সাক্ষাৎকারে মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
আলেমদের নেতৃত্বে শুরু হোক মাদকবিরোধী আন্দোলন
মাদকাসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মাদকের মরণ ছোবলে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। পরিণামে ধ্বংস হচ্ছে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র। এ থেকে পরিত্রাণের ধর্মীয় নির্দেশনা ও পরামর্শ নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জের পাংশা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী এ আলেম বিশ্বময় ইসলামের শান্তির বারতা ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘ বছর ধরে একনিষ্ঠ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন-সুহাইল আহমদ
যুগান্তর : মাদকাসক্তি এখন মাহামারি আকার ধারণ করেছে-এর কারণ কী? এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
মাওলানা আজাদী : আমি মনে করি সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুভূতির অভাব, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, পারিবারিক কলহ-দ্বন্দ্ব, সঙ্গ দোষ এবং মাদকের সহজলভ্যতার কারণেই তরুণ প্রজন্মের বিরাট একটি অংশ মাদকের দিকে ঝুঁকছে। আজকাল শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়েও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেডিনসহ নেশাজাতীয় নানা দ্রব্য। মানুষের মাঝে ধর্মীয় বোধ যত বেশি জাগ্রত হবে এ সমস্যা থেকে তত বেশি মুক্তি পাওয়া যাবে।
যুগান্তর : মাদক নির্মূলে ইসলামের নির্দেশনা কী?
মাওলানা আজাদী : মাদক সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য বিবৃত হয়েছে সূরা মায়িদার ৯০নং আয়াতে-আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি, ভাগ্যনির্ধারক তীরগুলো নাপাক। এগুলো শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত ফতোয়া হলো মুসলমানদের জন্য মদ, হেরোইন ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য বেচাকেনা হারাম। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মদপান, তা বেচাকেনা ও এর বিনিময় হারাম করেছেন।’ (মুসনাদে আবি হানিফা, হাদিস, ৩৫)।
যুগান্তর : ইসলামে মাদক সেবনের শাস্তি সম্পর্কে জানতে চাই?
মাওলানা আজাদী : ইসলাম একটি কল্যাণকর জীবনব্যবস্থা। তাই মাদক সেবনকারীদের এ মরণফাঁদ থেকে রক্ষা করতে তাদের শোধরানোর ব্যবস্থা করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু শাস্তিরও প্রয়োজন পড়ে, নতুবা তারা আবার মাদকে ডুবে যাবে। ইসলামে মাদকাসক্তদের জন্য যে শাস্তি রাখা হয়েছে তা হলো, খেজুর, আঙুর ও কিশমিশের তৈরি মদ গ্রহণকারী ব্যক্তিকে ৮০ বার বেত্রাঘাত করা। বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে মাথা ও চেহারা এবং সংবেদনশীল জায়গা আঘাত করা যাবে না এবং শরীরের একই জায়গায় ৮০টি বেত দেবে না, বরং বিভিন্ন জায়গায় দেবে। তবে এ শাস্তি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রয়োগ করা যাবে না। স্বাভাবিক হওয়ার পর দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৪/৩৮)। ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক সেবন কত বড় অপরাধ তা বোঝার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।
যুগান্তর : মাদক নির্মূলে আলেম সমাজের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মাওলানা আজাদী : মাদকাসক্তি হলো এক ধরনের আত্মঘাতী মানসিক ব্যাধি। আসক্তরা বিভিন্ন অভাব বা দুঃখ ভুলার জন্য এ বিষ হাতে তুলে নেয়। তাই বলে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। বরং তাদের পাশে দরদি মন নিয়ে দাঁড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলেমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আলেমরা এ অন্ধ জগতের মানুষগুলোর সামনে দ্বীনের আলো তুলে না ধরলে এরা আরও অতলে ডুবে যাবে। তাই প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আলেমদের মাদক নির্মূল অভিযানে অংশগ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশের পাঁচ লাখ মসজিদের মিম্বার হলো শক্তিশালী মিডিয়া। প্রতিটি মিম্বার থেকে মাদকের ভয়াবহ পরিণাম ধ্বনিত হলে অতি সহজে মাদকসেবীরা ফিরে আসবে সত্য ও সুন্দর পথে। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহর সেই বাণী-তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১১০)।
আলেমদের নেতৃত্বে শুরু হোক মাদকবিরোধী আন্দোলন
সাক্ষাৎকারে মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
সুহাইল আহমদ
২৫ জুন ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মাদকাসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মাদকের মরণ ছোবলে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। পরিণামে ধ্বংস হচ্ছে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র। এ থেকে পরিত্রাণের ধর্মীয় নির্দেশনা ও পরামর্শ নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জের পাংশা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী এ আলেম বিশ্বময় ইসলামের শান্তির বারতা ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘ বছর ধরে একনিষ্ঠপরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন-সুহাইল আহমদ
যুগান্তর : মাদকাসক্তি এখন মাহামারি আকার ধারণ করেছে-এর কারণ কী? এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
মাওলানা আজাদী : আমি মনে করি সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুভূতির অভাব, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, পারিবারিক কলহ-দ্বন্দ্ব, সঙ্গ দোষ এবং মাদকের সহজলভ্যতার কারণেই তরুণ প্রজন্মের বিরাট একটি অংশ মাদকের দিকে ঝুঁকছে। আজকাল শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়েও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেডিনসহ নেশাজাতীয় নানা দ্রব্য। মানুষের মাঝে ধর্মীয় বোধ যত বেশি জাগ্রত হবে এ সমস্যা থেকে তত বেশি মুক্তি পাওয়া যাবে।
যুগান্তর : মাদক নির্মূলে ইসলামের নির্দেশনা কী?
মাওলানা আজাদী : মাদক সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য বিবৃত হয়েছে সূরা মায়িদার ৯০নং আয়াতে-আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি, ভাগ্যনির্ধারক তীরগুলো নাপাক। এগুলো শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত ফতোয়া হলো মুসলমানদের জন্য মদ, হেরোইন ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য বেচাকেনা হারাম। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মদপান, তা বেচাকেনা ও এর বিনিময় হারাম করেছেন।’ (মুসনাদে আবি হানিফা, হাদিস, ৩৫)।
যুগান্তর : ইসলামে মাদক সেবনের শাস্তি সম্পর্কে জানতে চাই?
মাওলানা আজাদী : ইসলাম একটি কল্যাণকর জীবনব্যবস্থা। তাই মাদক সেবনকারীদের এ মরণফাঁদ থেকে রক্ষা করতে তাদের শোধরানোর ব্যবস্থা করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু শাস্তিরও প্রয়োজন পড়ে, নতুবা তারা আবার মাদকে ডুবে যাবে। ইসলামে মাদকাসক্তদের জন্য যে শাস্তি রাখা হয়েছে তা হলো, খেজুর, আঙুর ও কিশমিশের তৈরি মদ গ্রহণকারী ব্যক্তিকে ৮০ বার বেত্রাঘাত করা। বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে মাথা ও চেহারা এবং সংবেদনশীল জায়গা আঘাত করা যাবে না এবং শরীরের একই জায়গায় ৮০টি বেত দেবে না, বরং বিভিন্ন জায়গায় দেবে। তবে এ শাস্তি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রয়োগ করা যাবে না। স্বাভাবিক হওয়ার পর দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৪/৩৮)। ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক সেবন কত বড় অপরাধ তা বোঝার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।
যুগান্তর : মাদক নির্মূলে আলেম সমাজের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মাওলানা আজাদী : মাদকাসক্তি হলো এক ধরনের আত্মঘাতী মানসিক ব্যাধি। আসক্তরা বিভিন্ন অভাব বা দুঃখ ভুলার জন্য এ বিষ হাতে তুলে নেয়। তাই বলে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। বরং তাদের পাশে দরদি মন নিয়ে দাঁড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলেমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আলেমরা এ অন্ধ জগতের মানুষগুলোর সামনে দ্বীনের আলো তুলে না ধরলে এরা আরও অতলে ডুবে যাবে। তাই প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আলেমদের মাদক নির্মূল অভিযানে অংশগ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশের পাঁচ লাখ মসজিদের মিম্বার হলো শক্তিশালী মিডিয়া। প্রতিটি মিম্বার থেকে মাদকের ভয়াবহ পরিণাম ধ্বনিত হলে অতি সহজে মাদকসেবীরা ফিরে আসবে সত্য ও সুন্দর পথে। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহর সেই বাণী-তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১১০)।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023