মলাট বৃত্তান্ত
ডাব, বাপরে বাপ!
ফুটবল বা ক্রিকেটে কিছু সুযোগসন্ধানী খেলোয়াড় থাকে, এদের কাজই হচ্ছে সুযোগ কাজে লাগানো। ক্রিকেট মাঠে দলের পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই ভারতের সাবেক অধিনায়ক ধোনি সময় ক্ষেপণ করে দলের পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা করতেন। ধোনি সুযোগ খুঁজতেন কখন সময় নষ্ট করা যায়, যাতে করে প্রতিপক্ষ দলের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।
আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অনেকে ধনী হতে; ভারতের সাবেক অধিনায়ক ধোনির মতো সুযোগ সন্ধানী পন্থা অবলম্বন করেন। তারা শুধু সুযোগ খোঁজেন কীভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো যায়। কী কী অজুহাত দেওয়া যেতে পারে? গত বছর দুয়েক ধরে কমন অজুহাত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যা কিছুরই দাম বাড়ুক না কেন, দোষ ওই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। এদের সঙ্গে পাল্লা দিতে আবার কিছু ফেসবুক বিশেষজ্ঞ আছেন। তাদের যুক্তি, ইলিশ মাছকে তো কোনো খাবার দিতে হয় না, লালন-পালনে খরচ নেই, তাহলে ইলিশ মাছের দাম বৃদ্ধিতেও কেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত!
কিছুদিন আগে ডিমের দাম নিয়ে তোলপাড় চলল। ডিম না হয় খরচ করে উৎপাদন করতে হয়, অযৌক্তিক হলেও কিছু কারণ সেখানে দেওয়া যায়। কিন্তু যেসব পণ্য উৎপাদনে খরচই নেই, সেটার দাম কেন বাড়বে? একটাই কারণ, যদি কোনো পণ্যের চাহিদা কোনো কারণে বাড়ছে বলে মনে হয়, তাহলেই কেল্লাফতে! সেটার দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়।
অথচ গত কয়েক বছরে যদি কোনো কিছুর দাম কমে সেটা হচ্ছে চাকরিজীবীদের। কারণ পণ্যের দাম বাড়লেও চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ে না। তাদের একই জায়গায় কয়েক বছর বসে থাকার অর্থই হচ্ছে তাদের দাম কমে যাওয়া। এখন যদি কোনো কারণে সব চাকরিজীবী একসঙ্গে গায়েব হয়ে তাদের অস্তিত্বের জানান দেন, তাহলে কি বেতন বাড়বে? হয়তো বাড়বে, কারণ এদেশে কোনো কিছুর শর্টেজ মানেই সেটায় যেন ‘কী’ আছে। তাই কোনো কোম্পানির কয়েকজন কর্মী যদি কয়েকদিন অফিস না করেন, তখন হয়তো তাদের সঙ্গে বসে বেতন বাড়ানো হবে। কারণ, তার মানে হয় চাহিদা আছে অন্য কোথাও।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই খারাপ, চারদিকে মৃত্যুর মিছিল। অথচ এ মৃত্যুর মিছিল থেকেই আমরা টাকা কামাতে চাই। ডেঙ্গু হলে ডাবের চাহিদা বেড়ে যায়। ডাব তো প্রাকৃতিক ফল। এটার উৎপাদনে বাড়তি কোনো খরচ নাই। এটা আমদানিও হয় না। তারপরও আমরা দাম বেশি নিই। কারণ এ সময় ডাব সাধারণ পিপাসার জন্য পান করা হয় না। এটা এখন ডেঙ্গু রোগীর পথ্য হিসাবে ব্যবহার হয়। সুতরাং এখনই সময় কামিয়ে নেওয়ার! সে ফুটবল বা ক্রিকেটের সুযোগ সন্ধানী খেলোয়াড়দের মতো ডাব ব্যবসায়ীরাও সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়। দ্বিগুণ দামে ডাব বিক্রি করছে আমাদের ব্যবসায়ীরা। অথচ এ সময় মানবিক দিক বিবেচনা করে স্বাভাবিকের তুলনায় দাম আরও কম নেওয়ার কথা ছিল। কারণ সব রোগীই সামর্থ্যবান নয়।
কিন্তু আমরা আমাদের মুনাফাকে সবার ওপরে চিন্তা করি। তারা একবারও চিন্তা করেন না, মশা কিন্তু মানুষ চিনে কামড়ায় না। তাকেও কামড়ে দিতে পারে। আমাদের অবস্থা আসলে জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘের মতো। যেদিকেই যাবেন, সবাই সুযোগ নিতে মরিয়া। দেশের এ অবস্থায় মানুষ যখন ডেঙ্গু নিয়ে দিশেহারা, তখন এই সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা ডাবের দাম আকাশচুম্বী করে রেখেছে। এসব ব্যবসায়ী নিয়ে যদি আমাদের ক্রিকেট কিংবা ফুটবল দল গড়া যেত, তবে ফল বোধহয় ভালোই হতো।
সে যাই হোক, কবি আল মাহমুদ থাকলে হয়তো বলতেন, চাঁদের মতো ডাব উঠেছে...। কারণ ডাব এখন গরিবের কাছে চাঁদের মতোই দামি। ভারত চাঁদে যেতে অল্প টাকাই খরচ করেছে। আমাদের দেশের নিু আয়ের মানুষদের ডাবের কাছে যেতে অনুপাতে তারচেয়ে যেন বেশি টাকাই খরচ হচ্ছে। আমরা সাধারণ জনগণ শুধু এটুকুই আশা করতে পারি, ডাব ডাবের মতোই আমাদের চারপাশে থাকুক, চাঁদের মতো আকাশে বিরাজ না করে। ডাবের কথা শুনলে কারও মুখ থেকে যেন বের না হয়-ডাব, বাপরে বাপ!
ডাব, বাপরে বাপ!
মলাট বৃত্তান্ত
মো: রায়হান কবির
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফুটবল বা ক্রিকেটে কিছু সুযোগসন্ধানী খেলোয়াড় থাকে, এদের কাজই হচ্ছে সুযোগ কাজে লাগানো। ক্রিকেট মাঠে দলের পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই ভারতের সাবেক অধিনায়ক ধোনি সময় ক্ষেপণ করে দলের পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা করতেন। ধোনি সুযোগ খুঁজতেন কখন সময় নষ্ট করা যায়, যাতে করে প্রতিপক্ষ দলের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।
আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অনেকে ধনী হতে; ভারতের সাবেক অধিনায়ক ধোনির মতো সুযোগ সন্ধানী পন্থা অবলম্বন করেন। তারা শুধু সুযোগ খোঁজেন কীভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো যায়। কী কী অজুহাত দেওয়া যেতে পারে? গত বছর দুয়েক ধরে কমন অজুহাত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যা কিছুরই দাম বাড়ুক না কেন, দোষ ওই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। এদের সঙ্গে পাল্লা দিতে আবার কিছু ফেসবুক বিশেষজ্ঞ আছেন। তাদের যুক্তি, ইলিশ মাছকে তো কোনো খাবার দিতে হয় না, লালন-পালনে খরচ নেই, তাহলে ইলিশ মাছের দাম বৃদ্ধিতেও কেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত!
কিছুদিন আগে ডিমের দাম নিয়ে তোলপাড় চলল। ডিম না হয় খরচ করে উৎপাদন করতে হয়, অযৌক্তিক হলেও কিছু কারণ সেখানে দেওয়া যায়। কিন্তু যেসব পণ্য উৎপাদনে খরচই নেই, সেটার দাম কেন বাড়বে? একটাই কারণ, যদি কোনো পণ্যের চাহিদা কোনো কারণে বাড়ছে বলে মনে হয়, তাহলেই কেল্লাফতে! সেটার দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়।
অথচ গত কয়েক বছরে যদি কোনো কিছুর দাম কমে সেটা হচ্ছে চাকরিজীবীদের। কারণ পণ্যের দাম বাড়লেও চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ে না। তাদের একই জায়গায় কয়েক বছর বসে থাকার অর্থই হচ্ছে তাদের দাম কমে যাওয়া। এখন যদি কোনো কারণে সব চাকরিজীবী একসঙ্গে গায়েব হয়ে তাদের অস্তিত্বের জানান দেন, তাহলে কি বেতন বাড়বে? হয়তো বাড়বে, কারণ এদেশে কোনো কিছুর শর্টেজ মানেই সেটায় যেন ‘কী’ আছে। তাই কোনো কোম্পানির কয়েকজন কর্মী যদি কয়েকদিন অফিস না করেন, তখন হয়তো তাদের সঙ্গে বসে বেতন বাড়ানো হবে। কারণ, তার মানে হয় চাহিদা আছে অন্য কোথাও।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই খারাপ, চারদিকে মৃত্যুর মিছিল। অথচ এ মৃত্যুর মিছিল থেকেই আমরা টাকা কামাতে চাই। ডেঙ্গু হলে ডাবের চাহিদা বেড়ে যায়। ডাব তো প্রাকৃতিক ফল। এটার উৎপাদনে বাড়তি কোনো খরচ নাই। এটা আমদানিও হয় না। তারপরও আমরা দাম বেশি নিই। কারণ এ সময় ডাব সাধারণ পিপাসার জন্য পান করা হয় না। এটা এখন ডেঙ্গু রোগীর পথ্য হিসাবে ব্যবহার হয়। সুতরাং এখনই সময় কামিয়ে নেওয়ার! সে ফুটবল বা ক্রিকেটের সুযোগ সন্ধানী খেলোয়াড়দের মতো ডাব ব্যবসায়ীরাও সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়। দ্বিগুণ দামে ডাব বিক্রি করছে আমাদের ব্যবসায়ীরা। অথচ এ সময় মানবিক দিক বিবেচনা করে স্বাভাবিকের তুলনায় দাম আরও কম নেওয়ার কথা ছিল। কারণ সব রোগীই সামর্থ্যবান নয়।
কিন্তু আমরা আমাদের মুনাফাকে সবার ওপরে চিন্তা করি। তারা একবারও চিন্তা করেন না, মশা কিন্তু মানুষ চিনে কামড়ায় না। তাকেও কামড়ে দিতে পারে। আমাদের অবস্থা আসলে জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘের মতো। যেদিকেই যাবেন, সবাই সুযোগ নিতে মরিয়া। দেশের এ অবস্থায় মানুষ যখন ডেঙ্গু নিয়ে দিশেহারা, তখন এই সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা ডাবের দাম আকাশচুম্বী করে রেখেছে। এসব ব্যবসায়ী নিয়ে যদি আমাদের ক্রিকেট কিংবা ফুটবল দল গড়া যেত, তবে ফল বোধহয় ভালোই হতো।
সে যাই হোক, কবি আল মাহমুদ থাকলে হয়তো বলতেন, চাঁদের মতো ডাব উঠেছে...। কারণ ডাব এখন গরিবের কাছে চাঁদের মতোই দামি। ভারত চাঁদে যেতে অল্প টাকাই খরচ করেছে। আমাদের দেশের নিু আয়ের মানুষদের ডাবের কাছে যেতে অনুপাতে তারচেয়ে যেন বেশি টাকাই খরচ হচ্ছে। আমরা সাধারণ জনগণ শুধু এটুকুই আশা করতে পারি, ডাব ডাবের মতোই আমাদের চারপাশে থাকুক, চাঁদের মতো আকাশে বিরাজ না করে। ডাবের কথা শুনলে কারও মুখ থেকে যেন বের না হয়-ডাব, বাপরে বাপ!
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023