Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

যুগের তালিম দিয়েছে যুগান্তর

Icon

তোফায়েল গাজালি

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যুগের তালিম দিয়েছে যুগান্তর

কলমের মর্যাদা রাব্বুল আলামিন নিজেই দিয়েছেন। কলমের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে নিজেই কলমের নামে শপথ করেছেন। ‘আমার জীবনে সব প্রাপ্তির মূল কেন্দ্রবিন্দু হল কলম’। সেই কলম আমার হাতে তুলে দিয়েছে যুগান্তর।

যুগান্তর আমাকে শুধু লিখতে শিখায়নি- পড়তেও শিখিয়েছে। কী পড়ব? কেন পড়ব? কীভাবে পড়ব? সেই সবক আমাকে পড়িয়েছে যুগান্তর। যুগান্তরের সংস্পর্শে না এলে হয়তো এ কথা আমার অজানাই থেকে যেত, আধুনিক যুগে কলমই হচ্ছে দাওয়াতের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

একজন কলমের মানুষই পারেন একটি সমাজ ও দেশকে বদলাতে। একটি কলমই পারে পতনোন্মুখ একটি জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে এনে মুক্তির রাজপথে দাঁড় করাতে।

যুগান্তর আমার মতো হাজার হাজার কওমিপড়ুয়ার চোখ খুলে দিয়েছে। যে চোখ দিয়ে আমরা এক সময় শুধু মসজিদের ইমামতির স্বপ্ন দেখতাম, আজ সেই চোখ দিয়ে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন বুনি। একদিন আমরা একান্তই মসজিদ-মাদ্রাসাকেন্দ্রিক নিজস্ব পরিমণ্ডলেই নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। আজ আমরাও বিশ্বায়নের এ দুনিয়ায় উন্নতি ও অগ্রগতির অংশীদার।

একদিন কওমিপড়ুয়া যে ছেলেটি তিন লাইনের একটি লেখায় ৬টি ভুল করে বসত, আজকের বইমেলায় সে তরুণ অটোগ্রাফ দিচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিকে এক সময় যে কওমি শিক্ষার্থী অচ্ছুত বা বিজ্ঞানের অভিশাপ মনে করত- আজ সে-ই ওয়েব ডেভেলপমেন্টে কাজ করে, ব্লগে ইসলাম ও মানবতার কথা লেখে, সফটওয়্যার নির্মাণ করে।

একদিন আলখাল্লাধারী যে ছেলেটি শুধুই দোয়াত কলমের কালি দিয়ে আলিফ-বা-তা-সা’র রূপসৌন্দর্য বৃদ্ধির কসরত করত, আজ সে বিশ্ববরেণ্য ক্যালিওগ্রাফার। মাদ্রাসায় দেয়ালিকায় পেইন্টিংয়ের কাজ করত যে শিক্ষার্থী- সে এখন ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিকস ডিজাইনের ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে।

কওমি আলেম ও শিক্ষার্থীদের আজকের এ জায়গায় পৌঁছানোর জন্য বিগত ২১টি বছর ধরে যুগান্তর নিরবচ্ছিন্ন সাধনা করে গেছে। যুগান্তরের মূল্যায়নের জন্য আমার আজকের এ লেখা নয়।

আমি বলতে চাই, যুগান্তর আমাদের কী দিয়েছে? যুগান্তর আমাদের একটি দূরদৃষ্টি দিয়েছে। একটি দূরদর্শী চিন্তা দিয়েছে। একটি চেতনা দিয়েছে। দিয়েছে ভয়কে জয় করার অদম্য মনোবল। যুগান্তর আমাদের শিখিয়েছে শিকল ভাঙার মন্ত্র। যেই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে একদিন সবশ্রেণির আলেম-ওলামা কওমি সনদের স্বীকৃতির জন্য রাজপথে নেমে এসেছিলেন। সময়ের সঙ্গ পেয়ে আজকের কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স পাসের রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

বাংলাভাষা একদিন যে মাদ্রাসার চার দেয়ালে হিন্দুয়ানি ভাষার অভিযোগে পরিত্যাজ্য ছিল, আজ পরম যত্নে সেই মাদ্রাসায় বাংলাভাষায় কোরআন-কিতাবের শিক্ষা চলছে। এ বৈপ্লবিক পরিবর্তনে অনেকেরই অবদান আছে তবে যুগান্তরের মতো দুঃসাহসী ভূমিকায় ক’জন যেতে পেরেছে!

আমার জানামতে, যুগান্তরের ইসলাম পাতায় সমাজ ও জীবনের নানা অসঙ্গতি নিয়ে যারা লেখেন তারা মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকেন। ইসলাম পাতার প্রতিটি লেখা বাস্তবধর্মী, চেতনাদীপ্ত, সংস্কারমূলক- সর্বোপরি প্রেমময় হওয়ার কারণে এর পাঠকসমাজ তা সহজে গ্রহণ করলেও এর লেখকরা নিয়মিতই বিরুদ্ধবাদীদের রোষানলে পড়ে থাকেন।

২১ বছরে কোনো ধরনের ভয়ভীতিই যুগান্তরকে তার দুঃসাহসী নীতি থেকে এক চুলও সরাতে পারেনি। যুগান্তর প্রতিনিয়ত বিলিয়ে যাচ্ছে যুগের তালিম।

যুগান্তরের ইসলাম ও জীবন পাতায় প্রকাশিত লেখাগুলো একেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হয়ে আঘাত এনেছে ইসলামের নামে অনৈসলাম, প্রচলিত কুসংস্কার, গোঁড়াবাদ, তথাকথিত জঙ্গিবাদের দুর্গে।

মুসলিম উম্মাহর অধঃপতনের কারণ, মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ বিশেষত আলেম-ওলামাদের সজাগ, সোচ্চার, আত্মপ্রত্যয়ী ও স্বাবলম্বী করে তুলতে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দীর্ঘদিন থেকে এ পাতাটি অনন্য অবদান রেখে চলেছে।

এ জন্য সাধুবাদ জানাই যুগান্তর কর্তৃপক্ষকে। যাদের লেখায়-রেখায় এবং পরিচর্যায় এ পাতাটি সমৃদ্ধির আকাশ ছুঁয়েছে, পরম করুণাময় তাদের মঙ্গল করুন। আমিন!

লেখক : পরিচালক, ফিদায়ে মিল্লাত ইন্সটিটিউট

যুগান্তর যুগের চাহিদা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম