বিশ্বকাপের অর্জন নেই বাঘের গর্জন
বিশ্বকাপে, বিশ্ব চাপে
এই যে তোমার গুণধর পোলা, পড়াশোনার কোনো ধারাবাহিকতা নাই। ঠিক ক্রিকেট দলের মতো!
সত্যজিৎ বিশ্বাস
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এমন পারফরমেন্সে যারা মাঠে গিয়ে খেলছেন, কিংবা মাঠের বাইরে বসে খেলছেন (কোচ, টিম সিলেকটার, টিম ম্যানেজমেন্ট) সবাই হতাশ। তাদের কখনো মনে হচ্ছে ভাগ্যের দোষে এ অবস্থা, কখনো মনে হচ্ছে সময়টা ভালো না, তাই গোটা টিমের এ অবস্থা! এমন দুঃসময়ে কী করা যায়, কেউ কিছুই বুঝতে পারছেন না। বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে মানুষ কত কিছুই না করে। চলুন না তবে বচন সমেত কয়েকটা ঈশপের গল্প শুনি। কিছু বোঝা যেতেও তো পারে।
গল্প এক : একতাই বল
এক চাষির এগারো ছেলে ছিল। ছেলেরা সব সময় নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করত। এতে চাষি খুব দুঃখ পেতেন। চাষি ছেলেদের অনেক বুঝাতেন, অনেক বকাঝকা করতেন। তাতেও কোনো পরিবর্তন হলো না। তখন অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেদের বললেন, ‘তোরা সবাই একটি করে কঞ্চি জোগাড় করে আঁটি বেঁধে আন আমার কাছে।’ বাবার কথামতো প্রত্যেক ছেলে একটি করে কঞ্চি জোগাড় করে আঁটি বেঁধে আনল। এবার চাষি বললেন, ‘এখন আঁটিটি ভাঙতে চেষ্টা কর।’ কেউ আঁটিটি ভাঙতে পারল না। চাষি বললেন, ‘এবার আঁটিটি খুলে ফেলে একটি করে কঞ্চি ভাঙ।’ সবাই কঞ্চি পটপট করে ভেঙে ফেলল। চাষি বললেন, ‘দেখলি তো, তোরা যদি এমন মিলেমিশে এক জোট হয়ে থাকিস, তাহলে কোনো শত্রুই কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি পরস্পর কেবলই ঝগড়া-বিবাদ করে আলাদা হয়ে থাকিস, একের বিপদে অপরে সাহায্য না করিস, তাহলে তো বুঝতে পারছিস, কেমন করে শত্রুপক্ষ তোদের ঘায়েল করবে!’
সুবচন : একতাই বল
গল্প ২ : ব্যাঙদের রাজা চাই
ব্যাঙদের খুব দুঃখ, তাদের কোনো রাজা নেই। তারা দেবরাজের কাছে আবেদন জানাল তাদের জন্য রাজা পাঠাতে। দেবরাজ দেখলেন, এ ব্যাঙেরা নিতান্তই সহজ সরল। তিনি একটা বিরাট কাঠের গুঁড়ি তাদের মাঝখানে ফেলে দিলেন। কাঠের গুঁড়ি ঝপাং করে জলে পড়ল। এতে ভীষণ ভয় পেয়ে ব্যাঙরা গভীর জলে লুকিয়ে পড়ল। কিন্তু যেই তারা দেখল গুঁড়িটার কোনো নড়ন চড়ন নেই, অমনি দলবেঁধে জলের ওপর ভেসে উঠল সবাই। গুঁড়িটার প্রতি তাদের আর বিন্দুমাত্র ভয় নেই। এমন অবস্থা হলো, তারা গুঁড়িটার ওপর চড়ে বসে পড়ল। এক সময় তাদের মনে হলো, এমন একটা নিষ্কর্মা রাজা পাঠিয়ে দেবরাজ তাদের প্রতি বড়ই অবিচার করেছেন। তারা আবার একজন রাজা পাঠানোর জন্য আবেদন জানাল। দেবরাজ এবার একটা ঈল মাছ পাঠিয়ে দিলেন তাদের ওপর রাজত্ব করার জন্য। ঈল নড়েচড়ে, ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু বড়ই ভালো সে, খুবই শান্ত স্বভাবের। ব্যাঙদের মন ভরল না। তারা আরও একবার দেবরাজের কাছে রাজা পাঠানোর অনুরোধ করল। দেবরাজ তাদের ক্রমাগত অভিযোগে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে একটা বককে পাঠিয়ে দিলেন রাজা করে। বকটা দিনের পর দিন ব্যাঙগুলোকে খেয়ে চলল, যতদিন পর্যন্ত অভিযোগ জানানোর জন্য একটা ব্যাঙও আর অবশিষ্ট রইল না।
সুবচন : ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
গল্প ৩ : শেয়াল ও মুখোশ
এক শেয়াল একবার এক নাটুয়ার বাড়ি ঢুকে পড়ল। মাল-পত্তর ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে পেয়ে গেল একটা মুখোশ। মানুষের মুখের এক চমৎকার নকল। শেয়ালটা থাবা দিয়ে ওই মুখোশ নাড়াচাড়া করতে করতে বলে উঠল, কী সুন্দর মাথা একটা! কিন্তু কোনো দাম নেই এর, কারণ এটার ভেতরে এক ছটাকও মগজ নেই।
সুবচন : বুদ্ধি ছাড়া সুন্দর মুখের দাম সামান্যই।
গল্প ৪ : হাতুড়ে ডাক্তার ব্যাঙ
এক ব্যাঙ একদিন বনের সব জন্তু-জানোয়ারদের ডেকে জানিয়ে দিল যে, সে সবার সব রোগ সারিয়ে দিতে পারে। এক শিয়াল তখন তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘সকলের জন্য নিদান দেওয়ার ভান কর কী করে হে? নিজের খোঁড়াদের মতো লাফিয়ে চলা আর কুঁচকানো চামড়াটাই তো তুমি সারাতে পার না?’
সুবচন : অন্যের স্বভাব শোধরানোর আগে নিজেকে শোধরালে লোকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
খেলতে নেমে একটা টিমের সবাই ভালো খেলতে পারে না-এটা যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি একই সঙ্গে সবাই খারাপ খেলতে পারে না। এ অসাধ্য কাজটি আমাদের বিশ্বকাপ টিম ম্যাচ বাই ম্যাচ করে দেখাচ্ছে। কী করে? সেটা দেখতে চোখ রাখুন টিভির পর্দায়। খেলা দেখুন, দেখে শিখুন।
