বেদনার মাস মহররম
নবী পরিবারের তাঁবুগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল
সৈয়দা উসতুআনা হান্নানা
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইমাম হোসেইনের (রা.) শহীদানের পর তিনিই কারবালার ময়দান থেকে পিতার বুকের ওপর ক্রন্দনরত ছোট্ট হজরত সকিনাকে (রা.) নিয়ে এসেছিলেন।
এজিদের নিষ্ঠুর বাহিনীর মোকাবেলায় বেঁচে যাওয়া ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত নারী-শিশুদের একত্রিত করে রেখেছেন। নবী পরিবারের তাঁবুগুলো পুড়িয়ে, জিনবিহীন উটে চড়িয়ে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাদের ৪৪ জনকে বন্দি করে কুফায় নিয়ে যাওয়া হল। তখন যুদ্ধ জয়ের আনন্দোৎসব চলছিল।
যে কুফায় মা জয়নব (রা.) এবং মা কুলসুম (রা.) বাস করে গেছেন খলিফার কন্যার মর্যাদা পেয়ে সেখানে আজ তারা বন্দিনী ও মজলুম। এ সময় মা জয়নব (রা.) ভীত হয়ে চুপ থাকেননি। কুফাবাসীদের প্রতি তিনি তার ক্ষোভ জানিয়েছিলেন কুফার পথ চলতে চলতে। যখন শহরবাসী তাদের ঘিরে ধরছিল সে সময়ে বলে গেছেন কারবালার ঘটনা। তিনি বলেছিলেন- ‘হে কুফাবাসী! লানত তোমাদের ওপর।
তোমরা কি বুঝতে পারছ মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্তরের কোনো অংশ তোমরা ছিন্ন করেছ? কোন্ প্রতিশ্রুতি তোমরা ভঙ্গ করেছ? কার রক্ত ঝরিয়েছ? কার মর্যাদাহানি করেছ? তোমরা নিশ্চয়ই এমন অপরাধ করেছ যে কারণে আকাশ মাটিতে নেমে আসতে পারে। ভূমি ফেটে যেতে পারে, পর্বত টুকরা হয়ে যেতে পারে!’ কী ঘটে গেছে সে বিষয়ে কুফাবাসীর বোধদয়ের সূচনা তার তীক্ষ্ণ বচনেই শুরু হয়েছিল।
ইবনে জিয়াদের সভায় তিনি ব্যথিত; কিন্তু অবিনীত চিত্তে দাঁড়িয়েছিলেন। ইবনে জিয়াদ তাকে বলল, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর! আপনার ভাই এবং আত্মীয়রা মৃত এবং তাদের মিথ্যা দাবিও শূন্যে ভাসল। হজরত আলীর (রা.) সুযোগ্যা কন্যা উত্তর দিলেন, ‘এটা আল্লাহর ইচ্ছা যে তারা শহীদ হওয়ার মর্যাদা পেয়েছেন সাহসের সঙ্গেই তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। তোমার মন চাইলে তুমি আজ অবশ্যই খুশি হতে পার।
কিন্তু হজরত মুহাম্মদ (সা.) যাদের শৈশবে কোলে নিয়েছেন যাদের সঙ্গে খেলা করে আনন্দ দিতেন তুমি তাদের হত্যা করেছ। শিগগিরই আল্লাহর সামনে তুমি তাদের মুখোমুখি হবে আর তারা ন্যায়বিচার চাইবেন। হিসাব দিনের জন্য সাবধান থেক।’ ইবনে জিয়াদ যখন ইমাম আলী জয়নুল আবেদীন (রা.)কে হত্যা করতে চেয়েছিল তিনি ইমাম জয়নুল আবেদীনের (রা.) সামনে এসে দাঁড়ান এবং তাকে আড়াল করে রেখে বলেন, তাহলে একই সঙ্গে তাকেও হত্যা করতে হবে।
তার সুদৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও তেজস্বী বক্তব্যের সামনে ইবনে জিয়াদ থমকে যায়। ফলে বেঁচে যায় নবী বংশের ধারা। হত্যার আদেশ স্থগিত করে ইবনে জিয়াদ যুদ্ধের ফলাফল ও বন্দিদের কথা জানিয়ে এজিদকে চিঠি দিল। এক মাস সাত দিন কুফার একটি বাড়িতে নবী পরিবারের সদস্যরা বন্দি ছিলেন।
এরপর এজিদের নির্দেশে ১৮ সফর জিনবিহীন উটে চড়ে প্রায় ৬০০ মাইল দূরের দামেস্কের দিকে তাদের এবং শহীদদের পবিত্র শির মোবারক নিয়ে কুফার সরকারি কাফেলা যাত্রা শুরু করে। লোকালয় ও নবীপ্রেমিকদের চোখ এড়িয়ে ঘুর পথে ২৮ দিনের সফরে অসহনীয় কষ্ট দিয়ে তাদের দামেস্ক নিয়ে আসা হয় ১৬ রবিউল আউয়াল।
সেখানে বিভিন্ন সভাসদ ও অন্যান্য রাষ্ট্রদূতদের সামনে এজিদ ইমাম হোসেইন (রা.)-এর শির মোবারক দেখে বলেছিল ‘বদর যুদ্ধে আমার পূর্বপুরুষদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে। এটা পরিষ্কার যে বনী হাশেম ক্ষমতা দখলের জন্য একটা নাটক সাজিয়েছিল।
কখনই স্বর্গীয় কোনো বাণী আসেনি।’ নির্ভীক সৈয়দা জয়নব বিনতে আলী (রা.) সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চ স্বরে বলেছেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সারা জাহানের মালিক এবং সালাম আমার নানাজানের প্রতি যিনি সব নবী-রাসূলের শ্রেষ্ঠ।
এজিদ! আল্লাহ বলেছেন, তাঁর প্রতিটি শব্দ অবশ্যই সত্য ‘অতঃপর যারা মন্দ কাজ করেছিল, তাদের পরিণাম হয়েছে মন্দ; কারণ তারা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যান তরে তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে’ (৩০:১০)।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক
