Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখায় যে মাদ্রাসা

Icon

আল ফাতাহ মামুন

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সদ্য হাফেজ হয়েছে এমন পাঁচ শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলাম, বড় হয়ে কী হতে চাও? উত্তর দিয়েছে এ রকম- একজন ডাক্তার হতে চায়। অন্যজন ইঞ্জিনিয়ার। আরেকজন সাহসী ও সৎ সাংবাদিক। শেষের জন বলল, সে দেশদরদি নেতা হতে চায়। একটি অজপাড়াগাঁয়ের হেফজ শেষ করা কিশোরদের মনের গহিনে এমন টকটকে স্বপ্ন কে জাগাল? কে মাদ্রাসাপড়ুয়া কিশোরদের মনজমিনে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বীজ বুনে দিলেন? খালেদ সাইফুল্লাহ নামে তেরো বছরের শিক্ষার্থী বলল, আমাদের মাদ্রাসার সভাপতি আলহাজ মো. সালাউদ্দিন।

নবাবগঞ্জের আওনা গ্রামের আবিদুন্নেছা শরীফ মাদ্রাসার সভাপতি যে শিশু মনে এমন সাহসী স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে পারেন- তা বিশ্বাস হয়েছে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং উদ্দেশ্য শোনার পর। সভাপতি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, যারা কোরআন পড়ে এবং পড়ায় তারা হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে আমি খেয়াল করেছি, যুগ যুগ ধরে এ দেশের মাদ্রাসাগুলো ছাত্রদের খয়রাতি পয়সায় চলে আসছে। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এমন একটি মাদ্রাসা করব যেখানের ছাত্র-শিক্ষক কেউই মানুষের বাড়ি গিয়ে কালেকশন করবে না বা দাওয়াতও খাবে না। কারও ইচ্ছা হলে মাদ্রাসায় আসবে, মাদ্রাসা কারও কাছে যাবে না। একটি অজপাড়াগাঁয়ে এমন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা আমার দৃষ্টিতে বিপ্লব ছাড়া কিছুই নয়। শুরুর দিকে পুরো গ্রামবাসী আমার বিরোধী ছিল। এক সময় মাদ্রাসার শিক্ষকরাও ভেঙে পড়েন। হতাশামাখা কণ্ঠে আমাকে বলেন, গ্রামবাসী তালেবুল এলেমদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে আদর-আপ্যায়ন করে খাওয়াতে চায়। আপনি অনুমতি দিন। আমি তাদের বোঝাই- এমন অনুমতি দিলে আমার মাদ্রাসা করার উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে। আজ এত বছর পর গ্রামবাসী বুঝতে পেরেছে, সোনালি যুগের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা কারও বাড়ি যেত না বরং খোদ রাষ্ট্রপ্রধানও মাদ্রাসায় এসে দোয়া নিত ও হাদিয়া দিত।

গত ১৩ মার্চ ছিল মাদ্রাসার হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ি পরানোর অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল। জুমার পর বন্ধু রবিউলকে সঙ্গে করে মাদ্রাসায় হাজির হই। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় এশার নামাজের পর। মাওলানা আহমদ শফির খলিফা মাওলানা আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ি পরিয়ে আখেরি মোনাজাত করেন। বিকাল থেকে রাত অবধি মাদ্রাসা ও এলাকা ঘুরে-ফিরে দেখি। এক ফাঁকে কথা বলি এবার হাফেজ হওয়া পাঁচ ছাত্রের সঙ্গে। তারা হলেন খালেদ সাইফুল্লাহ, সোলায়মান, ফাহাদ খান, ওয়ালিদ ও সাখাওয়াত। গত বছরও এ মাদ্রাসা থেকে বারোজন হাফেজ হয়ে বেরিয়েছে। রাজধানীর বহু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মাদ্রাসা (!) থেকেও বছরে বছরে এত হাফেজ বের হয় না। এদিক থেকে অজপাড়াগাঁয়ের এ মাদ্রাসাটি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সালাউদ্দিন ভাই এ এলাকারই সন্তান। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক। মানুষ বড় হলে শেকড় ভুলে যায়। কিন্তু বড় হৃদয়ের মানুষ শেকড়কে আঁকড়ে ধরে। আমাদের সালাউদ্দিন ভাই যে মনেপ্রাণে একজন মহৎ মানুষ হয়ে উঠেছেন- এ মাদ্রাসাই তার উজ্জ্বল প্রমাণ।

গ্রামবাসী আরও বলেন, শুরুতে আমরা হাসাহাসি করেছি। কটুকথা বলেছি। এমনকি চ্যালেঞ্জও করেছি, কালেকশন ছাড়া মাদ্রাসা চলে কীভাবে- দেখা যাবে। আবিদুন্নেছা শরীফ মাদ্রাসা জিতে গেছে, আমাদের কটুকথা হেরে গেছে। সভাপতির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কোমলমতি শিশুদের মনে কীভাবে স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছেন? মিষ্টি হেসে তিনি বললেন, ‘শত ব্যস্ততার মাঝেও আমি ক’দিন পরপরই সশরীরে মাদ্রাসায় এসে খোঁজখবর নিই। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলি।

মনজমিনে বড় হওয়ার স্বপ্ন বুনে দিই। তাদের বলি আকাশের মতো বড় হতে হবে।’ সভাপতি আরও বলেন, ‘খুব শিগগিরই মাদ্রাসায় কম্পিউটার কোর্স এবং কারিগরি শিক্ষা কোর্স চালু হবে। যেন মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে বেকারত্বের বোঝা বইতে না হয়।’

লেখক : সাংবাদিক

alfatahmamun@gmail.com

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম