গিয়েছি। গিয়ে দেখি ফর্সা। ভাইয়া আলাদা কথা বলতে গিয়ে রাগী গলায় বললেন, ‘পা ধুয়ে আসো।’

মেয়ে অবাক হয়ে বলল, ‘এসব কী ধরনের বাজে কথা? এত পড়াশোনা শিখে সেকালের আÍীয়স্বজনের মতো কথা বলেন? ছিঃ!’

ভাইয়া সেখান থেকেও উঠে চলে গেলেন। এবার কালো মেয়ের তালাশ শুরু হলো। একদিন রাস্তায় এক মেয়েকে দেখে ছুটে গিয়ে বললেন, ‘আপনি কি ডার্ক কালার? হাত দেখে মনে হচ্ছে।’

মেয়েটা একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলল, ‘ব্লাডি রেসিস্ট! তোদের জন্য সমাজের আজ...’

কালো বা শ্যামলা মেয়ে না পেয়ে

ভাইয়া হতাশ গলায় ঘোষণা করল, ‘বিয়ে করব না।’

খালা যে মেয়ের ছবিই এনে আমাকে দেখায় ফর্সা লাগে। একটা সাদাকালো ছবি দেখে কিছুটা আশা ফিরল, পরে দেখা গেল সে তামান্না ভাটিয়ার মতো ধবধবে ফর্সা। ঘটক যদি এ ছবি ভাইয়াকে দেখাতো তাহলে সম্ভবত বেঁচে ফিরলেও জানের ভয়ে ঘটকালি ছেড়ে দিত।

খালা হতাশ গলায় ঘটককে বললেন, ‘ছেলে আমার শ্যামলা মেয়ে ছাড়া বিয়ে করবে না। আপনি কালো বা শ্যামলা মেয়ে থাকলে খোঁজেন।’

ঘটক হাতে কিল দিয়ে বললেন, ‘এটা কোনো ব্যাপার?’

শ্যামলা মেয়ে একটা পাওয়া গেল। এককালে শ্যামলা ছিল এখন বিউটি প্রোডাক্ট ইউজ করে ফর্সা হয়েছে। ডার্ক টোনের মেকাপ নিয়ে ভাইয়ার সামনে এসে ধরা পড়ে গেল। মেয়ের পরিবার আশ্বাস দিল, ‘মেয়ে আর বিউটি প্রোডাক্ট ইউজ না করে আগের রূপে ফিরে যাবে।’ ভাইয়া বলল, ‘যার ফর্সা হওয়ার শখ তাকে জোর করে শ্যামলা বানিয়ে রাখব কী জন্য? এমন মেয়ে চাই যে নিজের গায়ের রংকে ভালোবাসে।’

আমি বললাম, ‘একটা মেয়েকে ক’দিন রোদে পুড়িয়ে বিয়ে করলে কেমন হয়? মানে বিদেশে যেটা সানবাথ বলে।’ ডান কানে তারপর থেকে কিছু শুনতে পাই না।

যথারীতি ফর্সা মেকআপ করা এক মেয়ে দেখতে গিয়েছি। ভাইয়া হতাশ চোখে তাকিয়ে আছে। এমন সময় জানালা দিয়ে কালো এক মেয়ে উঁকি মেরে ছেলে দেখার চেষ্টা করতেই ভাইয়ার নজর তার ওপর পড়ল। আমার হাত খামচে ধরে বলল, ‘ওই দেখ মেয়ে!’

আমি কোনোমতে ছিলে যাওয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ডলতে ডলতে তাকিয়ে দেখি সে মেয়ে গায়েব।? কিন্তু এ মেয়ে আর তার বাবা-মা কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে।

বাবা বললেন, ‘ছেলের চরিত্রের এ অবস্থা? উঁকিঝুঁকি দিয়ে আরেক মেয়ে দেখছে?’

আমি তার কথা না শোনার ভান করে বললাম, ‘ওটা কে?’

‘মেয়ের ফুপাতো বোন।? শ্যামলা বলে বিয়ে হচ্ছে না।’

‘আমার ভাই বিয়ে করবে ওকে।’

মেয়ের মা আঁতকে উঠে বললেন, ‘এক মেয়ে দেখতে এসে আরেক মেয়ে বিয়ে! এটা কেমন কথা?’

খালা হাতজোড় করে বললেন, ‘যদি চান পায়েও পড়তে পারি। কিন্তু ওই মেয়ে আমাদের ছেলের জন্য লাগবে।’

‘মেয়ের বাবা-মা নেই। আমাদের বাসায় থাকে।’

‘না থাকুক।’

‘টাকা-পয়সা কিছুই পাবেন না কিন্তু!’

‘ওই মেয়েকে ডাকেন।’

বিয়ে হয়ে গেল। বাসর রাত। সবার মতো আমিও জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে ভাইয়ার কাণ্ডকারখানা দেখছি। মনের সুখে একের পর এক কবিতা আবৃত্তি করে নববধূকে শোনাচ্ছে। তার মধ্যে একটা, ‘বাঁধিয়া রাখিও সোহাগে আদরে আমায়...’হ

শ্যামবর্ণ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম