|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ডিজিটাল যুগে বসবাস। তাই এখন মানুষের চিন্তাধারা সব ডিজিটালকেন্দ্রিক। এখন দেশের অধিকাংশ মানুষই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ফলে তারা এখন আপডেট বা হালনাগাদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। প্রায় প্রতি বছরই মোবাইল ফোনের সফটওয়্যার আপডেট হয়। আপডেট হচ্ছে পরিবেশও। তেমনই এখন আর গরমকে তালপাকা গরম বললে গরমের জাত যায়। কেননা এখন যে গরম পড়ে তাতে তাল নয়, পুরো গাছই পেকে যাওয়ার কথা। অর্থাৎ এক সময় গরমকে ফল পাকানোর একটা মাধ্যম ধরে নেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানের হালনাগাদ গরম বা আপডেট গরম চারদিকের সব কিছুই পাকিয়ে দিচ্ছে।
গরমে বাজারের ভেতর আরও বেশি গরম লাগে। কেননা বাজারে কম জায়গায় বেশি মানুষ থাকে। ফলে গরম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গরমের প্রভাবে বাজারের পণ্যের দাম যে হারে বাড়তে থাকে তাতে বাজারে মানুষ কম থাকলেও মাথা গরম হতে সময় লাগে না। তবে এ গরমে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল জায়গাটা মানুষের খুব কাছেই থাকে। আর সেটি হচ্ছে মানুষের পকেট কিংবা ওয়ালেট! গরমের প্রভাব আশ্চর্যজনকভাবে পকেটে পড়ে না। পকেট সব সময়ের মতো একই মাত্রায় ঠান্ডা থাকে। আয় বাড়ার কোনো নাম না থাকলেও নিত্যপণ্যের দাম সব সময়ই গরম ভাব বজায় রাখে। সমাজের কোনো জায়গায় সমতা না থাকলেও পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কিন্তু সমতা খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু মাছ কিংবা মাংস অথবা সবজির দাম যদি বাড়ত তবে সাধারণ মানুষ যে কোনো একটা না খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করত। কিন্তু ভোগ্য পণ্যের দাম যখন বাড়ে, তখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো অজুহাতে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। ফলে গরিব মানুষের তখন বড়লোক ‘সাজতে’ হয়, মানে ডায়েটে যেতে হয়! ওদিকে গরম তো এমনিতেই শরীর থেকে সব নিংড়ে (ঘাম) বের করে নেয়। তার ওপর ডায়েট করে আরও ফিট হতে হয় স্বল্প আয়ের মানুষদের। কেননা জীবন নামক যুদ্ধের যোদ্ধা তো তারাই। সুতরাং তারা ফিট না থাকলে কি চলে?
যে কোনো খেলায় হেরে গেলে সেই দল নানা অজুহাত দাঁড় করাতে থাকে। কেউ মাঠের দোষ খুঁজে তো কেউ রেফারির দোষ খুঁজে। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের নৃবিজ্ঞান বিভাগের একটি ৮ লাইনের বিজ্ঞপ্তিতে ২২টি বানান ভুলের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে আমরা মনে করি, অতিরিক্ত গরমই মাত্র ৮ লাইনের এই বিজ্ঞপ্তিতে ২২টি বানান ভুলে ভূমিকা রেখেছে হয়তো!
আজকাল মানুষের সহনশীলতার মাত্রাও বোধহয় এ গরমের কারণেই কমে যাচ্ছে। ফেসবুকে কিছু একটা দেখলেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি। সত্য-মিথ্যার যাচাই বাছাই না করে ফেসবুককেই সত্য মেনে প্রতিক্রিয়া দেখাই। এমনকি গরম করে ফেলি ফেসবুকও। ফেসবুকের কল্যাণে মানুষ শুধু লাইভ খেলা নয়, লাইভে ঝগড়া-বিবাদও দেখতে পায়। এর সবই কি ওই গরমের প্রভাব? শোনা যায় কোথাও কোথাও রোদের আঁচে ডিম ভেজেও খাওয়া যায়। তবে কি সেই আঁচে আমাদের বিবেকও ভাজা হয়ে যাচ্ছে?
প্রাকৃতিক গরমের সঙ্গে আমাদের রাজনীতিও গরম হতে চলেছে। অনেকদিন ধরে ঠান্ডা হাওয়া বিরাজ করা রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হচ্ছে। সব গরমেরই কোনো না কোনো সুবিধা কেউ না কেউ আদায় করে। চুলা গরম হলে গৃহিণী রান্না করার সুবিধা নেয়। মাঠে ব্যাটার গরম হয়ে গেলে বোলার উইকেট আদায়ের সুবিধা নেয়। আর রাজনীতি গরম হলে সুবিধাবাদি মহল সেখানে সাম্প্রদায়িকতার রুটি ভাজতে থাকে। কেননা পৃথিবীর সব রুটি অবিক্রিত থাকলেও এ রুটির খুব চাহিদা এখন দেশে দেশে।
সুতরাং গরম যেমন তার সংস্করণ বদলে আরও বেশি উত্তপ্ত হয়েছে, তেমনি যারা গরম থেকে ফায়দা লুটে তারাও কিন্তু আগের চেয়ে আপডেট হয়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে এসব হালনাগাদ
মানুষগুলো বরফেও গরম সৃষ্টি করতে পারে! আর সমাজ তো নস্যি! তাই মাথা গরম করে চরম কিছু করার আগে একবার ভাবা দরকার, এর জন্য না পরে আবার শরমে পড়তে হয়!
