Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

অভিবাদনের ইসলামি পরিভাষা

Icon

মুনীরুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাজকর্ম-কথাবার্তায় আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ইত্যাদি পরিভাষাগুলো ব্যবহার করার দ্বারা আল্লাহর জিকির বা স্মরণের সওয়াব পাওয়া যাবে। কারণ এগুলোও আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(তারাই বুদ্ধিমান) যারা উঠতে, বসতে ও শয়নে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে (আপনা-আপনি বলে ওঠে), হে আমাদের রব! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যহীন সৃষ্টি করোনি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পবিত্র ও মুক্ত। কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের মুক্ত করো’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯১)। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, দুনিয়াতে মানুষের ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় শাস্তি হচ্ছে, তার জিহ্বাকে আল্লাহর জিকির থেকে বিরত রাখা।

ইংরেজি Thank You, Good Bye, Tata, Good Morning, Congratulation ইত্যাদি ইসলামি সংস্কৃতি বা পরিভাষা নয়। জিকির তো নয়ই। এগুলো মানুষের জীবনে কোনো সুফল বয়ে আনে না। বর্তমানে কোনো কোনো মুসলমানও বিজাতীয় পরিভাষায় অভিবাদন জানিয়ে নিজেদের স্মার্ট ভাবতে চান। মূলত ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারের মধ্যেই মুসলমানদের জন্য রয়েছে প্রকৃত সফলতা। তাই আমাদের উচিত বিজাতীয় পরিভাষা পরিহার করে ইসলামি পরিভাষা গ্রহণ করা। এখানে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ইসলামি সংস্কৃতির কিছু পরিভাষা উল্লেখ করা হলো যা নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে চালু করতে পারলে জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ।

কারও সঙ্গে দেখা হলে কিংবা মেসেঞ্জারে কথা বলার সময় Hi/Hello না বলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলুন। যার অর্থ- আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। প্রতি উত্তরে বলুন ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ (মুসলিম : ২০৫৫)। কেউ ‘কেমন আছেন?’ জানতে চাইলে Fine/Nice, ভালো আছি, ভালো নেই, অসুস্থ, আছি মোটামুটি, আছি কোনোরকম- এমন অকৃতজ্ঞ ও হতাশাজনক উত্তর না দিয়ে প্রথমে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- সব প্রশংসা আল্লাহর। এরপর আপনার সমস্যার কথা বলতে পারেন। তেমনি কোনো ভালো সংবাদ বা হালাল কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে Good News না বলেও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলুন (ইবনে মাজাহ : ৩৮০৩-৩৮০৫)। ভবিষ্যতে

কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে All Right, I will try না বলে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলুন। অর্থ- যদি আল্লাহ চান (সূরা কাহাফ : ২৩-২৪)। কোনো বিপদের কথা শুনলে Very Sad না বলে ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য (মুসলিম : ২১২৬)। কারও প্রশংসা করার সময় Well

done না বলে ‘মাশাআল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ যেমন চেয়েছেন (মুসলিম : ৩৫০৮)। ব্যতিক্রম ও আশ্চর্য কোনো কিছু দেখলে বা শুনলে Oh my God না বলে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ পবিত্র ও মহান (বুখারি : ৬২১৮)।

তেমনি আল্লাহর মহত্ব বড়ত্ব অথবা কারও দুঃসাহসিক কোনো কাজ দেখলে Wow! না বলে, ‘আল্লাহু আকবার’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ মহান (বুখারি : ৬২১৮)। কারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রে Thank you না বলে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনাকে এর প্রতিদান দিন। প্রতি উত্তরে হাইয়্যাকাল্লাহ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন (বুখারি : ৩৩৬)। সম্মানিত কারও আগমনে Welcome না বলে ‘আহলান সাহলান’ বলুন। অর্থ- আপনার প্রিয়জনদের কাছে মনোরম পরিবেশে এসেছেন। কাউকে বিদায় দেওয়ার সময় Good Bye, Tata না বলে ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে Good Morning এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে Good Night না বলে ‘ফি আমানিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আপনি আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকুন। তখন সালাম বিনিময়ও করা যায়। কেউ দোয়া চাইলেও ‘ফি আমানিল্লাহ’ এবং ‘বারাকাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুক (সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি : ১০১৩৫)।

এ ছাড়া যে কোনো হালাল কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করলাম (বুখারি : ৫৩৭৬)। হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলুন (তিরমিজি : ২৭৪১)। হাঁচিদাতার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন (বুখারি : ৬২২৪)। কোনো ভুল বা গুনাহর কথা বলে ফেললে ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই (সূরা মুহাম্মদ : ১৯)। ওপরে ওঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলুন (বুখারি : ২৯৯৩)। কোনো বাজে কথা কিংবা আল্লাহর আজাব-গজবের কথা শুনলে বা মনে পড়লে ‘নাউজুবিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আমরা আল্লাহর কাছে মুক্তি চাই (বুখারি : ৬৩৬২)।

অভিবাদন প্রকাশের এমন আরও ইসলামি পরিভাষা রয়েছে। বর্ণিত আরবি পরিভাষাগুলো নিছক প্রশংসা-কৃতজ্ঞতা, সুখ-দুঃখ প্রকাশের ভাষাই নয়, এগুলোর প্রায় সবই দোয়া ও সুন্নাত-জিকির। এগুলোর মাধ্যমে একে অপরের জন্য দোয়া করা হয়। যার জন্য দোয়া করা হয় তিনি তো উপকৃত হনই, যিনি দোয়া করেন তিনিও উপকৃত হন। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা দু’পক্ষকেই নিরাপদে রাখেন। তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বরকত নাজিল হতে থাকে। জিকিরের মাধ্যমে আমলনামায় প্রচুর নেকি জমা হয়।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম