বাফুফে, চলে যার ‘ফুঁ’তে!
jugantor
জুতার খোঁজে!
বাফুফে, চলে যার ‘ফুঁ’তে!

  মো. রায়হান কবির  

০৭ মে ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

এ দেশে তুকতাক নতুন কিছু না। কারণ আপাতদৃষ্টিতে এ দেশের মানুষকে খুব চালাক মনে হলেও, সে সংখ্যা মূলত কমই। তাই দেশের বেশিরভাগ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের প্রতারণা করে থাকেন। তার অর্থ এই নয় যে, শুধু ভণ্ড বাবা টাইপ লোকজনই মানুষের সরলতার সুযোগ নেয়। অনেক স্যুট-টাই পরা লোকও কম যান না। পার্থক্য হলো ভণ্ড বাবাদের একটা ক্লাস আছে, যা দেখে সহজেই চিনি তাদের। অন্যদিকে যারা ক্লাসিক ভণ্ড তাদের ড্রেসআপে আমরা মার খেয়ে যাই, তাদের সম্মান দিয়ে কথা বলি।

পত্রিকা খুললে দেখতে পাই, কিছু কিছু ভণ্ড লোক, ফুঁ দিয়ে টাকা দ্বিগুণ করার কথা বলে মানুষের সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে। এরা ধরা পড়লে গণধোলাই দিই। কিন্তু যারা বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বড় বড় চেয়ারে বসে তুকতাক করে, আমাদের আবেগ নিয়ে খেলে, আশা দেখিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত করে-তাদের আমরা কিছুই করতে পারি না। কারণ তারা খুব ক্ষমতাধর। এরা আপনাকে কোহিনূর হিরা এনে দেবে বলে কোহিনূর আর হিরা নামের লোক এনে দেবে! তখন আপনাকে মানতেই হবে, এনারা নিজেদের জবানে খুব পাক্কা। যা এনে দেখাবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল, তা-ই দেখিয়েছে!

বিভিন্ন তারকাদের আমরা নানা ধরনের শখ দেখে থাকি। কেউ হাতঘড়ি সংগ্রহ করে তো, কেউ আবার নামি ব্র্যান্ডের পারফিউম। আবার কারও কারও ব্র্যান্ডের জুতার প্রতি দুর্বলতা দেখা যায়। তবে কোনো সাবেক তারকার সাংবাদিকদের ‘বাপের জুতো’র প্রতি দুর্বলতা দেখতে পাওয়াটা খুবই বিরল। যেমনটা বিরল এই দেশে ব্যর্থতার পর পদত্যাগ করা। যেমনটা বিরল টেনে না নামালে পদ আঁকড়ে রাখা!

এরা আঁকড়ে থাকবেই, আপনি যত যা-ই বলেন না কেন? পেশাদার জীবনে যেভাবে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠাতেন, তেমনি বর্তমান পদে বসেও অন্যদের ফাঁকি দিয়ে ঠিকই পদ হাসিল করে ফেলেন। কিংবদন্তি বলে কথা!

ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা বীর যোদ্ধা সুলতান সালাউদ্দিনের হাতিয়ার ছিল তার তলোয়ার। শত্রু পক্ষের সেনাদের কচু কাটা করতেন তার ধারালো তলোয়ার দিয়ে। আর তার দক্ষতায় একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসতেন।

আর আমাদের ‘সুলতান’ অস্ত্র হিসাবে নিজের জিহ্বাকে ব্যবহার করেন। এবং এটা ব্যবহার করেই বিগত বহু বছর স্বপদে বহাল আছেন তেমন কোনো সাফল্য ছাড়াই। আমরা যে পড়তাম, অসির চেয়ে মসি বড়-সেটা অনেকটা ভিন্নরূপে ধরা দিয়েছে, অসির চেয়ে মুখ বড়!

অনেকেই মনে করেন, ভালো খেলোয়াড় হয়তো ভালো সংগঠক হয়ে থাকেন। কিছুদিন আগে এমন একজন সংগঠক নিজেই খেলোয়াড় হিসাবে খুব গর্ব করেছিলেন। অন্য এক অখেলোয়াড় সংগঠককে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। তিনি যেহেতু খেলোয়াড় সংগঠক তাই ওনার মর্যাদা বেশি। বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কথায় কথায় ফোন করতে পারেন না। ওদিকে নিন্দুকদের মতে, আসলে প্রধানমন্ত্রীকে কথায় কথায় ফোন দেওয়ার মতো ‘নেটওয়ার্ক’ ওনার থাকলে তো! সুতরাং ফোনে বা সিম কার্ডে নেটওয়ার্ক থাকলেই প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেওয়া যায় না।

তবে কারও কারও রুচি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। কেউ যদি সংগ্রহের তালিকায় কারও পায়ের জুতার ছবি দিয়ে নিজের সংগ্রহশালা ভরে রাখতে চান, সেটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কীইবা করার থাকে?

ফুটবলের উন্নয়ন বলতে আমরা কী বুঝি? আর আমাদের ফেডারেশন কী বুঝে? সাধারণ মানুষ হয়তো ফুটবলের উন্নয়ন বলতে বুঝে ফুটবল খেলায় সাফল্য। টুর্নামেন্টের ট্রফি জেতা, ফিফা র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা। তবে আমাদের ফুটবল কর্তারা হয়তো বোঝেন, আসল ‘ফুটবলের’ উন্নয়ন। তাই দামিদামি ফুটবল এনে টুর্নামেন্ট করার নামই হয়তো উন্নয়ন। সম্প্রতি নারী ফ্রাঞ্চাইজি ফুটবল টুর্নামেন্টে যে ফুটবল দিয়ে খেলা হবে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অস্ত্র’। অর্থাৎ ফুটবলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে সাফল্য খোঁজা হচ্ছে। অথচ এ নারীদেরই আমরা বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলতে পাঠাইনি সস্তা অজুহাতে! তাহলে কী দাঁড়াল? ফুটবলের উন্নয়নে দরকার উন্নত মানের ফুটবল, উন্নত মানের ফুটবলার না! কেননা আমাদের ফুটবলের ওস্তাদজি ‘ফুঁ’ দিলেই সাফল্যের ফোয়ারা ঝরে পড়ে, তা সেটা মাঠেই পড়ুক কিংবা কারও পকেটে!

জুতার খোঁজে!

বাফুফে, চলে যার ‘ফুঁ’তে!

 মো. রায়হান কবির 
০৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

এ দেশে তুকতাক নতুন কিছু না। কারণ আপাতদৃষ্টিতে এ দেশের মানুষকে খুব চালাক মনে হলেও, সে সংখ্যা মূলত কমই। তাই দেশের বেশিরভাগ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের প্রতারণা করে থাকেন। তার অর্থ এই নয় যে, শুধু ভণ্ড বাবা টাইপ লোকজনই মানুষের সরলতার সুযোগ নেয়। অনেক স্যুট-টাই পরা লোকও কম যান না। পার্থক্য হলো ভণ্ড বাবাদের একটা ক্লাস আছে, যা দেখে সহজেই চিনি তাদের। অন্যদিকে যারা ক্লাসিক ভণ্ড তাদের ড্রেসআপে আমরা মার খেয়ে যাই, তাদের সম্মান দিয়ে কথা বলি।

পত্রিকা খুললে দেখতে পাই, কিছু কিছু ভণ্ড লোক, ফুঁ দিয়ে টাকা দ্বিগুণ করার কথা বলে মানুষের সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে। এরা ধরা পড়লে গণধোলাই দিই। কিন্তু যারা বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বড় বড় চেয়ারে বসে তুকতাক করে, আমাদের আবেগ নিয়ে খেলে, আশা দেখিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত করে-তাদের আমরা কিছুই করতে পারি না। কারণ তারা খুব ক্ষমতাধর। এরা আপনাকে কোহিনূর হিরা এনে দেবে বলে কোহিনূর আর হিরা নামের লোক এনে দেবে! তখন আপনাকে মানতেই হবে, এনারা নিজেদের জবানে খুব পাক্কা। যা এনে দেখাবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল, তা-ই দেখিয়েছে!

বিভিন্ন তারকাদের আমরা নানা ধরনের শখ দেখে থাকি। কেউ হাতঘড়ি সংগ্রহ করে তো, কেউ আবার নামি ব্র্যান্ডের পারফিউম। আবার কারও কারও ব্র্যান্ডের জুতার প্রতি দুর্বলতা দেখা যায়। তবে কোনো সাবেক তারকার সাংবাদিকদের ‘বাপের জুতো’র প্রতি দুর্বলতা দেখতে পাওয়াটা খুবই বিরল। যেমনটা বিরল এই দেশে ব্যর্থতার পর পদত্যাগ করা। যেমনটা বিরল টেনে না নামালে পদ আঁকড়ে রাখা!

এরা আঁকড়ে থাকবেই, আপনি যত যা-ই বলেন না কেন? পেশাদার জীবনে যেভাবে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠাতেন, তেমনি বর্তমান পদে বসেও অন্যদের ফাঁকি দিয়ে ঠিকই পদ হাসিল করে ফেলেন। কিংবদন্তি বলে কথা!

ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা বীর যোদ্ধা সুলতান সালাউদ্দিনের হাতিয়ার ছিল তার তলোয়ার। শত্রু পক্ষের সেনাদের কচু কাটা করতেন তার ধারালো তলোয়ার দিয়ে। আর তার দক্ষতায় একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসতেন।

আর আমাদের ‘সুলতান’ অস্ত্র হিসাবে নিজের জিহ্বাকে ব্যবহার করেন। এবং এটা ব্যবহার করেই বিগত বহু বছর স্বপদে বহাল আছেন তেমন কোনো সাফল্য ছাড়াই। আমরা যে পড়তাম, অসির চেয়ে মসি বড়-সেটা অনেকটা ভিন্নরূপে ধরা দিয়েছে, অসির চেয়ে মুখ বড়!

অনেকেই মনে করেন, ভালো খেলোয়াড় হয়তো ভালো সংগঠক হয়ে থাকেন। কিছুদিন আগে এমন একজন সংগঠক নিজেই খেলোয়াড় হিসাবে খুব গর্ব করেছিলেন। অন্য এক অখেলোয়াড় সংগঠককে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। তিনি যেহেতু খেলোয়াড় সংগঠক তাই ওনার মর্যাদা বেশি। বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কথায় কথায় ফোন করতে পারেন না। ওদিকে নিন্দুকদের মতে, আসলে প্রধানমন্ত্রীকে কথায় কথায় ফোন দেওয়ার মতো ‘নেটওয়ার্ক’ ওনার থাকলে তো! সুতরাং ফোনে বা সিম কার্ডে নেটওয়ার্ক থাকলেই প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেওয়া যায় না।

তবে কারও কারও রুচি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। কেউ যদি সংগ্রহের তালিকায় কারও পায়ের জুতার ছবি দিয়ে নিজের সংগ্রহশালা ভরে রাখতে চান, সেটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কীইবা করার থাকে?

ফুটবলের উন্নয়ন বলতে আমরা কী বুঝি? আর আমাদের ফেডারেশন কী বুঝে? সাধারণ মানুষ হয়তো ফুটবলের উন্নয়ন বলতে বুঝে ফুটবল খেলায় সাফল্য। টুর্নামেন্টের ট্রফি জেতা, ফিফা র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা। তবে আমাদের ফুটবল কর্তারা হয়তো বোঝেন, আসল ‘ফুটবলের’ উন্নয়ন। তাই দামিদামি ফুটবল এনে টুর্নামেন্ট করার নামই হয়তো উন্নয়ন। সম্প্রতি নারী ফ্রাঞ্চাইজি ফুটবল টুর্নামেন্টে যে ফুটবল দিয়ে খেলা হবে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অস্ত্র’। অর্থাৎ ফুটবলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে সাফল্য খোঁজা হচ্ছে। অথচ এ নারীদেরই আমরা বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলতে পাঠাইনি সস্তা অজুহাতে! তাহলে কী দাঁড়াল? ফুটবলের উন্নয়নে দরকার উন্নত মানের ফুটবল, উন্নত মানের ফুটবলার না! কেননা আমাদের ফুটবলের ওস্তাদজি ‘ফুঁ’ দিলেই সাফল্যের ফোয়ারা ঝরে পড়ে, তা সেটা মাঠেই পড়ুক কিংবা কারও পকেটে!

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন