Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে রবের রহমত হয়ে

Icon

এজে ইকবাল আহমদ

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আজকাল বর্ষাকাল বলে কোনো সময় নেই। একুশে বইমেলায় ভোরে হঠাৎ বৃষ্টি ও হালকা ঝড় শুরু হয়। সেদিন রাতেও আবার বৃষ্টি নেমেছিল। বহু প্রকাশক বই ভিজে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে অনেক সেমিনার, আলোচনা, তহবিল গঠন ইত্যাদি চলছে। বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রে এখন অসময়ে বৃষ্টি নামে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। নভেম্বর বা মার্চ বলে আলাদা কিছু নেই, এ সময় বৃষ্টি হবে না। হঠাৎ বৃষ্টি নামলে অনেকেই বিরক্ত হন। ‘এখন তো বর্ষাকাল নয়, তাই সঙ্গে ছাতা নেই’, ইত্যাদি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অফিসে, বাচ্চাকে নিয়ে মায়েদের স্কুলে যাওয়ার পথে অথবা অফিস শেষে বাসায় ফেরার সময় বৃষ্টি নামলে কারও কারও মেজাজ বিগড়ে যায়। কিন্তু কোনো মুমিন বান্দার তা করা ঠিক নয়, ধৈর্য ধরতে হবে।

কালামে পাকেও এরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা ধৈর্য ও প্রার্থনার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা বাকারা-১৫৩)

বৃষ্টির ফোঁটা আল্লাহ্র রহমত। সেজন্য বৃষ্টি নামলে তার ছোঁয়া পেতে হয়। এটি সুন্নত। কাপড় মেলে ধরা উচিত। হজরত আনাস (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসূল (সা.) এর সঙ্গে ছিলাম, বৃষ্টি নামল। তখন (সা.) তাঁর পরনের কাপড় প্রসারিত করলেন যাতে পানি স্পর্শ করা যায়। আমরা বললাম, ‘আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, তা তাঁর রবের কাছ থেকে এসেছে।’ ( মুসলিম-৮৯৮)

রহমতের বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়তে হবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, (সা.) বৃষ্টি পড়তে দেখলে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সইয়িবান নাফিয়া’। অর্থ : হে আল্লাহ্, আমাদের ওপর এমন বৃষ্টি বর্ষণ করুন যাতে ঢল, ধস বা আজাবের মতো কোনো অমঙ্গল নেই। (বুখারি-১০৩২)

বৃষ্টি অবস্থায় দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময় দোয়া করা সুন্নত। সাহল বিন সাদ (রা.) বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না কিংবা খুব কমই ফেরত দেয়া হয়। আজানের সময় দোয়া এবং বৃষ্টির সময়ের দোয়া।

(আবু দাউদ-২৫৪০)

কিন্তু বৃষ্টি যদি অনেক বেশি হয়। বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলে কী হবে? আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সে ব্যবস্থাও রেখেছেন। ঈমানদার বান্দার ভোগান্তি রবের কাম্য নয়। আনাস (রা.) বলেন, একবার বৃষ্টি অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকল। তখন উপস্থিত সাহাবিরা (সা.) এর কাছে গেলেন। আরজ পেশ করলেন, আমাদের ধনসম্পদ সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পানিতে পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। আপনি আল্লাহ্র কাছে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার প্রার্থনা করুন। আনাস (রা.) বলেন, (সা.) তখন দু’হাত উঁচিয়ে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ্! আমাদের ওপর থেকে বৃষ্টি আশপাশের অঞ্চলে সরিয়ে দিন, খাল, বিল ও বনাঞ্চলের দিকে সরিয়ে নিন।’ তখনই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমরা নামাজ পড়তে রোদের মধ্যে বের হই।’ (বুখারি-১০১৩, মুসলিম-৮৯৭)

বৃষ্টি নামলে বা প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয়ে আমাদের চিত্ত সাময়িক দুর্বল হলেও ধৈর্য ধারণ জরুরি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘এবং তোমাদের চিত্তের দৃঢ়তা আসতে। তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সূরা আনফাল-৪৬)

সে জন্য হঠাৎ বৃষ্টি বা ঝড়তুফান এলে আমরা যেন ধৈর্য ধারণ করতে পারি।

লেখক : প্রাবন্ধিক

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম